ইমরানের ক্রিকেটীয় নাটকীয়তা যখন পাকিস্তানের রাজনীতিতে

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কথা মনে আছে নিশ্চয়? প্রতিযোগিতা থেকে প্রায় বাদ পড়তে যাওয়া পাকিস্তান পেয়েছিল বিশ্বজয়ের খেতাব। সেদিনের অধিনায়ক ইমরান খানের হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ।
ইসলামাবাদে পাকিস্তান দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কথা মনে আছে নিশ্চয়? প্রতিযোগিতা থেকে প্রায় বাদ পড়তে যাওয়া পাকিস্তান পেয়েছিল বিশ্বজয়ের খেতাব। সেদিনের অধিনায়ক ইমরান খানের হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইমরানের নেতৃত্বে বহুবার ম্যাচ হারতে হারতে জয়ী হয়েছিল পাকিস্তান। খাদের কিনারে দাঁড়িয়েও কীভাবে ঘটনাপ্রবাহকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় সেই কারিশমা দেখিয়ে পাকিস্তান দলকে 'ঘটন-অঘটন পটীয়সী' বা 'আনপ্রেডিকটেবল' বানিয়েছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম প্রভাবশালী এই অধিনায়ক।

সেসব ঘটনার প্রতিচ্ছবি যেন দেখা গেল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে।

দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল বিরোধীদের আনা আসন্ন অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সম্ভাব্য পরাজয়ের কথা। আঙুল গুণে বলে দেওয়া হয়েছিল ইমরানের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের সংখ্যা। বাকি ছিল শুধু অধিবেশনের দিন গোনা।

কিন্তু, সেই 'মাহেন্দ্রক্ষণে'ই ঘটলো এমন ঘটনা। যা কেউই যা ভাবতে পারেননি তাই ঘটলো ইমরানের হাত ধরে। দিন শেষে 'জয়ী' হলেন তিনিই।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান বিরোধীদের ভাবনার পালে আচমকা উল্টো হাওয়া বইয়ে দিয়ে আবার আলোচনায় এলেন। তার এমন কাণ্ডকে কেউ কেউ তৎক্ষণাৎ 'ক্রিকেট ম্যাচে নাটকীয় জয়ের' সঙ্গে তুলনা করলেও সমালোচকদের কাছে তিনি এখন রাজনীতির মাঠে নতুন রূপে আসা এক নতুন 'ভিলেন'।

অনেক আলোচনা-উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে বসা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন থেকে একের পর এক নতুন ঘোষণা আসতে থাকে।

ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বসা জরুরি অধিবেশন আধঘণ্টার মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। স্পিকার আসাদ কাইসারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরির সভাপতিত্বে ঘোষণা দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব 'অসাংবিধানিক'।

শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান। তার পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে কালক্ষেপণ করেনি প্রেসিডেন্ট আলভি।

ইমরানের এমন 'খেলোয়াড়ি' ভূমিকায় তখন অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। ক্ষমতাসীন পিটিআই'র লোকজন দলনেতার এমন 'কৌশলী' আচরণে যারপর নাই খুশি হন।

সবাই এক বাক্যে মেনে নেন—আর যাই হোক, এ যাত্রায় বেঁচে গেল ইমরানের মান-সম্মান। কিন্তু, নিজের 'মুখ রক্ষা' করতে গিয়ে এক সময়ের ক্রিকেটের বিশ্বজয়ী এই দলপতি দেশের গণতন্ত্রের মুখে কালি মেখে দিলেন কিনা কিংবা সংবিধানের দোহাই দিয়ে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করলেন কিনা—এর জবাব পাওয়া যাবে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায়।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল সুপ্রিম কোর্টের নেওয়া স্বপ্রণোদিত নোটিশের শুনানি করবেন।

জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকারকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে 'অসাংবিধানিক' বলে নাকচ করে দেওয়া কতটা 'সাংবিধানিক' হয়েছে এর জবাব জানা যাবে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে।

তবে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের জবাব সুপ্রিম কোর্ট দেবে, তা হলো- প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা কতটা সাংবিধানিক?

প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও অভিমত থাকা উচিত।'

গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান ও প্রতিরক্ষা সচিবকে নোটিশ পাঠানোর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র সচিবকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের স্বপ্রণোদিত নোটিশের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) ও পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

এসসিবিএ'র পক্ষ থেকেও চলমান সাংবিধানিক সংকট নিরসনে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে দাবি করা হয়, রুলিংয়ের মাধ্যমে অনাস্থা ভোট নাকচ করা ঠিক হয়নি।

আজ পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন 'গণতন্ত্রের বিকৃতি' শিরোনামের সম্পাদকীয়তে ইমরান খানের এমন ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে। এতে বলা হয়, কেউই ভাবতে পারেননি যে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি দল গণতন্ত্রকে এভাবে দগ্ধ করবে।

পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নীরব থাকবে বলে আইএসপিআর'র বার্তায় বলা হয়েছে। যদি তা সত্য হয়, তাহলে বিষয়টি যে আইনি প্রক্রিয়ায় এগোবে তা অন্তত বলা যায়।

এখন সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার জন্য। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, পাকিস্তানের চলমান সংকট এখনই শেষ হচ্ছে না। আরও গভীর হবে কিনা, তা ভবিষ্যৎ-ই বলতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

5h ago