খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তম

মুক্তিযুদ্ধে গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার ছিলেন অপারেশন কিলো ফ্লাইটের সমন্বয়ক এবং মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান সেনাপতি। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য আবদুল করিম খন্দকারকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবে তার সনদ নম্বর ৫৭।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তম। ছবি: সংগৃহীত

(মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়ে বিশেষ আয়োজন 'মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা'। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণত আমরা ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্ব সম্পর্কে জানি। কিছুটা আড়ালে ঢাকা পড়ে যান আমাদের বাকি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। দ্য ডেইলি স্টার উদ্যোগ নিয়েছে সেই জানা ও অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়মিত প্রকাশ করার। ক্রমানুসারে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়েই চলছে ধারাবাহিক এই আয়োজন। পর্যায়ক্রমে বীর বিক্রম, বীর প্রতীক মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭২ জন মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা প্রকাশ করবে দ্য ডেইলি স্টার। আমাদের আজকের ৫৭তম পর্বে রইলো গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার  বীর উত্তম'র বীরত্বগাঁথা।)

মুক্তিযুদ্ধে গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার ছিলেন অপারেশন কিলো ফ্লাইটের সমন্বয়ক এবং মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান সেনাপতি। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য আবদুল করিম খন্দকারকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবে তার সনদ নম্বর ৫৭।

১৯৭১ সালের শুরুতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন আবদুল করিম খন্দকার। এসময় তার পদবি ছিল গ্রুপ ক্যাপ্টেন। ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আসন্ন ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় এবং সেই কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে দেবেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠতম বাঙালি অফিসার গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার। এরপর নিয়মিতই কাজের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হেড কোয়ার্টারে যেতেন এ কে খন্দকারকে। ২১ মার্চ ঘোষিত হয় এবারের প্যারেড বাতিল করা হয়েছে। বিস্মিত এ কে খন্দকার আর্মি হেড কোয়ার্টারে গিয়ে দেখলেন সেখানে বহু পাকিস্তানি জেনারেল উপস্থিত। তারা তাঁকে দেখে খানিকটা বিব্রত হলে তিনি চলে আসেন।

পরদিন বিকেলে এ কে খন্দকার বিমানবন্দরে দেখলেন একটি অনির্ধারিত ফ্লাইট থেকে বহু সেনা নামছে। বহু সেনার আগমনে বোঝা গেল পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে এগোচ্ছে। তিনি তাই গোপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের তা জানালেন। ২৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন একে খন্দকার। ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করলে তিনি টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের বিষয় অবহিত করেন।

২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি বাহিনীর পৈশাচিক গণহত্যার পর এ কে খন্দকার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিবেন। এরপর দুবার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাঙালি অফিসারদের সঙ্গেই তিনি ভারতে চলে যাবেন। এরপর উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজার সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় বাঙালি অফিসারেরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিবে, যেন এক ব্যাচ ধরা পড়লেও আরেক ব্যাচ গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারে। শেষপর্যন্ত ১৫ মে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় এসে পৌঁছান এ কে খন্দকাররা।

আগরতলায় পৌঁছানোর পরদিনই জেনারেল কলকাত সিংয়ের সঙ্গে ১৬ মে কলকাতায় গিয়ে  মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে দেখা করে প্রবাসী সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন এ কে খন্দকার। ১৯ বা ২০ মে দিল্লিতে  মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত এবং ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

মে মাসের শেষদিকে সিদ্ধান্ত হয় বিমানবাহিনী থেকে আগত বাঙালি অফিসাররা স্থলযুদ্ধে অংশ নিবে তাই তাদের বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হয়। এ কে খন্দকারকে দেয়া হয় ডিপুটি চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব। মুক্তিযোদ্ধারা তখন প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও অস্ত্রের অভাবে হিমশিম খাচ্ছিল। তখন এ কে খন্দকার প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ১০ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত কলকাতায় সেক্টর কমান্ডার কনফারেন্সের আহ্বান করা হয়। যেখানে  সেক্টরগুলো পুনর্গঠিত হয়। এ কে খন্দকারকে মুক্তিবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট, প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানোসহ অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথমদিকে গেরিলাদের ট্রেনিং এক মাসের হলেও পরবর্তীতে দুই সপ্তাহে নামিয়ে আনা হয়। যদিও তা পরবর্তীতে তিন সপ্তাহ করা হয়েছিল।

৯ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি সই হলে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ২ হাজারের পরিবর্তে ২০ হাজার করে মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান।

জুলাইর শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এ কে খন্দকারকে ডেকে পাঠান। সেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব কে বি লাল, ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল পি সি লালসহ ভারতীয় বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমদ এ কে খন্দকারকে বললেন, 'বিমান সাহায্যের বিষয়ে আপনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করতেই তারা এসেছেন। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান পি সি লাল তখন বলেন, 'আমাদের পক্ষে এখন বিমান দেয়া সম্ভব না। তবে যদি আপনাদের পাইলটেরা রাজি থাকে তাহলে আমাদের  স্কোয়ার্ডনের সাথে পরবর্তীতে অপারেশন করতে পারে।' এ কে খন্দকার তখন বললেন, 'তারা যদি আপনাদের স্কোয়ার্ডনের সাথে ফ্লাই করে তবে তারা কোন দেশের আইনকানুনের আওতায় আসবে?'

