পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া: দ্বিগুণ যাত্রী-যানবাহন পার হলেও ভোগান্তি নেই

বিগত সময়ের তুলনায় এবার ঈদের আগে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও ভোগান্তি নেই সড়ক-মহাসড়ক ও নৌপথে। ছোট, বড় এবং লঞ্চ পারাপারের বাসের জন্য আলাদা ৩টি লাইন থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারছেন দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে গত ৪ দিনে গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ৫২৫টি যানবাহন পার করা হয়েছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

বিগত সময়ের তুলনায় এবার ঈদের আগে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও ভোগান্তি নেই সড়ক-মহাসড়ক ও নৌপথে। ছোট, বড় এবং লঞ্চ পারাপারের বাসের জন্য আলাদা ৩টি লাইন থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারছেন দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে। মহাসড়ক ও ঘাটের কোনো লেনেই বাড়তি যানবাহনের চাপ দেখা যায়নি।

চুয়াডাঙ্গার ইশরাত জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা থেকে এই পথে সবসময় যাতায়াত করি। বিগত সময়ে ঈদের আগে মহাসড়কে যানজট এবং গাড়ীর দীর্ঘ লাইন থাকে। এবার ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের কোথায় যানজট কিংবা গাড়ীর দীর্ঘ লাইন নেই। অল্প সময়েই মহাসড়ক হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।'

মাগুরার আবুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুদিন আগেও পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ছোট গাড়ির লাইন ছিল ২-৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ কারণে একদিন পরে রওনা দিয়েছি। আজ ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ২ ঘণ্টায় পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে পৌঁছে গেলাম। মহাসড়কের কোথায় যানজট চোখে পড়েনি।'

ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

দূরপাল্লার বাসযাত্রী সোহরাব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ঈদের সময় পাটুরিয়া ঘাটে এসে ৩-৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। এবার ঘাটে আসামাত্রই ফেরিতে উঠতে পেরেছি। এবার প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে ভালো। বিভিন্ন গাড়ির জন্য আলাদা আলাদা লাইন করা হয়েছে এবং মহাসড়কে ডিভাইডার বসানো হয়েছে। এ কারণে ৩ চাকার গাড়ি কিংবা লেগুনা মহাসড়কের মাঝের লেনে আসতে পারেনি। এসব গাড়ি মহাসড়কের ২ পাশের লেনে চলাচল করায় ভোগান্তি কম হয়েছে।'

রাজবাড়ীর কামাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। পাটুরিয়া ঘাটে এসেই লঞ্চে উঠতে পেরেছি। খুব সহজেই বাড়ি যেতে পারছি।'

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২ বছর করোনার কারণে মানুষ খুব একটা ঘর থেকে বের হয়নি। এবার মহাসড়ক ও নৌপথে যাত্রী এবং যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে মনে করেই আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রোড ডিভাইডার এবং পাটুরিয়া ঘাটে আসার আগেই ছোট, বড় ও লঞ্চ পারাপারের বাসের জন্য আলাদা ৩টি লেন করা হয়েছে। এ ছাড়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ৩টি ফেরি যুক্ত করা হয়েছে। ২১টি ফেরি সচল থাকায় বাড়তি যাত্রী ও যানবাহন পার করা সম্ভব হয়েছে। সাধারণত এই নৌপথে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার গাড়ি পারাপার হলেও ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৫ থেকে ৬ হাজার। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে যাত্রী ও গাড়ির সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।'

ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

তিনি বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৪ দিনে গাড়ি পারাপার করা হয়েছে ৪৬ হাজার ১০০টি। গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ৫২৫টি। বৃহস্পতিবার পার করা হয় ১৩ হাজার, শুক্রবার ১২ হাজার ৬০০টি, শনিবার ১১ হাজার ৫০০টি এবং রোববার ৯ হাজারেরও বেশি। আজও যাত্রী ও যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে সবগুলো ফেরি সচল থাকায় খুব সহজেই যাত্রী ও যানবাহন পার করা সম্ভব হচ্ছে।'

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম আজাদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারের ঈদে মহাসড়ক এবং নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ার আশঙ্কায় ঈদের আগে ও পরে ৫ দিন করে মোট ১০দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া, মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন এবং ফেরি ঘাটে ঢুকতে ৩টি আলাদা লাইন করার কারণে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচল করতে পেরেছে। পাশাপাশি, সড়ক-মহাসড়ক ও নৌপথে ৮ শতাধিক পুলিশ, আনসার, র‌্যাব সদস্যরা সক্রিয় থাকায় এই শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এসব কারণে কোথাও যানজট হয়নি। যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই চলাচল করতে পারছেন।'

জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়ক-মহাসড়ক এবং নৌপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, ঠিক সেভাবেই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কাজ করেছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট ছিল। এ ছাড়া, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ'র পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, রোভার স্কাউটরা সক্রিয় ছিল বলেই বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ গাড়ি ও যাত্রী খুব সহজেই পার করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি, ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী যাত্রী ও যানবাহনও এভাবেই পার করতে পারব।'

Comments

The Daily Star  | English

Women MPs in reserved seats: How empowered are they really?

Fifty-two years ago, a provision was included in the constitution to reserve seats for women in parliament for a greater representation of women in the legislative body.

7h ago