আমডাঙ্গা খাল সংস্কার

৮ মাস আগে বরাদ্দ ৫১ কোটি টাকা, এখনো শুরুই হয়নি কাজ

যশোরের ভবদহ অঞ্চলকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য অভয়নগরের আমডাঙ্গা খালটি খনন না করলে বর্ষায় পানিতে ভেসে যাবে কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সময়মত খালটি সংস্কার না করায় চরম দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
আমডাঙ্গা খালে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি: প্রথম আলো থেকে নেওয়া

যশোরের ভবদহ অঞ্চলকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য অভয়নগরের আমডাঙ্গা খালটি খনন না করলে বর্ষায় পানিতে ভেসে যাবে কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সময়মত খালটি সংস্কার না করায় চরম দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।

খালটি সংস্কারের জন্য ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজ শুরু না করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ভবদহ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

খাল পাড়ের ২৫টি পরিবার বর্তমানে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে খালের ২ পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় ব্লকগুলো ধসে গেছে, এতে খাল পাড়ের মানুষদের ঘরবাড়ি বিলীন হতে চলেছে।

গত বছরের বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কারণে অনেকেই তাদের ভিটে-বাড়ি হারিয়ে সড়কের ওপর বসবাস করছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমেও যেকোনো সময় খালের পানির স্রোতে বিলীন হতে পারে তাদের ঘরবাড়ি। ভাঙন এসে অনেকের ঘরের দেয়াল পর্যন্ত ছুঁয়েছে। লোকবল নিয়োগের অভাবে আমডাঙ্গা সেতুর ৬ ভেন্ট স্লুইস গেটটিও অচল অবস্থায় রয়েছে।

স্লুইস গেটটি দেখাশোনা করার মতো কোনো লোক নেই। গেটের কপাট ও তালায় মরচে ধরে ইতোমধ্যে এটি অকেজো হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি ভয়াবহ সংকটের সৃষ্টি করবে।

অভয়নগর উপজেলার আমডাঙ্গা খালটি যশোর-খুলনা মহাসড়কের মহাকাল এলাকার মধ্য দিয়ে ভৈরব নদীতে গিয়ে মিশেছে।

পাউবো সূত্র মতে, ভবদহের নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ২০০৬ সালে। সেসময় মৃতপ্রায় খালটিকে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে পুনঃখনন করেন জলাবদ্ধ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। পরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ওপর খালটিতে ৬ ভেন্ট স্লুইস গেট নির্মাণ করে পাউবো।

ভবদহ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে যশোর-খুলনা মহাসড়ক থেকে নদী পর্যন্ত খালের ২ পাড় ব্লক দিয়ে আটকে দেয় পাউবো। এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

স্থানীয় আব্দুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর স্থানীয়রা এক্সকেভেটর দিয়ে পুনরায় খাল খনন শুরু করেন। তবে না বুঝে তারা খালের ২ পাড়ের ব্লকগুলো উঠিয়ে ফেলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় খালের ভাঙন। ইতোমধ্যে গ্রামবাসীদের অনেকেরই বসতঘর-শৌচাগার ভেঙে চলে গেছে খালের মধ্যে। এ ছাড়া, খাল পাড়ের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তাটি খালে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের অনেকেই ঋণ করে বালুর বস্তা ফেলে নিজেদের ঘরবাড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। খালের মধ্যে ভেঙে পড়ছে তাদের ঘরবাড়ি।'

আমডাঙ্গা খালে ৬ ভেন্ট স্লুইস গেট। ছবি: সংগৃহীত

আব্দুস সালাম মোড়লের পাকা ঘর ভেসে গেছে খালের মধ্যে। বাড়িঘর হারিয়ে বর্তমানে তিনি যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী খুপরি ঘর বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সালাম মোড়ল ডেইলি স্টারকে জানান, খাল পাড়ে ৩ শতক জমির ওপর তার পাকাঘর ছিল। বর্ষায় তার ঘর ভেঙে পড়েছে খালে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে পুনর্বাসনের জোর দাবি জানান।

৬০ বছরের বৃদ্ধা সুমিত্রা পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সর্বনাশী খাল আমাদের সবকিছু কেঁড়ে নিচ্ছে। আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাও বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন পাশের বাড়িতেও যেতে পারি না। মনে হয় আমরা কোনো এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করছি।'

স্লুইস গেট অপারেটর রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকদিন আগে সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন এসে গেট খোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু গেটে মরচে ধরার কারণে ব্যর্থ হন। অথচ ভাটায় গেট খুলে রাখা ও জোয়ারের সময় বন্ধ রাখার কথা।'

সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভবদহ এলাকার বিলগুলো এখনো পানিতে ভরে আছে। ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। কেবল পাউবোর খামখেয়ালীপনায় আমরা বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় আছি।'

যশোরের দুঃখ ভবদহ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে খননকৃত খালটি সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে চলতি বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করেছেন ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, প্রেমবাগ ও চলিশিয়া ইউনিয়নের মানুষরাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও পাউবোর একটি সূত্র জানায়, সরকার আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় ৮ মাস আগে। আজ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে শুরু হয়নি খাল সংস্কারের কাজ।

'আমরা বর্ষার আগে বরাদ্দকৃত টাকায় খাল সংস্কারের জন্য একাধিকবার পাউবো কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি', বলেন এনামুল হক।

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

8h ago