অচাষকৃত ৭৮ উদ্ভিদ নিয়ে পাড়ামেলা

পাড়ামেলায় অংশ নেওয়া কৃষাণীদের একাংশ। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

মানিকগঞ্জে হয়ে গেলো অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়ামেলা। আজ বুধবার সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ঢাকুলী গ্রামে এই মেলায় অংশ নেন ওই গ্রামের ৩৫ জন কৃষাণী।

বেসরকারি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)' আয়োজিত এই মেলায় কৃষাণীরা তাদের বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় বেড়ে উঠা বিভিন্ন অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শন করেন।

মেলায় বিভিন্ন জাতের ৭৮ ধরণের অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শিত হয়। সেগুলো হলো-আগুনজ্বলা, বৈথা, ওলট কম্বল, কালা কচু, কচুর লতি, কলমি, বড় কলমি, ঢেঁকিশাক, খারকুন, টেকা খারকুন, দুধ কচু, গুলাল পাতা, কল্পনাথ, বাসক, তেলাকুচ পাতা, ভাদাইল, মটমটি, বউটুনি, গোড়া হেচি, ফুল হেচি, হরহরি চুতরা, পাথরকুচি, দূর্ব্বা, জল হেচি জল পানা/কচুরি পানা, তামাকটুলী, সোনাতুলী, আগড়া, ঘাওপাতা, চিনিগুড়া, কাঁটাখুরা, খসখসা ডুমরা, আদারী কচু, কেশুরজা, হাতিশুঁড়া, পাহাড়ি জঙ্গল, বিশজারণ, ছিটকী, জোহানী পাতা, তৈল কন্টু, শোল পাতা, ভেন্না, কানাইলা/কানিলা, পিপল, বাকশা, ভাটি, বিলাই এচড়া, ডেমি/গিমা, নুনকুটে, চেরচেরী, গইচা, কৈটুরা, নাকফুল, জগডুমড়া, করচা, দণ্ডকলস, বেরাটি, মরিচ গাছ, টব বাগুন/তিত বেগুন, লাল মধু, শন, বিষকাটালী, হামা ঘাস, খেলনা কপি, সাদা ফুল, মাইক ফুল, রূপি, ইচাঝুরি শাক, খেতা শাক, ছোবা ঘাস, পাট মাদারী, গন্ধফুল, বিন্না, তেতুলা পানা, ঝাল ফুল ও নেটাপেটা শাক।

অচাষকৃত শাক, ঔষধি গাছ এবং গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন ৫৬ ধরণের উদ্ভিদ প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অর্জন করেন কৃষাণী আমেনা বেগম। মেলায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে পুরস্কৃত করা হয়।

মেলায় অংশগ্রহণকারী কৃষাণী রাবেয়া বেগম বলেন, 'এসব গাছের অনেক গুণ আছে। সেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, অনেকেই জানি না। যারা জানেন তারা বেশি বেশি এসব ব্যবহার করেন। আমরাও হাত-পা কেটে গেলে দুর্ব্বার রস লাগাই, কচুর রস দেই রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়।'

শাহানাজ বেগম বলেন, 'আমি গরিব মানুষ। চক থেকে হেচি শাক, কলমি শাক, বৈথা শাক, কচু শাক, কচুর লতি মাঝে মাঝেই তুলে নিয়ে আসি খাওয়ার জন্য। গরুর জন্য ঘাস কেটে আনি। এতদিন নিজের দরকারে এগুলো তুলতাম। আজ মেলায় এসে জানলাম এগুলোর এত গুণ। আমাদের গ্রামে এই ধরণের মেলা আগে কোনো দিন হয়নি।'

সীমা বেগম বলেন, 'এসব গাছ ওষধি গুণে ভরা। যেমন দুর্ব্বা ঘাস গরুকে খাওয়াই, হাত-পা কাটলে থেঁতলে রস লাগাই। এগুলো বুনতে হয় না, সার দিতে হয় না। আমাদের হাতের কাছেই থাকে। এই মেলা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। অকারণে এসব গাছ আর নষ্ট করব না। নিজেদের প্রয়োজনেই এগুলো সংরক্ষণ করব।'

বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, 'এই গাছগুলো বাড়ির আনাচে- কানাচে, পতিত জমিতে বেশি হয়। প্রতিটি গাছের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। এই গাছের কোনোটা আমরা শাক হিসেবে খাই, কোনোটার ওষধি গুণ রয়েছে। আবার কোনোটা গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই খাদ্যগুলো নিরাপদ ও পুষ্টি গুণে ভরা। আমাদের এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

1h ago