বন্যায় ভেসে গেছে রেহানাদের নোটখাতা

চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেহানা বেগম। মেধাবী রেহানাকে নিয়ে বাবা-মাসহ প্রতিবেশী সবার স্বপ্ন ছিল এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাবে রেহানা। কিন্তু, সবার সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা।
রেহানা ও তার পরিবার প্রায় ১০দিন ধরে কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র আছেন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ার

চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেহানা বেগম। মেধাবী রেহানাকে নিয়ে বাবা-মাসহ প্রতিবেশী সবার স্বপ্ন ছিল এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাবে রেহানা। কিন্তু, সবার সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা।

রেহানা বলে, 'শুধু আমি না, আমার সহপাঠী আফসানা বেগম নানাবাড়ি চলে গেছে। সঙ্গে বন্ধু মারুফা বেগম, সুমি আক্তার, আয়েশা আক্তার, জুই, লিমার বাড়িতেও পানি উঠেছে। সবার আমার মতোই ক্ষতি হয়েছে। বুঝতে পারছি না কী করব।'

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার হাকালুকি হাওড়পাড়ের গ্রাম সাদেকপুরে রেহানার পরিবারের বসবাস। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে রেহানা সবার ছোট।

রেহানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'স্বপ্ন ছিল জিপিএ-৫ পাওয়ার। খুব ভালোই প্রস্তুতি ছিল। তবে দীর্ঘদিনের নোট খাতা, বইপত্র সব ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।'

শুধু রেহানা নয়, তার বড় ভাই রায়হান এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তারও বইপত্র ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।

বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় রেহানা ও তার পরিবার প্রায় ১০দিন ধরে কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র আছেন।

১৯ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট, বাজারে যেতে লাগে ২০ মিনিট। তবে, এখন সব পানির নিচে। গত ১৭ জুন থেকে তাদের এলাকার সবকিছু পানির নিচে চলে গেছে। বেশিরভাগ সড়কের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। আর বাড়িতে তো পানি আছেই।

রেহানার বাবা সুলতান মিয়া বলেন, 'বন্যার পানি ঘরের ভিতরে প্রায় বুক সমান পর্যন্ত উঠে যায়। ঘরের সব কিছু ডুবে গেছে। এখন বইপত্র কিছু নাই। আমার দুই সন্তান কীভাবে পরীক্ষা দেবে আমি জানি না।'

রায়হান বলেন, 'আমার স্বপ্ন পড়াশোনা শেষে চাকরি করব। কিন্তু, বন্যা বেকায়দায় ফেলল। আমি পড়তে চাই, কিন্তু বই, নোট খাতা সব বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেল।'

সহপাঠীদের কথা জানিয়ে রায়হান বলেন, 'আমার অনেক বন্ধুর বাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। বই, নোট ভেসে গেছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই।'

রায়হানের মা জাহানারা বেগম বললেন, 'আমাদের সব ভাসাল এই হাওড়, এর আগত এমন বান দেখছিলাম না। আমরার ধান আছিল, সব বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন শুধু ঘরটা আছে। সেটাতে যেন চুরি না হয় এজন্য সারারাত পুত্র রায়হান পাহারা দিচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার শ্বশুর বাড়িতে বন্যা হয়। তবে বিয়ার প্রায় ৪৫ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এতো পানি দেখিনি। ১৭ জুন রাতেতো মনে হয়েছিল, সাগরের ঢেউ চলছে।'

Comments