ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত ৪০ হাজার পাথর শ্রমিক

বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্মরত পাথর ভাঙা শ্রমিক। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বুড়িমারী, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট এবং রৌমারী উপজেলায় তুবা স্থলবন্দরে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজ করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত এই কাজ করে একজন মজুরি পান ৩০০-৩৫০ টাকা।

এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই কম মজুরিতেই পাথর ভাঙার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকেন। তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত তবুও কাজ হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর শ্রমিক আছেন ২৫ হাজার, সোনাহাট স্থলবন্দরে ৮ হাজার এবং তুবা স্থলবন্দরে ৭ হাজার।

পাথর ভাঙা শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ শতাংশই নারী।

৩ স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় ৩ হাজার পাথর ভাঙা মেশিন আছে। প্রতিটি মেশিনে ১২-১৮ জন শ্রমিক পাথর ভাঙেন। প্রত্যেক শ্রমিক প্রতিদিন ৬০০ টাকা মজুরি পেলেই ন্যায্য মজুরি হতে পারে বলে জানিয়েছে শ্রমিক ফেডারেশন।

ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিক নজরুল ইসলাম (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লাগাতার পাথর ভাঙার কাজ করি। শুধু দুপুরে ১ ঘণ্টা সময় পাই খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য। প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরি পেলেও তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চালানো যায় না।'

একই স্থলবন্দরের নারী শ্রমিক মোকসেদা বেগম (৪০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে কম মজুরিতে পাথর ভাঙার কাজ করি। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে সংসারের প্রয়োজন মেটাতে পারি না।'

কুড়িগ্রামের তুবা স্থলবন্দরের পাথর শ্রমিক আব্বাস আলী (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবাদ করলে আর কাজে নেওয়া হয় না। তাই কম মজুরি পেলেও প্রতিবাদ করি না।'

সোনাহাট স্থলবন্দরের শ্রমিক আজিজুল ইসলাম (৫০) বলেন, 'আমাদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। এজন্য মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারি না। নিয়োগপত্র চাইলে মালিকপক্ষ ক্ষিপ্ত হয় এবং কাজে না নেওয়ার হুমকি দেইয়।'

বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর ব্যবসায়ী নেওয়াজ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ অঞ্চলে শ্রমিকের সংখ্যা চাহিদার চেয়ে বেশি। কাজের জন্য শ্রমিকরাই আমাদের কাছে আসেন। কম মজুরিতেই তারা কাজ করতে রাজি হন।'

অন্য সব ব্যবসায়ী মজুরি বাড়ালে তিনিও ন্যায্য মজুরি দেবেন বলে জানান।

লালমনিরহাট সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথর ভাঙা শ্রমিকরা যেন ন্যায্য মজুরি পান, সেজন্য কাজ করা হচ্ছে। মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। প্রথমে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করতে হবে।'

তিনি জানান, মালিকপক্ষ শ্রমিকের দাবি না মানলে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে এবং কর্মবিরতি পালন করা হবে। 

খুব শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

1h ago