লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট, ক্ষতিপূরণ দাবি কৃষকের

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান, ফলজ গাছ, বাঁশঝাড় ও সুপারি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রাম ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ি কিসামতবানু গ্রামের কৃষকরা।
কুড়িগ্রামে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হয়েছে ধান। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান, ফলজ গাছ, বাঁশঝাড় ও সুপারি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রাম ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ি কিসামতবানু গ্রামের কৃষকরা।

প্রতি বছর ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ফসলি জমির মাঝখান থেকে ইট ভাটা সরিয়ে নিতে কৃষকরা ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের ৩৫০ বিঘা ও চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি কিসামতবানু গ্রামের ৫০ বিঘা জমিসহ ৪০০ বিঘা জমির বোরো ধান দুটি ইটভাটা থেকে থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে শুকিয়ে গেছে। লালমনিরহাটের স্টার ব্রিকস ও চিলমারীর ওয়ারেস ব্রিকস এ দুটি ইটভাটা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়ায় আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল ও সুপারি গাছের পাতা বাদামি হয়ে গেছে বলে জানান তারা।

লালমনিরহাটে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর (৬৫) অভিযোগ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিস্তীর্ণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু, ইটভাটা মালিকরা খুব শক্তিশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এ বছর ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমার ১৫ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগে অভিযোগ করেন।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি করছে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু, মালিকের কাছ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।'

চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ী কিসামতবানু গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক গোলাপ উদ্দিন (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, 'ওয়ারেস ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমার তিন বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি কিন্তু, ইটভাটা মালিক আমাদের সাড়া দিচ্ছেন না।'

লালমনিরহাটে টু স্টার ইট ভাটার মালিক সেলিম হায়দার ও চিলমারীর ওয়ারেস ইট ভাটার মালিক ওয়ারেস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদি ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইটভাটা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাহমুদা মাসুম ও চিলমারী উপজেলার ইউএনও মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কৃষকরা তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রংপুরের পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ১৭০টি ইটভাটার মধ্যে ১৩০টি ইটভাটা কোনো অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। অবৈধ ইটভাটার তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

6h ago