যানজটে অজ্ঞান হয়ে ভাঙতে হলো রোজা

ঢাকার মতিঝিলে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মনির হোসেন। বিকেল ৩টায় অফিস থেকে বের হয়ে রওনা হয়েছিলেন আমিন বাজারের বাসার উদ্দেশে। গাবতলীগামী একটি বাসে উঠেছিলেন। যানজটে বাস আটকে থাকায় হেঁটেই রওনা হন। সাড়ে ৫টা নাগাদ পৌঁছান বাংলামোটর মোড়ে। সেখানে আরেকবার বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইফতারের সময় হতে তখনো প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পথচারীরা ধরাধরি করে তার নাকে-মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরান।
যানজটে আড়াই ঘণ্টা হেঁটে বাংলামোটর মোড়ের কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মনির হোসেন। ছবি: শাহীন মোল্লা

ঢাকার মতিঝিলে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মনির হোসেন। বিকেল ৩টায় অফিস থেকে বের হয়ে রওনা হয়েছিলেন আমিন বাজারের বাসার উদ্দেশে। গাবতলীগামী একটি বাসে উঠেছিলেন। যানজটে বাস আটকে থাকায় হেঁটেই রওনা হন। সাড়ে ৫টা নাগাদ পৌঁছান বাংলামোটর মোড়ে। সেখানে আরেকবার বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইফতারের সময় হতে তখনো প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পথচারীরা ধরাধরি করে তার নাকে-মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরান।

একটু ধাতস্থ হওয়ার পর কথা হয় বছর পঞ্চান্নর মনির হোসেনের সঙ্গে। জানা যায়, তিনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন। আমিন বাজারে প্রতিদিন সকালে বাসে উঠতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়। প্রথম দুই রোজায় বাসায় পৌঁছেই ইফতার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু আজ যানজটে বাস যেন নড়ছিলই না। হতাশ হয়ে নেমে গিয়ে হেঁটেই বাসার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে রোজা রেখে আর কিছুতেই হাঁটতে পারছিলেন না। এর মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে রোজা ভাঙতে হয়েছে।

আক্ষেপ করে মনির হোসেন বলেন, আজ রাস্তাতেই ইফতার করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে অজ্ঞান হয়ে পথচারীদের অনুরোধে রোজা ভাঙতে হলো।

তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা টঙ্গি ডাইভারশন রোডে যানজট। ছবি: এমরান হোসেন

ইফতারের আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ফিরবার পথে এই প্রতিবেদক বহু মানুষকে বাস থেকে নেমে ইফতারের প্রস্তুতি নিতে দেখেন। ইফতার বলতে এক বোতল পানি আর ফুটপাতের ওপর থেকে কেনা ছোলা মুড়ি। বাংলামোটর মোড়ে এসে কথা হয় কয়েকজন যাত্রী ও বাসচালকের সঙ্গে। জানা গেল, বাংলামোটরেই তারা প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। হেঁটে আরেকটু এগিয়ে যেতেই পৌনে ৬টার দিকে সার্ক ফোয়ারার আগে পান্থকুঞ্জে বহু মানুষকে বসে থাকতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেল, যানজট ঠেলে বাসায় গিয়ে আর ইফতার করা সম্ভব না। তাই এখানে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে ইফতার সারতে হবে। এর পর অন্য বাসে চড়ে রওনা হবেন বাসার উদ্দেশে।

মাঝপথে যাত্রীরা নেমে গেলেও বাসের কনডাক্টর আগেই পুরো পথের ভাড়া তুলে নিয়েছেন। বেশ কয়েকজন যাত্রী এ নিয়ে তর্কে জড়িয়েছেন। তারা অর্ধেক ভাড়া ফেরত চাইছেন। কিন্তু বাসের কনডাক্টর নাছোড়বান্দা। তার একটাই জবাব, যানজটের জন্য তো আর সে দায়ী না। আর তিনি কোনো যাত্রীকে নামতেও বলছেন না। যাত্রীরা যদি আগেই নেমে যান তাতে তিনি ভাড়া ফেরত দেবেন না।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আফসার উদ্দিনের বাসা মিরপুরের মাজার রোড এলাকায়। কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেটে আসতে তার সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে বাস থেকে নেমে ২০০ টাকায় একটি মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে চুক্তি করে চড়ে বসেন তিনি। তার আশা, যানজটে আটকে থাকা গাড়ির ফাঁক গলে হলেও মোটরসাইকেলে তিনি বাসায় পৌঁছাবেন। তবে যাদের সে উপায় নেই তারা যানজটে বাসেই বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

Comments

The Daily Star  | English

Heat stress jeopardises dairy industry

There are around 2.5 crore cows and 13 lakh to 14 lakh farmers in the country. Of the farmers, 3.5 lakh own large farms, according to the Dairy Farm Owners Association in Bangladesh.

2h ago