আবেগ প্রকাশে ক্রিকেটারদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার বার্তা সুজনের

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুশফিকুর রহিমের সাম্প্রতিক দুটি পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে ছড়িয়েছে উত্তাপ। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্রামের আদলে আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে অসন্তুষ্ট তিনি। নাম উল্লেখ না করে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ওই পোস্টগুলো নিয়ে বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি জবাব দিয়েছেন, আবেগ প্রকাশে ক্রিকেটারদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তার মতে, পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে তোলার এখনই সময়।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে জিম্বাবুয়ে সফরের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ বা খাওয়া-দাওয়া এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়ানো ও উৎসাহ দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পায় সেখানে। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন টিম ডিরেক্টর সুজন।

সিনিয়রদের বাইরে রেখে তরুণদের নিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি দল সাজিয়েছে বিসিবি। বাজে সময় পার করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয়েছে নুরুল হাসান সোহানকে। সাকিব আল হাসান এই সফর থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছিলেন আগেই। নেতৃত্ব হারানোর পাশাপাশি দলেও জায়গা খুইয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তার পাশাপাশি জায়গা পাননি অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিক।

গত ২১ জুলাই ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে অনুশীলনের একটি ভিডিও পোস্ট করে মুশফিক ক্যাপশনে লেখেন, 'আসসালামু আলাইকুম সবাইকে… খুশি তখনই লাগে, যখন অধিকাংশ লোক ঘুমাচ্ছে এবং আপনি কঠোর পরিশ্রম করছেন।' এরপর ২৩ জুলাই নিজের আরেকটি ছবি পোস্ট করে মুশফিক ক্যাপশনে বেশ কিছু রহস্যময় ইমোজি ব্যবহার করেন। সেখানে তাকে সাজঘরের সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মুশফিক বোঝাতে চেয়েছেন যে বিসিবির দেওয়া বিশ্রাম উপভোগ করছেন।

মধ্যাহ্নভোজ শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলে সুজনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, ওই পোস্টগুলোর পর বাংলাদেশ দলে ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে তোলা সময়ের দাবি কিনা। উত্তরে তিনি বলেছেন, ঘরের খবর বাইরে গেলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে, 'আমি যেমন পেশাদার, আমার চাকরির খবর তো বাসায় যায় না বা আমার বাসার খবর তো চাকরির জায়গায় এসে জানাই না যে আজকে আমি আমার বউয়ের সাথে ঝগড়া করে আসছি। এখানে বিষয়টা একই রকম। আমরা কীভাবে পেশাদার হতে পারি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ক্রিকেট একটা পরিবার, এখানকার কথাগুলো বাইরে যাওয়াটাও একটা ভুল বার্তা দেয়। সেটা যে-ই দিচ্ছে বা যারা-ই দিচ্ছে, এটা ভালো না, স্বাস্থ্যকর না। আমরা এসব নিয়েও কথা বলেছি। আমার মনে হয় যে এটা আমাদের সময় যে সংস্কৃতি গড়ে তোলা।'

কেউ দল বাদ পড়লেও তাকে পেশাদার আচরণ করার বার্তা দিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার, 'আমি আজকে ছেলেদের একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছি যে পেশাদারিত্ব তৈরি করতে। আমাদের পেশাদার হতে হবে। আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। হ্যাঁ, আমাদের অনেকের মন খারাপ হতে পারে। বাদ পড়লে মন খারাপ হবে স্বাভাবিক। দলে ঢুকলে মন খুশি হয়। ভালো খেললে ভালো লাগে, খারাপ খেললে খারাপ লাগে। ক্রিকেট একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা, এখানে সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপটা আসে। আমরা কেন ভালো খেলি না? মানসিক দৃঢ়তার কারণেই তো এমন হয়? আমার কথা হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত এসব সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে পারব না, ততদিন পর্যন্ত ভালো একটা দল হয়ে উঠতে পারব না।'

সুজনের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, সিনিয়র ক্রিকেটাররা আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তাদের কাছ থেকে তরুণরা কী শিখবে? তিনি বলেছেন, খেলোয়াড়দের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে, 'আমি আসলে ওদিকে যেতে চাই না। মানুষই তো ভুল করে, ভুল থেকে শেখে। আমি মনে করি, আজকের পর থেকে এগুলো আর হবে না। সবাই দায়িত্বশীল, যারাই বাংলাদেশ দলে খেলে। তারা দেশের ক্রিকেটের আইকন, দেশের আইকন। যেমন নুরুল হাসান সোহানকে শুধু দেশে না, দেশের বাইরেও মানুষ চেনে। সুতরাং, তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝবে। খেলাটা শুধু মাঠের না, মাঠের বাইরেও অনেক খেলা আছে। সে জায়গাগুলোতেও আমাদের ভালোভাবে সামলে নিতে হবে, খুব সাবধানে সামলাতে হবে।।'

আগামী শনিবার হারারেতে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি। তার আগে ধাপে ধাপে দেশ ছাড়বে টাইগাররা।

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque alleges political obstruction in DSCC mayoral appointment

Announces establishment of 'Mayor's Cell' to monitor service delivery in the city

20m ago