ব্রিটিশ রাজপরিবারের নারীদের সাজসজ্জা

সাজতে ভালবাসেন না এমন নারী পাওয়া বেশ দুষ্কর। যিনি একেবারে সাজগোজ পছন্দ করেন না, তার ব্যাগেও কিছু না কিছু প্রসাধনী মিলবে।
তবে আজ সাধারণ মানুষ নয়, ব্রিটিশ রাজপরিবারের নারীদের সাজসজ্জা নিয়েই আলোচনা। রাজ পরিবারের রাজকীয় জগত অনেকের কাছে আকর্ষণীয় ও লোভনীয়। ছোটবেলায় রাজা-রানীর গল্প শুনতে শুনতে আমাদের মনে তাদের নিয়ে কল্পনার জগত তৈরি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিনড্রেলা, স্নো হোয়াইটের মতো রাজকুমারীরা। হীরা-জহরত, রেশমের পোশাকে যেন তারা সর্বদা মুড়িয়ে থাকে এমনটাই কল্পনা আমাদের মনে। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের নারী সদস্যদের দেখলে আপনার সেই কল্পনা ভেঙে যাবে। বরং সাবলীল, মার্জিত হালকা রঙের পোশাক, মেকআপের হালকা ছোঁয়াই তাদের অভিজাত্যের বাহক। নির্ধারিত ড্রেসকোড থেকে শুরু করে শিষ্টাচারের নিয়ম কেট মিডলটন, মেগান মের্কেল, এমনকি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকেও মেনে চলতে হয়।

মেকআপ, চুল, চোখ আর নখের ক্ষেত্রে রাজ পরিবারের সদস্যদের যে সৌন্দর্যের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হয় তা বেশ কঠোর। প্রিন্সের সঙ্গে বিয়ে হওয়াটা যেমন সুখের নিয়মগুলো মেনে চলাটাও কিন্তু বেশ কঠিন।
ছোট ও পরিষ্কার নখ
আমরা যখন সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তা করি তখন মেকআপ, চুল, ত্বক সম্পর্কে চিন্তা করি। এগুলোই মূলত ব্যক্তিত্ব প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ হলো হাত ও পায়ের নখ। অনেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের উপায় হিসেবে বিভিন্ন রঙের নেইলপলিশ ব্যবহার করে থাকেন। তবে রাজ পরিবারের নারী সদস্যরা কিন্তু এর বাইরে।

নখের ক্ষেত্রে রাজপরিবারে বেশকিছু কঠোর নিয়ম আছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে কেট মিডলটন কিংবা মেগানের হাতে কোনো বড় নখ নেই, নেই কোনো বাহারি নেইলপলিশের ছোঁয়া।
'ওকে!' ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, 'নকল কিংবা বড় নখ ও রঙ্গিন নেইলপলিশ রাজপরিবারে অশ্লীল বলে মনে করা হয়।'
তাই রাজ পরিবারের নারী সদস্যদের রঙ্গিন নেইলপলিশগুলো এড়িয়ে চলতে দেখা যায়। শুধু হালকা গোলাপি নেইলপলিশ ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এমনকি বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সারাজীবন একই হালকা গোলাপি রঙের নেইলপলিশ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

'পিপলস' ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রানীর হেয়ার ড্রেসার একবার বলেছিলেন, একটি মাত্র রঙ রানী সর্বদা বেছে নেন, এতেই তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। রাজপরিবারের সদস্য হওয়ায় কেট মিডলটন ও মেগান মের্কেলকে উজ্জ্বল নেইলপলিশের অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়েছে।
রাজপরিবারের নারীদের চুলের সাজসজ্জা
খেয়াল করে দেখুন তো, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কিংবা ব্রিটিশ পরিবারের দুই নাত বউকে কি কখনো উজ্জ্বল রং করা চুলে দেখা গেছে? মূলত প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত চুলের রং আর নিয়মিত একই হেয়ারকাটেই সবসময় তাদের দেখা যায়।

রাজ পরিবারের সদস্যদের আর একটি নিয়ম মেনে চলতে হয়, তা হলো- সর্বদা পরিপাটি চুল। রাজ পরিবারের সদস্যদের কখনো এলোমেলো চুলে চিন্তাই করা যায় না। এমনকি নিত্যনতুন হেয়ার স্টাইলেও তাদেরকে কখনো দেখা যায় না। বরং একই ধরনের হেয়ার স্টাইল দিয়ে তারা স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব তৈরি করেন। প্রিন্সেস ডায়ানা যার নাম বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ছোট করে ছাটা সোনালী চুলের একটি মুখ। রাজ জীবনের প্রথম থেকেই তাকে একই চুলের ধরন বজায় রাখতে দেখা গেছে। তাছাড়া কেট মিডলটনকে কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ পর্যন্ত খোলা চুল, মেগানকে সাধারণ খোপায় সবসময় দেখা যায়।
ইউএস উইকলি থেকে জানা যায়, কেট মিডলটন তার চুলকে নিখুঁত দেখানোর জন্য সপ্তাহে ৩ দিন হেয়ার ড্রেসারের সামনে বসেন। রাজপরিবারের কাউকেই পরচুলা ব্যবহার করতে দেখা যায় না, কারণ সেটি নিয়মসিদ্ধ নয়।
রাজপরিবারের সাধারণ চোখের সাজ
মেকআপের ক্ষেত্রেও রয়েছে রাজকীয় গৎবাঁধা নিয়ম। স্মোকি আই মেকআপ, রঙ্গিন আইশ্যাডো প্যালেটের মতো চলতি ফ্যাশনগুলো রাজপরিবারের নারীরা এড়িয়ে চলেন। বরং চোখে মেকআপের ক্ষেত্রে নুড কালারকেই বেছে নেন তারা।
মেরি ক্লেয়ারের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কেট মিডলটন তার নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানের সাজ নিজেই সেজেছেন। চোখে ছিল না কোনো ভারী মেকআপ। বরং হালকা অনুজ্জ্বল আইশ্যাডো, আইলাইনার আর মাসকারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। তার এই সাধারণ সাজই বিশ্বের সকলের নজর কেড়েছিল।

