মধুপুর বনে দুষ্প্রাপ্য-মূল্যবান রক্তচন্দন

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে দুষ্প্রাপ্য রক্তচন্দন (Red Sandalwood tree) গাছের খোঁজ পাওয়া গেছে। মূল্যবান গাছটি দেখতে স্থানীয় ও দূরের দর্শনার্থীরা মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ভিড় করছেন।
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে রক্তচন্দন। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে দুষ্প্রাপ্য রক্তচন্দন (Red Sandalwood tree) গাছের খোঁজ পাওয়া গেছে। মূল্যবান গাছটি দেখতে স্থানীয় ও দূরের দর্শনার্থীরা মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ভিড় করছেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে নিয়ে মধুপুর বনের যে রেস্ট হাউসে অবস্থান করেছিলেন, সেই দোখালা বন বিশ্রামাগারের সামনেই রয়েছে রক্তচন্দন গাছটি।

গাছের কাণ্ডে শক্ত করে খোঁচা দিলে লাল রঙের কষ ঝরতে থাকে, যা দেখতে রক্তের মতো। বিষয়টি দর্শনার্থীদের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে।

রক্তচন্দন। ছবি: স্টার

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা গাছের গায়ে খুঁচিয়ে লাল কষ বের করছেন। তারা সেই কষ আঙুলে লাগিয়েছেন। কেউ আবার মোবাইলে ছবি তুলছেন বা ভিডিও করছেন।

জানতে চাইলে দোখালা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মো. ইসমাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি দেখতে প্রতিদিন মানুষজন আসছে। আমরা গাছটিকে নিরাপত্তা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি ঘেরাওয়ের ব্যবস্থা করেছি।'

'দর্শনার্থীরা যেন গাছের ক্ষতি না করতে পারে বা খোঁচা না দিতে পারে, সেজন্য বাইরে থেকে নজরদারির ব্যবস্থা করেছি,' যোগ করেন তিনি।

তবে গাছটিতে কোনো ফুল-ফল ও বীজ না হওয়ায় এর বংশবৃদ্ধি বা বিস্তার ঘটানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বন বিভাগের ওই কর্মকর্তা।

এতদিন এই গাছটি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও, সম্প্রতি আল্লু অর্জুন অভিনীত ভারতের জনপ্রিয় তেলেগু সিনেমা 'পুষ্পা: দ্য রাইজ' দেখে মানুষ গাছটির সঙ্গে পরিচিত হন।

রক্তচন্দন। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাসবেতকা এলাকা থেকে গাছটি দেখতে এসেছেন ভেষজ চিকিৎসক আব্দুল হামিদ মিয়া। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই লালচন্দন অনেক দুষ্প্রাপ্য ও মহামূল্যবান। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজাসহ নানান ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। গাছটি এখানে আছে শুনে দেখতে এলাম।'

স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাছটির বয়স প্রায় ৪০ বছর। কিন্তু, এর আগে কখনো এই গাছটির ব্যাপারে লোকজনের আগ্রহ দেখিনি। তবে 'পুষ্পা' সিনেমা দেখার পর থেকেই গাছটি এখানে আছে জেনে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন দেখতে আসছে।'

রক্তচন্দন। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে একটি মাত্র রক্তচন্দন গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাই দেশে গাছটির সঠিক বাণিজ্যিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা যায়, গাছটির প্রতি কেজি কাঠের মূল্য ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা হবে।'

'কে কখন এই গাছটি এখানে রোপণ করেছিলেন, সেই তথ্য বন বিভাগের কাছে নেই,' উল্লেখ করে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তবে গাছটি সংরক্ষণ এবং এর বংশ বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ চলছে।'

মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মহিউদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গাছটির বংশ বিস্তারে সহায়তা করতে আগ্রহী তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Are schools open? Simple issue unnecessarily complicated

Are schools open? Simple issue unnecessarily complicated

Are the secondary schools and colleges open today? It is very likely that no one can answer this seemingly simple question with certainty.

2h ago