মৌলভীবাজারে নতুন ঘরে ঈদ করবে ৪৯৫ পরিবার

সাবের মিয়াদের নতুন ঘর। ছবি: স্টার

সাবের মিয়া (৫০) এতদিন অন্যের জমিতে ছোট একটি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এখন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা এলাকায় নিজের একটি ঠিকানা পেয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘরের সামনে রান্নাঘর তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল সাবের মিয়াকে। জানালেন, তার মতো আশপাশের অন্য যারা উপহারের ঘর পেয়েছেন, তাদের রান্নাঘর তৈরির কাজ এরমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে হাতে নগদ অর্থ না থাকায় তারটা শুরু করতে খানিকটা বিলম্ব হয়েছে।

এই কথোপকথনের সময় সন্তুষ্টির আভা চোখে পড়ে দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে চলা সাবেরের চোখে-মুখে। বলেন, 'জীবনে কোনোদিন ভাবিনি পাকা বাড়ি হবে। অনেক ভালো লাগছে। নিশ্চিন্ত বোধ করছি। এবার নতুন ঘরেই ঈদ করব।'

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এবার ঈদের আগেই সাবেরের মতো জেলার ২টি উপজেলায় ৪৯৫টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমির দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আয়োজনে যোগ দেবেন।

সাবেরের ঘরের ঠিক সামনের ঘরটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন মঈন উদ্দিন (৫৫)। পাকা ঘরের বারান্দায় রাখা একটি চেয়ারে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে ছিলেন তিনি।  

মঈন উদ্দিন জানান, নিজের ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আগেই। এতদিন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতেন। পায়ে সমস্যা থাকায় মাঠে কাজ করতে পারেন না। এ অবস্থায় শেষ বয়সে নিজের একটি ঠিকানা পেয়ে উদ্বেলিত এই ব্যক্তি বলেন, 'এখন আর রাতে ঘুমাতে কষ্ট হবেনা। বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না। এবার নিজের বাড়িতেই ঈদ করব। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।'

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া আরেক সুবিধাভোগী হোসনা বেগম স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে খাস জমিতে ঘর তুলে বাস করতেন। বছর পাঁচেক আগে সুদের টাকার শোধ করতে সেই খাসের দখল বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। তারপর থেকে অন্যের বাড়িতে থাকছিলেন। নিজের নতুন ঘর পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই নারী বলেন, 'এমন ঘরে থাকার কথা কোনোদিন চিন্তাও করি নাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেটা করে দিয়েছেন। এখন ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করতে চাই।'

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, এই দফায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। তার দাবি, এবারের ঘরগুলো আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও টেকসই।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, আগামী ২৬ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে ৫০, মৌলভীবাজার সদরে ১৮২, রাজনগরে ৪৫, কমলগঞ্জে ৫০, কুলাউড়ায় ৯৭, বড়লেখায় ৩৬ ও জুড়ী উপজেলায় ৩৫ পরিবারের হাতে ঘর ও জমির দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। সবগুলো ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এই প্রতিবেদককে জানান, মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া উপজেলার আরও ১৫৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার জন্য সরকারের খাস জমির বাইরে ৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় নতুন করে জমি কেনা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

CA approves draft Anti-Terrorism Ordinance

Draft includes provision to ban an entity's activities, restrict terrorism-related content online

18m ago