লিপস্টিকের রঙ নির্বাচন
প্রসাধন সামগ্রীর জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং পরিচিত সামগ্রী লিপস্টিক। লিপস্টিক পছন্দ করেন না এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর বাইরে নন। তবে রাজপরিবার বলে কথা। সেখানেও রয়েছে কতগুলো নিয়ম।

অস্ট্রেলিয়ার মেরি ক্লিয়ার ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঠোঁটের রঙ গোলাপি। তিনি সর্বদা হালকা রং বা কাছাকাছি রংগুলো বেছে নেন। তবে রাজকীয় অনুষ্ঠানে তিনি লাল রংকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা রংয়ের লিপস্টিকে দেখা যায় ব্রিটিশ রাজপরিবারে নারী সদস্যদের।
গার্ডিয়ানের তথ্য অনুসারে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিক নির্বাচন করেছিলেন। সেটি জনসাধারণের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর সেই রংয়ের লিপস্টিকের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী।
কেট মিডলটন ও মেগানকে হালকা রংকেই প্রাধান্য দিতে দেখা যায়। অপরদিকে প্রিন্সেস ডায়ানাকে লিপগ্লস ব্যবহার করতে দেখা যেত।
মুখমণ্ডলের মেকআপ
জমকালো সাজ বরাবরই রাজপরিবারের নারীরা এড়িয়ে চলেন। গ্লিটার, ভারী ব্লাশন, হাইলাইটার, এমনকি কন্টুরিংয়ের মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। কেট মিডলটন, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সাধারণ সাজে দেখা গেলেও মেগানকে মাঝেমধ্যে হালকা হাইলাইটার ও ব্লাশন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে সেটিও সীমার মধ্যেই।
খুবই পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয় ফাউন্ডেশন এবং অবশ্যই সেটি স্কিন টোনের সঙ্গে মিলিয়ে।
জনসম্মুখে মেকআপ

বাইরে দীর্ঘ সময় কাটাতে হলে মেকআপের ওপর একটু ফিনিশিং পাউডার বুলিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয় বৈকি। রাজপরিবারের সদস্যরা অগোছালোভাবে জনসম্মুখে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান না।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাগাজিন মেরি ক্লেয়ার থেকে জানা যায়, রাজপরিবারের সদস্যদের জনসম্মুখে মেকআপ ঠিক করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
কেট মিডলটন কিংবা মেগানকে যদি অন্যান্য নারীদের মতোই গাড়ির পিছনের সিটে বসে ব্লাশন লাগাতে দেখা যায়, তা নিশ্চয়ই রাজকীয় হবে না। প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো সাধারণ নারী নন। তাই তাদের জীবনযাপনেও আলাদা নিয়ম রয়েছে।
রাজপরিবারের নারীদের অপরিহার্য পণ্য হেয়ারনেট

অস্ট্রেলিয়ার মেরি ক্লেয়ার ম্যাগাজিনের মতে, রাজপরিবারের নারীদের সৌন্দর্যের বড় নিয়ম হলো, তাদের চুল সবসময় গোছানো দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে চুল ঠিক রাখতে হেয়ারনেটের জুড়ি নেই। কেট মিডলটনের কাছে বেশ পছন্দ এই পণ্যটি। দীর্ঘসময় চুলকে গোছানো দেখাতে চাইলে এর থেকে ভালো কিছু নেই বলে মনে করেন কেট। 'হেয়ারনেট' পুরনো হলেও রাজকীয় নারীদের কাছে এখনো বেশ জনপ্রিয়। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অবশ্য এই হেয়ারনেটের প্রয়োজন হয় না। তিনি হেয়ার সেটিং স্প্রের মাধ্যমেই তার ছোট করে ছাটা সফেদ চুলকে সুন্দরভাবে সামলে নেন।
'সাধারণই সর্বোত্তম' এই প্রবাদের প্রয়োগটি যেন ব্রিটিশ রাজপরিবারে নারীদের জন্যই প্রযোজ্য।
সূত্র:
১. দ্য গার্ডিয়ান
২. মেরি ক্লেয়ার
৩. ইউএস উইকলি
Comments