নারায়ণগঞ্জের সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

'আমার স্ত্রী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে নিয়ে পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বলেন, বাচ্চার অবস্থা ভালো না, দ্রুত সিজার করতে হবে। না হলে মা ও শিশু কাউকেই বাঁচানো যাবে না।'

বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেটের একটি সেলুনের সাবেক কর্মী মো. আকাশ

হাসপাতালটি বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'চিকিৎসকদের কথা শুনে আমরা সিজার করাতে রাজি হই। এ জন্য ২২ হাজার টাকা চান তারা। সে সময় আমার এক আত্মীয় এসে টাকা কমানোর অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। পরে সেখান থেকে বের হয়ে মাতুয়াইলে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানান, বাচ্চা ভালো আছে ও রোগীও সুস্থ। তাদের পরামর্শে বাচ্চার নরমাল ডেলিভারি হয়, সিজার করতে হয়নি।'

গতকাল সোমবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা হয় আকাশের। তিনি বলেন, 'আমি এই মার্কেটে একটি সেলুনের দোকানে কাজ করতাম। এ জন্যই এই মার্কেটে থাকা পদ্মা হাসপাতালে এসেছিলাম।'

একই মার্কেটের একজন জামা-কাপড়ের দোকানদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার এক বোন পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন গর্ভপাত করাতে। অস্ত্রোপচারের সময় তার একটি নাড়ি কেটে ফেলা হয়, ফলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে তারা আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে আমার বোন সুস্থ হয়।'

তার অভিযোগ, 'পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসা হয়। ভালো কোনো ডাক্তার-নার্স নেই। তাছাড়া রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়, প্রায়ই এমন অভিযোগ আমরা শুনেছি।'

পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে গত রোববার দুপুরে অনিবন্ধিত হাসপাতাল বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে আসছেন—এমন তথ্য শুনে এক প্রসূতি মা ও নবজাতককে অস্ত্রোপচার টেবিলে রেখেই পালিয়ে যান ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য কর্মীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই মা-নবজাতককে অস্ত্রোপচার টেবিলে দেখতে পান। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করে তাৎক্ষণিক তাদের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথে স্থানান্তর করা হয়। সিলগালা করে দেওয়া হয় হাসপাতালটি।

সরেজমিনে পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলগালা করা তালা ঝুলে আছে। গেটে লেখা, 'পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল সংস্কার কাজ চলিতেছে। সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ'।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেটের এক দোকান মালিক বলেন, 'কয়েক মাস ধরেই সংস্কার কাজ চলছে বলে বন্ধের নোটিশ দিয়ে রেখেছে সামনের গেটে। কিন্তু এর মধ্যেই রোগী ভর্তি, সার্জারি সব কিছুই চলছে। মূলত মোবাইল কোর্টের অভিযান থেকে বাঁচতেই এই কৌশল।'

তিনি বলেন, 'পদ্মার আগে এখানে পপুলার জেনারেল হাসপাতাল ছিল। এক অভিযানে হাসপাতালের মালিক ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ওই অভিযানের পর পপুলার বন্ধ হয়ে যায়। তারপর মোশারফ হোসেন, মো. সুজন, ডা. আরিফ হোসেন ও আরও একজন মিলে পদ্মা হাসপাতাল চালু করে। তবে তারা কেউ স্থানীয় বাসিন্দা নন। গতকাল অভিযানের পর সুজন ও মোশারফ ২ জনই বাসা ছেড়ে কুমিল্লা চলে গেছেন।'

মার্কেটটির পরিচালক আহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৩ বছর ধরে এখানে পদ্মা হাসপাতাল, কিন্তু ২ বছর ধরে ভাড়া দেয় না। আমি দেশের বাইরে ছিলাম, তাই এই সুযোগ পেয়েছে। এই ভাড়া নিয়ে অনেক সমস্যা চলছে। সরকার বন্ধ করেছে, খুশি হয়েছি।'

পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের মালিকপক্ষের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে হাসপাতালের ব্যানারে থাকা মোবাইলে নম্বরে যোগাযোগ করলে আলমগীর হোসেন নামে একজন ফোন ধরে বলেন, 'হাসপাতালে কী হয়েছে কিছু জানি না। আমি ছুটিতে ছিলাম। ৮ জন মালিক। তাদের কারো নাম্বার আমার কাছে নেই। সবাই কুমিল্লা থাকেন।'

এক নাগারে কথাগুলো বলেই তিনি কল কেটে দেন। এরপর ওই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, 'একই মালিকের ২টি প্রতিষ্ঠান পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল ও কদমতলী জেনারেল হাসপাতাল। পদ্মা বন্ধ হলেও কদমতলী জেনারেল হাসপাতাল চালু আছে। ২ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ হোসেন। কিন্তু তার কোনো ডাক্তারি সনদ নেই। অভিযানের পর থেকেই আরিফ আত্মগোপনে আছেন।'

কদমতলী জেনারেল হাসপাতালের রিসিপসনিস্ট শ্যামল বলেন, 'পদ্মা ও কদমতলী ২টি প্রতিষ্ঠান একই মালিকের। ডা. আরিফ মালিকদের মধ্যে একজন।'

তবে তিনি অভিযান বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, 'মালিকপক্ষের কোনো ফোন নম্বর আমার কাছে নেই।'

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের কোনো লাইসেন্স ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতি তারা নেয়নি। তাদের কার্যক্রমে ত্রুটি ছিল বলেই তারা অনুমতি নেয়নি। এ জন্য পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

10h ago