ঈদে ইন্দোনেশিয়ায় বাড়ি ফেরেন প্রায় ৯ কোটি মানুষ

ইন্দোনেশীয় ভাষার ‘মুদিক’ শব্দটির বাংলা অর্থ ‘বাড়ি যাচ্ছি’। মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে ইন্দোনেশিয়ার কয়েক কোটি মানুষ তাদের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি থেকে ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করবেন এ বছর। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশীয় ভাষার 'মুদিক' শব্দটির বাংলা অর্থ 'বাড়ি যাচ্ছি'। মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে ইন্দোনেশিয়ার কয়েক কোটি মানুষ তাদের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন।

এটা নতুন কিছু নয়। চীনা নববর্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত দুই বার, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় আমরাও মানুষের ঘরমুখী যাত্রা দেখি। উড়োজাহাজ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ফেরি, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল—যে যেভাবে পারেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরেন। এমনকি পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাড়ির ফেরা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আবার একই রকম ভোগান্তি সহ্য করে সবাই ফেরেন কর্মস্থলে।

এই ভোগান্তির চিত্র কমবেশি আমাদের সবারই জানা। তবে, এই যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। একসঙ্গে অনেক মানুষের চাপ পড়ায় উড়োজাহাজ, বাস, লঞ্চসহ প্রায় সব যানবাহনের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। যাদের স্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করা কঠিন, তাদের জন্য এই বাড়তি ভাড়া হয়ে ওঠে অসহনীয়।

করোনা মহামারির ২ বছরে ইন্দোনেশিয়ায় মুদিক ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা কম ছিল। তবে, এ বছরের মুদিক ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি থেকে ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করবেন এ বছর।

মুদিক যাত্রার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের একটি বিশেষ শাখা মাসখানেক আগে থেকে কাজ শুরু করে। দ্বীপ দেশটির এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতের ব্যবস্থা আকাশ বা জলপথে। এ বছর ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ জলপথে, ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ আকাশপথে এবং ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ ট্রেনে মুদিক যাত্রা করবেন। ইন্দোনেশিয়ায় শুধু জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপে রেল যোগাযোগ রয়েছে। বাকি ৬ থেকে ৭ কোটি মানুষ সড়কপথে মুদিক যাত্রা করবেন।

একই দ্বীপে মুদিক যাত্রার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সড়কপথ। তবে এ ক্ষেত্রে গণপরিবহন বাস ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ইন্দোনেশিয়ানরা। যার ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল এক্সপ্রেস হাইওয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ হলেও নন-টোল ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলে মানুষ মুদিক যাত্রা করেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলে মুদিক যাত্রা নিরুৎসাহিত করতে লরি, ট্রেন, জাহাজে গন্তব্যস্থলে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এ বছর কেবলমাত্র করোনার বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়া নাগরিকরা মুদিক ভ্রমণ করতে পারবেন। সেইসঙ্গে মুদিক যাত্রীদের সেবা দিতে মহাসড়ক, স্টেশন ও বন্দরে প্রায় ১৪ হাজার জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার সরকার দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় সাহায্য করে থাকে। দেশটির ৮ থেকে ৯ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মুদিক যাত্রার জন্য জাহাজ, ট্রেন, বাসের টিকেট বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। এ বছর দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার বাস।

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের বড় অবদান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে শহরে আসা এই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ ঈদে বাড়িমুখী হয় তাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। ইন্দোনেশিয়ার মতো ব্যবস্থা এ দেশেও নেওয়া হলে তাদের ঘরে ফেরার আনন্দটা বেড়ে যেতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago