অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ চেষ্টার অভিযোগ

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ছবি: সংগৃহীত

সদ্য বিদায়ী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি ফেডারেল নির্বাচনের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২১ মে নির্বাচনের দিন তার চূড়ান্ত সংবাদ সম্মেলনের আগে জানতে পারেন যে, ক্রিসমাস দ্বীপের কাছে আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের একটি নৌকা শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

আশ্রয়প্রার্থী নৌকা আটকানোর বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করার জন্য স্কট মরিসন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তাদের চাপ দেন। তিনি এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন। তারা মনে করেন, এই নির্দেশনার মধ্যে জাতীয় স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ বেশি রয়েছে।

নৌকা ফেরত পাঠানো সম্পর্কে ভোটারদের কাছে টেক্সট বার্তাও পাঠানো হয়েছিল স্কট মরিসনের লিবারেল পার্টির পক্ষ থেকে। লিবারেল পার্টি হাজার হাজার ভোটারের কাছে টেক্সট বার্তা পাঠিয়েছিল, 'আজ লিবারেলকে ভোট দিয়ে আমাদের সীমানা সুরক্ষিত রাখুন' অনুরোধ করে।

মরিসন তখন ভোটারদের বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে একটি আশ্রয়প্রার্থী নৌকা আটকানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতের নৌকা বন্ধ করতে তাদের লিবারেল এবং জাতীয়তাবাদীদের ভোট দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমি সহজভাবে বলতে পারি, আমি এখানে এই নৌকা থামাতে এসেছি এবং যারা এই নৌকা থামাতে চায় না আমি তাদেরও থামাতে এসেছি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া বিবৃতি ও সেটি মিডিয়াতে প্রকাশ করার জন্য ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিবৃতিটি মিডিয়ায় প্রচার করলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বিবেচনায় কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ স্কট মরিসনকে লিখিতভাবে সেসময় জানিয়েছিল, আমরা কিছুই করতে পারি না। বৈধভাবে কিছুই না। তাই আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। বিভাগ মনে করেছিল, এটি নির্বাচনের ইস্যুতে পরিণত হতে পারে।

নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ স্বরাষ্ট্র বিভাগকে এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। গতকাল শুক্রবার তদন্তের ফল প্রকাশিত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কার্যালয় স্বরাষ্ট্র বিভাগকে নির্বাচনের দিন সন্দেহভাজন আশ্রয়প্রার্থী নৌকার ঘটনা প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা একটি মিডিয়া বিবৃতি প্রকাশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে সততার কাজ করেছে।

লেবারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল বলেছেন, 'বিষয়টি লজ্জাজনক, অসম্মানজনক এবং একটি সামরিক নেতৃত্বাধীন অভিযানকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন।'

তিনি আরও বলেন, 'অস্ট্রেলিয়াকে রক্ষা করা সাবেক সরকারের দায়িত্ব ছিল। পরিবর্তে তারা রাজনৈতিক লাভের জন্য সার্বভৌম সীমান্ত রক্ষাকারী প্রোটোকলগুলোকে ব্যবহার করেছে। তাদের ক্রিয়াকলাপ এই জটিল অপারেশনের অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে, এটিকে আরও কঠিন এবং বিপজ্জনক করে তুলেছে।'

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবৃতিটি সরাসরি সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার নির্দেশকে অস্বীকৃতির মাধ্যমে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অরাজনৈতিক চরিত্রটি সংরক্ষিত হয়েছিল।

হোম অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি মাইক পেজজুলোর তৈরি করা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউনিফর্মধারী অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্স (এবিএফ) এবং অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা, সেই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীরা, যখন অপারেশনটি সফল করেছেন তখন একটি মিডিয়া বিবৃতি প্রকাশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে সততার সঙ্গে কাজ করেছেন।

প্রতিবেদনটি নিশ্চিত করেছে যে, মরিসনের সংবাদ সম্মেলনের আগে সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিকভাবে কাজ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বিবৃতিটি 'নির্বাচিত সাংবাদিকদের' কাছে ইমেল করার অনুরোধ করেছিল।

স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিব মাইক পেজজুলো ২১ মে একটি নির্দেশনায় বলেছিলেন, 'কোনো অবস্থাতেই বিভাগটি নির্বাচিত সাংবাদিকদের কাছে গল্পটি ছেড়ে দেবে না।'

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন একটি নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনী তত্ত্বাবধায়ক আমলে তিনি অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এটি একটি জাতীয় সরকারের জন্য লজ্জাজনক এবং তিনি জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাজনৈতিক স্বার্থ অনুসরণ করেছেন, প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক কনভেনশনগুলোর প্রাসঙ্গিক বিধানগুলোর দুটি উপাদান সংশোধন করার জন্য বিবেচনা করতে পারে।

এগুলো হলো- তত্ত্বাবধায়ক কনভেনশনগুলো মন্ত্রীর দ্বারা বিঘ্নিত করা যাবে না এবং কর্মকর্তারা সর্বদা আইনসম্মত নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে বাধ্য। সংবেদনশীল তথ্য যা সম্ভাব্য রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তা তত্ত্বাবধায়ক সময়কালে জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত নয়, যদি না জীবনের জন্য হুমকি থাকে বা জননিরাপত্তা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্য কোনো জরুরি বিষয় জড়িত থাকে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

8h ago