প্যারাডক্সিক্যাল পাকিস্তান

ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে গত রাতে ৭ রিখটার মাত্রার রাজনৈতিক ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। মধ্যরাতের অশ্বারোহীরা ইসলামাবাদের পাওয়ার করিডোর দাপিয়ে বেড়াতে থাকে। অসমর্থিত সূত্রের সবকটি খবর সত্য হওয়ার জাদুবাস্তব সব ঘটনা ঘটেছে। সংবাদ নৈতিকতার সোনালি সূত্র ভেঙে দিয়ে গুজবই সত্যি হয়েছে সারারাত।

ইমরান খান তার বিরুদ্ধের অনাস্থা ভোটকে নানা অজুহাতে ঠেকিয়ে রাখেন রাত ১১টা ৪০ পর্যন্ত। আর ২০ মিনিট গেলে আদালত অবমাননার দায়ে বিচারের মুখোমুখি হবেন ইমরান। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট অতন্দ্র জেগে থাকে ১২টা ৫ মিনিটে ইমরানের বিচারের শুনানি করার জন্য।

ইমরান সাঁঝের দিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে নতুন একজনকে নিয়োগের নির্দেশ দেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পড়ে উভয় সংকটে। একজন আইনজীবীকে দিয়ে সেনাপক্ষ আদালতে একটি আবেদনপত্র দেন ইমরানের হাত থেকে সেনাপ্রধান বরখাস্তের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অনুরোধ করে। আদালত পরিস্থিতি গুরুতর দেখে এই আবেদনের শুনানি শুরু করেন।

ইমরান দেখলেন, তার হাতে গণতান্ত্রিক চেতনার নেসেসারি কন্ডিশন আছে; কিন্তু বিচার বিভাগ ও সেনা সমর্থনের সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশন বিরোধীদের পক্ষে।

ইমরান খান যেন ম্যারডোনার মতো অসহায়। চারদিক দিয়ে তাকে ঘিরে ধরেছে মুসলিম লীগ-নওয়াজ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি, অন্যান্য সব দল, বিচার বিভাগ, সেনা ছাউনি। তখন তিনি জিদানের মতো ভেংচি কাটা মাতারাতসির বুকে কপাল দিয়ে ঢুঁশ দিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরেন গ্রিনরুমের দিকে। বিচার বিভাগের রেফারি লাল কার্ড হাতে ঋজু দাঁড়িয়ে। পিটিআইয়ের অন্য খেলোয়াড়েরা সবাই বেরিয়ে যান সংসদের খেলার মাঠ থেকে। ভোট নয়, ওয়াকওভার। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন।

বিমানবন্দরগুলোতে পিটিআই নেতাদের নামের তালিকা পৌঁছে গেছে যাতে তারা দেশ ছাড়তে না পারেন। দেশবন্দি হয়েই খেলতে হবে তাদের রাজনীতির এই খেলা। এসকেপিজমের বা আত্মকেন্দ্রিকতার সুযোগ নেই।

পিটিআইবিহীন অনাস্থা ভোটে শূন্য উইকেট বল দিয়ে ভেঙে বিরোধী গণতান্ত্রিক মোর্চা ইমরানের উইকেট শিকার করেন। কিন্তু ইমরান ক্রিজেই ছিলেন না তখন। পিটিআই ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের দায়িত্বে থাকা নেতার লাহোরের বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছে। ইমরানের সঙ্গে মাইন্ডগেম খেলতে শুরু করে স্ট্যাবলিশমেন্ট। তারা তাদের অনুগত মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন, পিটিআই নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের তালিকা হচ্ছে।

সকাল থেকে গ্যালারিতে সক্রিয় দর্শকের মাঝে নীরবতা নেমে আসে। ১০ ঘণ্টার নীরবতা যে ১০০ বছরের নীরবতার চেয়েও দীর্ঘ।

মুসলিম লীগ নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তার প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ে। পিটিআইয়ের প্রার্থী সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মুহম্মদ কোরেশী।

এই খেলায় কী তাহলে ইমরান হেরে গেলেন! জনমানুষ কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলছেন, ইমরান কী রাজনীতিতে এসেছিলেন পাকিস্তানে দুর্নীতিতে আগ্রহী রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলোর মুখোশ উন্মোচন করতে?

ইমরানের সহযোগী বিদায়ী আইনমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, সোমবার পিটিআইয়ের সব সংসদ সদস্য ইস্তফা দেবেন। তাহলে তো ১৫৫টি আসন শূন্য হবে। কবে হবে উপনির্বাচন? কবে তাহলে নতুন প্রধানমন্ত্রীর গায়ে হলুদ? বল এখন আবার ইমরানের কোটে। এখন বিজয়ী পক্ষ বুঝতে পারছে না তুর্কী আইসক্রিম সেলারের মতো নেচে নেচে দেবে বলেও ক্ষমতার আইসক্রিম হাতে দিচ্ছেন না ইমরান খান। ক্ষমতার আইসক্রিম শাহবাজের হাতে ছোঁয়াচ্ছেন, কিন্তু জাগলিং করছেন। মুখের কাছ ধরছেন, আবার সরিয়ে নিচ্ছেন। ইমরানের কোমরের সঙ্গে মিলিয়ে কোমর দোলাচ্ছেন শাহবাজ শরিফ।

বিচার বিভাগ কী পারবে ক্ষমতার আইসক্রিম দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে? স্ট্যাবলিশমেন্ট কী পারবে চামচে ক্ষমতার আইসক্রিম ইমরান বিরোধী ঐক্যজোটের মুখে তুলে দিতে? কখন সে মাহেন্দ্রক্ষণ। আর যে তর সয়না মুসলিম লীগের প্রিন্সেস মারিয়াম নওয়াজ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির রাজপুত্র বিলওয়াল জারদারি ভুট্টোর। এতো হেঁয়ালি কে কবে দেখেছে রাজনীতির মাঠে!

মাসকাওয়াথ আহসান: পাকিস্তান প্রবাসী সাংবাদিক ও শিক্ষক

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago