১৯ দিন পর স্কুলে গেল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে শ্রেষ্ঠ মণ্ডল

শ্রেষ্ঠ মণ্ডল। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শ্রেষ্ঠ মণ্ডল। তার বাবা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল এই স্কুলেরই বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক। বাবার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্কুলে কটু কথাও শুনতে হয়। ১৯ দিন পর সোমবার সে স্কুলে গিয়েছে।

বিজ্ঞান ও ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গিগত ফারাক নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেই আলোচনা রেকর্ড করে ছড়িয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করা হয়। গত ২২ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল রোববার তিনি জামিনে মুক্তি পান।

বাবার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরদিনও স্কুলে গিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির খ শাখার 'ফার্স্ট বয়' শ্রেষ্ঠ মণ্ডল। কিন্তু, স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে 'আসামির ছেলে' বলে অপমান করে। স্কুল থেকে ফিরে মাকে এই কথা জানাতেই ছেলেকে তিনি স্কুলে যেতে নিষেধ করে দেন।

শ্রেষ্ঠ মণ্ডল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলে যেতে না পেরে খারাপ লাগছিল। আমার বাবাও তখন কারাগারে ছিলেন। আজ স্কুলে যেতে অসুবিধা হয়নি। কেউ আমাকে কটু কথাও বলছে না। আমার বন্ধুরাও কোনো প্রশ্ন করেনি। স্কুলে আজ ৩টি ক্লাস করেছি। বাসা স্কুলের পাশেই হওয়ায় ফিরতেও কোনো অসুবিধা হয়নি।

এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, শ্রেষ্ঠ অত্যন্ত মেধাবী। ওই ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা ভয়ে ছিল। শ্রেষ্ঠর স্কুলে আসা বন্ধ ছিল। এখন স্কুলের একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি শ্রেষ্ঠকে বাসা থেকে নিয়ে আসা ও স্কুল শেষে পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করবেন।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। গত ২ দিন তার পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের শাশুড়ি রেনুকা হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ ভোর ৬টায় বাসার ছাদে হাঁটাহাটি করছিলাম। এ সময় একজন যুবক ইট হাতে নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন—বাসার বাইরে যেন না আসি। আমাকে গালাগাল করে। এরপর আমি ভয়ে বাসার ভেতর চলে যাই।'

হৃদয় মণ্ডলের গৃহকর্মী অনিতা সাহাও হুমকি পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, রোববার দুপুর ১টায় হৃদয় মন্ডলের বাসার কাছে ৪-৫ জন যুবক আমাকে ধমক দেয়। আমি ভয়ে বাসার ভেতর চলে যাই।'

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব ডেইলি স্টারকে বলেন, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের পরিবারের নিরাপত্তা সামান্যতম বিঘ্নিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাহীন হতে দেবে না পুলিশ। তার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার আবেদন পেলে বিবেচনা করা হবে। তিনি আবেদন না করলেও পুলিশ নিরাপত্তা দেবে।

Comments

The Daily Star  | English

A floating mosaic of guavas, baskets and people

During the monsoon, Jhalakathi transforms into a floating paradise. Bhimruli guava market comes alive with boats carrying farmers, buyers, and tourists.

11h ago