রেলখাতে অনিয়মের প্রতিবাদী রনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ

২ হাতে শিকল পরে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেশনের বাইরে প্রতিবাদী মহিউদ্দিন রনি। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা, সহজ ডট কম কর্তৃকযাত্রী হয়রানির প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে একাই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

আজ সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ২ হাতে শিকল পরে হাতে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। প্ল্যাকার্ডে লেখা 'বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী'।

গত ১১ দিন ধরে একাই এই অহিংস অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন রনি।

দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে রনি বলেন, '২-১ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে আমার দাবিগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেব। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আগামীকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রেল মন্ত্রণালয় পর্যন্ত লংমার্চ করবো। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি সরে যাবো না।'

আন্দোলনরত রনিকে মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আজ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাকে স্টেশনের ভেতরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার। পাশাপাশি আমাকে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।'

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। ছবি: স্টার

তবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের দাবি, 'রনিকে কোনো মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়নি। যাত্রীসহ সবার নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে স্টেশনের বাইরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া স্টেশনের ভেতরে কারো আন্দোলন করার অনুমতি নেই।'

মাসুদ সারওয়ারের দ্য ডেইলি স্টারকে আরও বলেছেন, রনির এই কর্মসূচী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হেয় করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

আন্দোলনরত মহিউদ্দিন রনির দাবিগুলো হলো—

১. টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

রনি বলেন, 'গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড (যাচাইকরণ কোড) আসার পর পিন কোড (গোপন কোড) ছাড়াই আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু তারাকোনো টিকিট দেয়নি এবং টাকা কেটে নেওয়ার কোনো ডকুমেন্টসও দেয়নি।'

তিনি দাবি করেন, 'সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে আমাকে বলা হয় "সিস্টেম ফল" করার কথা। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যোগাযোগ করতে বলা হয়৷ ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার টিকিট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।'

রনির কার্যক্রম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না এবং এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার।

তিনি বলেন, 'মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে আমার ৩ দিন কথা হয়েছে। তাকে আমি বলেছি তার দাবিগুলো লিখিত আকারে দিতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি লিখিত আকারে কোনো দাবি বা অভিযোগ দেননি।'

তার দাবিগুলো জানেন কি না এবং তার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তার দাবিগুলো জানি। কিন্তু লিখিত কোনো কিছু না পাওয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।'

স্টেশন ম্যানেজার বলেন, 'রনি ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ভোক্তা অধিকারের তো সময় লাগবে। রনি সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কোন উদ্দেশ্যে এসব করছেন তিনিই ভালো জানেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হেয় করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Divisions widen over July Charter’s status, implementation

Major political parties are divided over the July Charter’s implementation timeline

10h ago