স্কুলে হামলার আগেই অনলাইনে আভাস দেন রামোস

এই দোকান থেকেই বৈধভাবে ২টি রাইফেল ও ৩৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি কেনেন রামোস
এই দোকান থেকেই বৈধভাবে ২টি রাইফেল ও ৩৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি কেনেন রামোস। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের দক্ষিণে উভালডে এলাকায় রব এলিমেন্টারি স্কুলে হামলার কয়েক মিনিট আগে রামোস অনলাইনে এ সম্পর্কে জানান দেন।

গতকাল বুধবার গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, অনলাইন বার্তায় রামোস বলেন যে তিনি একটি প্রাথমিক স্কুলে হামলা চালাতে যাচ্ছেন।

তার হামলার ভয়াবহতা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাইফেল দিয়ে গুলি করে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী ও ২ শিক্ষককে হত্যা করেন ১৮ বছর বয়সী সালভাদর রামোস।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রিপাবলিকান দলের গভর্নর অ্যাবট জানান, রামোস মঙ্গলবারে এক অনলাইন বার্তায় জানান তিনি তার নানিকে গুলি করতে যাচ্ছেন।

পরে আরও এক বার্তায় তিনি নানিকে গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রামোস তার নানিকে গুলি করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। নানি আহত হলেও পুলিশকে ফোন করে রামোস সম্পর্কে সতর্ক করেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই অনলাইন বার্তাগুলো ছাড়া রামোসের মধ্যে এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের কোনো পূর্বলক্ষণ দেখা যায়নি।

নানিকে গুলি করে বাসা থেকে পালিয়ে রামোস উভালডের রব এলিমেন্টারি স্কুলে আসেন। গাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে ঢোকার সময় এক স্কুল পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে এগিয়ে এলে তিনি দৌড়ে ভেতরে চলে যান।

টেক্সাসের দক্ষিণে উভালডে এলাকায় রব এলিমেন্টারি স্কুল
টেক্সাসের দক্ষিণে উভালডে এলাকায় রব এলিমেন্টারি স্কুল। ছবি: রয়টার্স

পুলিশের তথ্য অনুসারে, সেই মুহূর্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে তদন্তের স্বার্থে কর্তৃপক্ষ এখনো পুরো ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়নি।

তবে সন্দেহভাজন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখে ব্যাকপ্যাক ফেলে দৌড়ে স্কুলের ভেতর চলে যায় বলে জানা গেছে।

রামোস পেছনের দরজা দিয়ে স্কুলে ঢুকেন। তার কাছে এআর-১৫ মডেলের রাইফেল ছিল। তা নিয়ে তিনি চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ১৯ শিক্ষার্থী ও ২ শিক্ষককে হত্যা করেন।

রামোস এই হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে বৈধভাবে ২টি রাইফেল ও ৩৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি কেনেন।

পুলিশ স্কুল ঘিরে ফেলে। জানালা ভেঙে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের পালাতে সাহায্য করে। মার্কিন সীমান্ত রক্ষী এজেন্টরাও এগিয়ে আসেন এবং বন্ধুকধারীর মুখোমুখি হন।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, এক সীমান্তরক্ষী এজেন্টের 'ক্রসফায়ারে' রামোস মারা গেছেন।

হাইস্কুল থেকে ড্রপআউট হওয়া রামোসের নামে থানায় কোনো মামলা ছিল না বা তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগও আনা হয়নি।

গভর্নর অ্যাবট আরও জানান, ১৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটির মুখপাত্র ক্রিস ওলিভারেজ গণমাধ্যমকে জানান, আহতদের মধ্যে 'একাধিক শিশু' আছে। তারা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হতে পারেনি।

গভর্নরের দাবি, রামোসের অনলাইন পোস্টগুলো ফেসবুকে করা হয়েছিল।

তবে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান, সেগুলো পোস্ট নয়, বরং ডাইরেক্ট মেসেজ। অর্থাৎ, তিনি 'ইনবক্সে' এক বার্তা পাঠিয়েছেন। তা গোলাগুলির এ ঘটনার পর জানা যায়।

তবে কার কাছে সেই বার্তা পাঠানো হয়েছিল এবং তা ফেসবুক না ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ফেসবুকের মুখপাত্র।

ভুক্তভোগীদের নিকটজনরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ও শোক প্রকাশ করছেন।

কিম্বার্লি মাতা রুবিও তার চতুর্থ শ্রেণির মেয়ে আলেকজান্ড্রিয়া আনিয়াহ রুবিওকে হারিয়েছেন এই হত্যাযজ্ঞে। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, 'বলেছিলাম আমরা তাকে ভালোবাসি এবং স্কুল ছুটির পর তাকে নিতে আসবো। আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যা এটাই শেষ বিদায় ছিল।'

তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি এবং সন্দেহভাজন রামোস সম্পর্কেও তেমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি।

অ্যাবট তার বক্তব্যে আরও জানান, কঠোর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন সহিংসতাকে প্রতিরোধ করে না। এ প্রসঙ্গে তিনি নিউইয়র্কের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোর উদাহরণ দেন। বলেন, 'আইনপ্রণেতাদের উচিৎ মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ও এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করা।'

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার টেলিভিশন ভাষণে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিধিনিষেধ চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট খুব শিগগির টেক্সাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

তবে ওয়াশিংটনে এ ধরনের নতুন আইন পাস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কংগ্রেসের প্রায় সব রিপাবলিকান সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে এবং সর্বশেষ এই হত্যাযজ্ঞে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের কোনো আভাস এখনো পাওয়া যায়নি।

হিউস্টনে আগামী শুক্রবার ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) বার্ষিক বৈঠক শুরু হতে যাচ্ছে। সে বৈঠকে অংশ নেবেন অ্যাবট, টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারা সবাই রিপাবলিকান দলের সদস্য।

এক বক্তব্যে এনআরএ ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, তাদের সম্মেলন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোয় গোলাগুলির ঘটনা খুবই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ন্যাভাল পোস্টগ্রাজুয়েট স্কুল'স সেন্টার ফর হোমল্যান্ড ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটির কে-১২ স্কুল শুটিং ডেটাবেস অনুসারে, চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্কুলে গুলির ঘটনা ঘটেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh-US tariff talks underway in Washington

Based on progress made so far, Bangladesh hopes for a positive outcome

9h ago