সফল ব্যক্তিরা কেন একই ধরনের পোশাক পরেন?

বিখ্যাত ও অত্যন্ত সফল অনেক ব্যক্তিদের মধ্যে একটি বেশ প্রচলিত অভ্যাস লক্ষণীয়, তা হচ্ছে প্রায় নিয়মিতই একই ধরনের পোশাক পরিধান করা।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: রয়টার্স

বিখ্যাত ও অত্যন্ত সফল অনেক ব্যক্তিদের মধ্যে একটি বেশ প্রচলিত অভ্যাস লক্ষণীয়, তা হচ্ছে প্রায় নিয়মিতই একই ধরনের পোশাক পরিধান করা।

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস প্রতিদিন একই পোশাক পরতেন, আর তা হচ্ছে, কালো টার্টলনেক, নীল জিন্স এবং নিউ ব্যালেন্স স্নিকার্স।

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। ছবি: রয়টার্স

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ধূসর বা নীল স্যুট বেশি পরেন।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বেশিরভাগ সময়ই তার আইকনিক ধূসর টি-শার্ট পরেন।

ফিল্ম ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলান একটি নীল শার্টের উপর কালো, সরু-ল্যাপেল জ্যাকেট এবং কালো ট্রাউজারের সঙ্গে প্রতি দিন পরার মতো জুতা ব্যবহার করেন৷

ডক্টর ড্রে নামে পরিচিত বিখ্যাত সংগীতশিল্পী আন্দ্রে ইয়াং জানান তিনি প্রতিদিন একই জুতা পরেন।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একই ধূসর স্যুটের বিভিন্ন প্রকরণ ব্যবহারের জন্যে পরিচিত ছিলেন।

ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার, রিচার্ড ব্র্যানসন প্রতিদিন একই জিন্স পরেন।

এছাড়া সনি মিউজিকের ক্রিয়েটিভ হেড মাতিলদা কাহল, হাফিংটন পোস্টের কো-ফাউন্ডার আরিয়ানা হাফিংটন, বিলিয়নিয়ার জন পল ডিজোরিয়াসহ বেশ অনেকের মধ্যেই এই একই ধরনের পোশাক পরিধানের অভ্যাসটি লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু কেন তারা প্রতিদিন একই ধরনের পোশাক পরেন? এর পিছনে রয়েছে একটি বেশ স্মার্ট কৌশল। আমরা সবাই আরও বেশি প্রোডাক্টিভ হতে চাই, তবে বিশেষ করে এসকল উদ্যোক্তারা তা আরও বেশি চান।

মনোবিজ্ঞানী ও ইউসি বার্কলে হাসের ভিজিটিং অধ্যাপক ব্যারি শোয়ার্টজ বলেন, যুক্তিটি বেশ সহজ। এটি তাদের দৈনিক ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের সংখ্যা হ্রাস করে। যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। ডিসিশন ফ্যাটিগ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি একটি বাস্তব বিষয়।

তিনি ২০০৪ সালে তার বই 'দ্য প্যারাডক্স অফ চয়েস'-এ লিখেছেন কীভাবে খুব বেশি বাছাই বা নির্বাচন আমাদের চিন্তাকে অসার করে দিতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

ব্যারি শোয়ার্টজ বলেন, প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে শক্তির একটি সীমিত অংশ নির্দিষ্ট থাকে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সেই সীমিত অংশটি ব্যবহার করতে থাকি। আর যখন তা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখনই আমাদের মধ্যে ডিসিশন ফ্যাটিগ দেখা দেয়।

ভ্যানিটি ফেয়ার ২০১২-তে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, 'আপনি দেখতে পাবেন আমি কেবল ধূসর বা নীল স্যুট পরি। আমি এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত কমানোর চেষ্টা করছি। আমি তাই কি খাচ্ছি বা কি পরছি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কেননা আমার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়।'

জাকারবার্গ প্রায়শই তার বিখ্যাত ধূসর টি-শার্ট পরেন। ২০১৪ সালে একটি পাবলিক প্রশ্নোত্তর সেশনের সময়  তিনি বলেছিলেন, 'আমি আমার জীবনকে সত্যিই পরিষ্কার রাখতে চাই। যাতে আমি যেকোনো বিষয়ে যতটা সম্ভব কম সিদ্ধান্ত নিতে পারি।'

বলা হয়ে থাকে যে, একজন সাধারণ ব্যক্তি গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার সিদ্ধান্ত নেন। সকালের নাস্তায় কী খাবেন? কখন বের হবেন? কী শার্ট পরতে হবে? কী রঙের পরলে ভালো হয়? কোন প্যান্ট পরবেন? কোন জুতা পরবেন? কোন দরজা দিয়ে যেতে হবে? কোথায় খাবার খেতে যাবেন? এরকম অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

মস্তিষ্কের শক্তি সঞ্চয় করার একটি সহজ উপায় হল আপনার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের সংখ্যা কমানো।

কী পরবেন আর কী পরবেন না এমন ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি যদি প্রতিদিন উদ্বিগ্ন থাকেন তাহলে দিন যত এগিয়ে যাবে ততই আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। দিনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও আপনার মানসিক শক্তি দিনব্যাপী বজায় রাখার জন্য, আপনি প্রতিদিন যে সমস্ত জাগতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেগুলো স্বয়ংক্রিয় করতে শিখতে হবে। যাতে আপনাকে ক্রমাগত সেগুলো নিয়ে চিন্তা করতে না হয় এবং মস্তিষ্কের শক্তি নষ্ট করতে না হয়।

 

সূত্র: 

১. বিসনেজ ইনসাইডার

২. থ্রাইভগ্লোবাল

৩. সিএনবিসি

৪. ইনচ

 

Comments

The Daily Star  | English

The story of Gaza genocide survivor in Bangladesh

In this exclusive interview with The Daily Star, Kamel provides a painful firsthand account of 170 days of carnage.

1d ago