যেভাবে অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কা

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার জরুরি অবস্থা এবং কারফিউ জারি করেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতির কারণে রাজাপাকসের সরকার জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ফলে, দেশটিতে এখন ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশ ছোঁয়া।
কলম্বোর একটি সাধারণ দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার জরুরি অবস্থা এবং কারফিউ জারি করেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতির কারণে রাজাপাকসের সরকার জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ফলে, দেশটিতে এখন ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশ ছোঁয়া।

কিন্তু, একসময়ের দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় দেশটির কেন এই দুর্দশা? কীভাবে তারা এই গভীর সংকটে পড়ল?

সংকটের শুরু হলো যেভাবে

সমালোচকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংকটের মূলে আছে একের পর এক সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। সরকারের কিছু অবিবেচক সিদ্ধান্ত দেশটিতে দ্বৈত ঘাটতি তৈরি করেছে এবং ধীরে ধীরে তা দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে পরিণত হয়েছে। এই দ্বৈত ঘাটতে হলো- চলতি হিসাবের ঘাটতি এবং বাজেট ঘাটতি।

২০১৯ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) একটি ওয়ার্কিং পেপারে বলা হয় 'শ্রীলঙ্কা ইজ এ ক্লাসিক টুইন ডেফিসিট ইকোনমি'। টুইন ডেফিসিট সংকেত দেয়- একটি দেশের জাতীয় ব্যয় তার জাতীয় আয়ের চেয়ে বেশি এবং দেশটির বাণিজ্যিক পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদন অপর্যাপ্ত।

কিন্তু, বর্তমান সংকটের অন্যতম একটি কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজাপাকসের কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতি। কারণ, করোনা মহামারি শুরুর কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কা সরকার কর হ্রাসের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। যা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বড় একটি অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এদিকে, মহামারির কারণে দেশের লাভজনক পর্যটন শিল্প এবং বিদেশি শ্রমিকদের রেমিট্যান্স সরবরাহ কমে যায়। ফলে, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো শ্রীলঙ্কাকে ডাউনগ্রেড করতে শুরু করে। ফলে, একসময় দেশটির জন্য কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক মূলধন বাজার বন্ধ হয়ে যায়। এতে এসব বাজারের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল শ্রীলঙ্কার ঋণ ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রাম লাইনচ্যুত হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই বছরের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যায়।

২০২১ সালে রাজাপাকসে সরকারের সব ধরনের রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত শ্রীলঙ্কার জন্য হিতে বিপরীত হয় ওঠে। যা দেশের কৃষি খাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ফসল ধানের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করে।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ নিয়ে কী হবে

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির রিজার্ভ ছিল মাত্র ২.৩১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, ২০২২ সালে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের মুখোমুখি হতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। যার মধ্যে গত জুলাইয়ে পূর্ণ হওয়া ১ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড (আইএসবি) আছে। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের বৃহত্তম অংশ আইএসবি। যার পরিমাণ ১২.৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং ঋণদাতাদের মধ্যে আছে- এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান এবং চীন।

গত মাসে প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির পর্যালোচনায় আইএমএফ বলেছে, সরকারি ঋণ 'অস্থিতিশীলভাবে' বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিকট-মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য অপর্যাপ্ত।

শ্রীলঙ্কাকে কারা সাহায্য করছে

কয়েক মাস ধরে রাজাপাকসের প্রশাসন এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা (সিবিএসএল) ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ এবং বিরোধী নেতাদের আইএমএফের কাছে সাহায্য চাইতে নিষেধ করে। কিন্তু, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর তেলের দাম বেড়ে যায়। তখন সরকার আগামী এপ্রিলে আইএমএফের শরণাপন্ন হওয়ার পরিকল্পনা করে।

গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইএমএফ 'আগামীতে' সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচি নিয়ে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।

আইএমএফের কাছে যাওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। এতে মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বেড়েছে এবং একইসঙ্গে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে।

তার আগে, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজাপাকসে চীন ও ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। বিশেষ করে জ্বালানির বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইনের অধীনে একটি ডিজেল চালান শনিবারে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল। শ্রীলঙ্কা-ভারত খাদ্য ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানিতে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্রেডিট লাইন স্বাক্ষর করেছে এবং রাজাপাকসে সরকার নয়াদিল্লির কাছে আরও অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে। চীন দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সুবিধা এবং ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৃথক ঋণ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Starting from nowhere, pharma sector becomes a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

18h ago