খুলনায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ
এবার খুলনায় এক মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন কয়রা উত্তরচক আমিনীয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান।
একইসঙ্গে কয়রা থানায় এজাহার দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মীমাংসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই অধ্যক্ষ।
বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষক মাসুদুর রহমান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি জানান, গত সোমবার মাদ্রাসায় কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় ইউনুসুর রহমান, নিয়াজ হোসেন, মাসুদুর রহমান, মিলন হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রিয়াল, আমিরুল, অমিত মণ্ডল, রফিকুল গাজী, সাদিকসহ ১৫-২০ জন লোক তাকে জোর করে ধরে কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তফা আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে বাহারুল আমাকে গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে ফেলে চোখে, ঘাড়ে, কানে পিঠে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর সেখান থেকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানেও বেদম মারধর করা হয়।'
'এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে চেয়ারম্যান আমাকে মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। পরে কয়রা থানার এস আই মনিরুল ইসলাম আমাকে উদ্ধার করেন,' বলেন তিনি।
প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও পরে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অধ্যক্ষ জানান, তার মাদ্রাসাটি ঢাকার ইসলামিক অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটির আওতাভুক্ত। ৩ মাস আগে গত ১৩ মার্চ কলেজে সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান বাহারুল তার নাম প্রস্তাব করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের জোর করেছিল।
অধ্যক্ষ বলেন, 'বাধ্য হয়ে বাহারুলসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। তবে ইউনিভার্সিটি থেকে সেটা রিজেক্ট করে নতুন করে কমিটি দিতে বলা হয়েছিল।'
'পরে আমি মহারাজপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে আরেকটি কমিটি জমা দিই। তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়।'
অধ্যক্ষ বলেন, 'এরপর থেকেই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন।'
'সে আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। বলেছে, অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। না হলে এলাকায় ফিরতে পারবো না। থানায় জানালেও মামলা না নিয়ে, বিষয়টি মিটমাট করতে বলা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন মোস্তফা আব্দুল মালেক। অবসরে যাওয়ার পরে তিনি মাদ্রাসার সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সভাপতি না হতে পেরে, আমাকে সভাপতি করতে চান।'
'সেখানে অধিকাংশ শিক্ষকরা ক্লাস ঠিকমতো করে না, বাইরে ঘুরে বেড়ান। তারা দেখলেন, আমি যদি সভাপতি হই তবে সমস্যা, আমি নিয়ম কড়াকড়ি করি। সেজন্য তারা মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে আমার ইউনিয়নে মাদ্রাসার সভাপতি বানিয়েছেন,' বলেন তিনি।
সেদিনের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নিজেদের লোকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঠেলাঠেলি হয়েছিল। পরে তারা অধ্যক্ষকে আমার কার্যালয়ে এনেছিলেন। তখন আমি তার স্ত্রীকে খবর দিই। এরপর তাকে আমরা নিয়ে যাই। এটা আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করবো।'
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমি মারধরের কোনো ঘটনায় জড়িত নই। তিনি যদি এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারে, তবে আমি দোষ স্বীকার করে নেব।'
খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যক্ষ আমাকে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন পড়ে দেখি সেটা ক্রিমিনাল অকারেন্স। তাই তাকে মামলা করতে বলা হয়েছে।'
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অধ্যক্ষের স্ত্রী সাবিয়া সুলতানা কয়রা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএমএস দোহা বলেন, 'আমি ছুটিতে ছিলাম। এ ধরনের কিছু জানি না। অধ্যক্ষ থানায় কোনো এজাহার জমা দেননি।'
যোগাযোগ করলে খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, 'ঘটনাটি জানতে পেরেছি। কয়রা থানাকে আমি মামলা নিতে বলেছি।'
Comments