এপ্রিল: ১০-১৭তে গোলমাল, ক্যাটাগরি বদলের প্রস্তুতি

মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে পদযাত্রায় গণভবনমুখী সোহেল তাজ ও অন্যান্যরা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

স্থানীয় বা আঞ্চলিক সরকারি ছুটির দৃষ্টান্ত তৈরি হলো বাংলাদেশে। ১৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি পালিত হলো মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা হালের মুজিবনগর উপজেলায়। ১৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এর ভাষাটি এমন, 'ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নেওয়া জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবলে এ ছুটি ঘোষণা করা হলো'।

এর মাঝেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে দিবসটিকে 'এ' ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হবে। সংসদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এত বছর পর কেন দিনটি নিয়ে এ আয়োজন? কেনই বা দিবসটিতে এমন আঞ্চলিক ছুটি? এমন সব প্রশ্নের মাঝেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি নিরঙ্কুশ অবিচল থাকার কিঞ্চিত অসাধারণ আহ্বান যোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায়, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশই কাজ করেছেন সহনেতারা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের ভূমিকার তুলনা না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  

এর আগে, এত বছর পর এবার মুজিবনগর দিবসের আগেভাগে সুনির্দিষ্ট ৩টি দাবি নিয়ে মাঠে নামেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহনেতা তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। কেবল রাস্তায়ই নামেননি, ১০ এপ্রিল তিনি স্মারকলিপি নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে পদযাত্রায় তার সঙ্গে ছিলেন বোন মাহজাবিন আহমদ মিমি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ৷ শতাধিক মানুষকে দেখা গেছে ব্যানার ও ফেস্টুনসহ তাদের সঙ্গী হতে।

অনেকে অপেক্ষায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে ভেতরে নিয়ে যান কিনা বা হাতে হাতে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন কিনা তা দেখার জন্য। গণমাধ্যমকর্মীদের অপেক্ষাও ছিল বেশ। শেষ পর্যন্ত সেই ধরনের কিছু হয়নি। সোহেল তাজকে গণভবনের অতিথি কক্ষে বসার এবং ইফতার করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া৷ কিন্তু সোহেল তাজ বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন৷

সোহেল তাজের শোডাউনের কোনো জেরেই সরকারের মুজিবনগর বিষয়ক উদ্যোগ কি না—প্রশ্নটি  ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। দল ও সরকারের ভেতর গুঞ্জন থাকলেও মুখ খুলতে সাবধান-সতর্ক সবাই। সোহেল তাজের মূল সাবজেক্ট ১০ এপ্রিল। তার প্রথম দাবিই হলো ১০ এপ্রিলকে 'প্রজাতন্ত্র দিবস' ঘোষণা করা। কারণ, বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের দিন ১০ এপ্রিল৷  মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল গঠিত সরকারটি এর কয়েকদিন পর ১৭ এপ্রিল শপথ নেয় মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায়।

তার আরেক দাবি, কেবল ১৫ আগস্ট নয়, ৩ নভেম্বরকেও জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে। তৃতীয় দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক,  পরিচালক, শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা।

বঙ্গবন্ধুর সহনেতাদের প্রতি যথাযথ সম্মান না দেখানোর অভিযোগ এর আগেও করেছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজ। বিরতি দিয়ে আবারও এ নিয়ে সামনে এলেন  তিনি। সোজাসাপ্টাই বলেছেন, ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সরকার গঠন, ১৩ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতা হত্যা—এই দিনগুলোর গুরুত্ব ভুলে গেছে সরকার। তাই সঠিকভাবে পালন করছে না দিবসগুলো। এর নেপথ্য নিয়ে প্রশ্নযুক্ত ক্ষোভ তার।

পুরনো বিষয় এভাবে ঘেঁটে সামনে আনার নেপথ্য নিয়েও দলে ও সরকারে প্রশ্ন আছে অনেকের। বিস্তর প্রশ্ন ও ক্ষোভের মাঝেই এবার দ্রুত উদ্যোগ সরকারের। বোঝাই যাচ্ছে, নতুন করে তা বেশি দূর গড়াতে দিতে চায় না সরকার। বিশেষ করে তাজউদ্দীন প্রসঙ্গ বিব্রতকর। এ নিয়ে আগে-পিছে চলে আসে নানান কথা। এ সুযোগ কাউকে না দেওয়ার ব্যাপারে অটল অবস্থান সরকারের।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

7h ago