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এয়ার মার্শাল কেবি লাল বলেন, 'এটি সাধারণভাবেই ভারতীয় নিয়মকানুনের আওতায় পড়বে।' তখন এ কে খন্দকার তাজউদ্দীন আহমদকে বললেন, 'স্যার এটা সম্ভব না। কারণ অন্য দেশের আওতাভুক্ত হয়ে আমাদের পক্ষে অপারেশন করা অসম্ভব। আমি আবার অনুরোধ করবো তাদের কিছু প্লেন দিতে।'

পরবর্তীতে ভারতীয় বিমানবাহিনী  তিনটি প্লেন দিতে রাজি হয়েছেন। এর মধ্যে একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার, একটি বিভার, অন্যটি ডিসি থ্রি বিমান।  এরপর বিভিন্ন সেক্টর থেকে  বিভিন্ন সেক্টর থেকে ৫৮ জন বিমান সেনাকে কিলো ফ্লাইটের জন্য নিয়ে আসা হয় এর মধ্যে কিলোফ্লাইট দলে ছিলেন ১০-১২ জন পাইলট।

বাকিরা ছিলেন পিআইএ পাইলট, প্ল্যান্ট প্রোটেকশন পাইলট টেকনিশিয়ান সহ অন্যান্য। বিমান ও হেলিকপ্টারের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও জ্বালানি সরবরাহ করেছিল ভারতীয় বাহিনী। মুক্তিবাহিনীকে এয়ার ফিল্ড হিসেবে দেওয়া হয়েছিলো নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের পরিত্যাক্ত বিমানঘাঁটিতে। প্রশিক্ষণের সময় এ কে খন্দকার নিয়মিতই সেখানে উপস্থিত হতেন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অপারেশন কিলোফ্লাইট এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।মুক্তিবাহিনীর এই অপারেশনকে কিলোফ্লাইটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ কে খন্দকার। তার নামের আদ্যক্ষর কে থেকেই গড়া হয়েছিলো কিলো। টানা ৬৬ দিন দুরূহ অবস্থার  কঠোর প্রশিক্ষণের পর অপারেশন কিলো ফ্লাইটের প্রথম আক্রমণের দিন ২৮ নভেম্বর ধার্য হলেও পরবর্তীতে তা ৬ দিন পিছিয়ে ২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল।

অপারেশনের জন্য ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম ও কো-পাইলট ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ অটার বিমানটি নিয়ে ত্রিপুরার মণিপুরের কৈলাসহরে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে হামলা চালাবেন। অন্যদিকে স্কোয়াড্রন লিডার  সুলতান মাহমুদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বদরুল আলম অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারটি নিয়ে তেলিয়ামুরা থেকে রওয়ানা হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপোতে হামলা চালাবেন।

তারা দুর্ধর্ষ অপারেশনের করে ফিরে আসেন। একুই সঙ্গে  কো-পাইলট ও গানারসহ অটার বিমানটি নিয়ে শামসুল আলম চট্টগ্রামেও হামলা চালিয়েছিলেন।

এরপর পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে একত্রে ৫০টির বেশী অপারেশনে অংশ নিয়েছিল অপারেশন কিলো ফ্লাইট। প্রথমে  নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ঘাঁটি থাকলেও পরবর্তীতে শমসেরনগরে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। যদিও যুদ্ধ শেষের আগে তা আবার নেওয়া হয় আগরতলায়। অপারেশন কিলোফ্লাইটের মধ্য দিয়ে মোট ১২টি অপারেশন করেছিলেন বিমান সেনারা।

মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ ঠিক হলে মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানী ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু তিনি কলকাতায় না থাকায় এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রবাসী সরকার ঠিক করে  মুক্তিবাহিনীর জ্যেষ্ঠতম অফিসার হিসেবে  এ কে খন্দকার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর  ডিপুটি চিফ অব স্টাফ  গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার আত্মসমর্পণের সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল করিম খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি  রংপুর শহরে। তাদের পৈত্রিক বাড়ি ছিল পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়ার পর ১৯৪৭ সালে   মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরে যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে।

১৯৫২ সালে কমিশন পাওয়ার পরে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ফাইটার স্কোয়াড্রন পাইলট ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে দুবছর ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর  ১৯৫৮ সালে যুক্ত হন  ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে। এরপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীর নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।  ১৯৬৯ সালে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে এ কে খন্দকার দায়িত্ব পান ঢাকার পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বেইসের। মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এয়ার ভাইস মার্শাল পদোন্নতি পর ১৯৭৫ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত তিনি  বাংলাদেশ বিমান-এর চেয়ারম্যান ও ছিলেন।

পরবর্তীতে  ভারতে এবং অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছিলেন এ কে খন্দকার। ১৯৮৬ ও ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে তৃতীয় ও নবম সংসদ নির্বাচনে  দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব  পালন করেছিলেন আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তম।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র দশম খণ্ড

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস

১৯৭১: ভিতরে বাইরে, এ কে খন্দকার

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

4h ago