চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ পালিত

চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' পালিত হয়েছে। এ সময় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন দাবি তোলা হয়।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' পালিত হয়েছে। এ সময় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন দাবি তোলা হয়।

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, 'উন্নয়নের নামে পর্যটন, ইকো পার্ক, সাফারি পার্ক, সামাজিক বনায়ন নামে ভূমি বেদখল করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।'

চট্টগ্রাম শহরে সকাল ১০টায় চেরাগী মোড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দুপুরে আলোচনা সভা হয়। বিকেলে পাহাড়ের জীবন বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক নাচ, গান ও নাটিকায় পরিবেশনা করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভু শিল্পীগোষ্ঠী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, 'অধিকারের জন্য যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও সেই অধিকার খর্ব করেছে। সংখ্যালঘু এবং "আদিবাসীদের" ভূমি উচ্ছে করে তাদের অধিকার হরণ করেছে।'

আবৃত্তি শিল্পী ও প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, 'পাহাড় ও সমতল নামে 'আদিবাসীরা' কখনো এই দেশে বিভক্তি চায় না। বরং বাংলাদেশে নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার চায়। মানবিক রাষ্ট্র, মানবিক সমাজ, সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে এবং যেদিন প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ বলতে কিছুই থাকবে না সেদিনই এসডিজির সফলতা আসবে।'

১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘ 'আদিবাসী দিবস' পালন করে আসছে। এ বছর দিবসটির স্লোগান হলো, 'ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে নারী সমাজের ভূমিকা'।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শোভাযাত্রা। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস'

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে শোভাযাত্রা হয়েছে। শোভাযাত্রাটি ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারে শেষ করে। পরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, 'আদিবাসী' শব্দ ব্যবহার না করার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং সংসদে প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে।'

এছাড়াও বক্তারা সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও উত্তর বঙ্গের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

সমাবেশে উত্তর বঙ্গ 'আদিবাসী ফোরামের' কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিংগু মুর্মু, জেলা কমিটির সভাপতি কর্নেলিউস মুর্মু, প্রদীপ হেমব্রম, কুটিলতা রাজোয়াড়, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাযহারুল ইসলাম, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধায় 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস'

প্রতিবাদী নাচ-গান, মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা পালন করেছেন 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস'। সমাবেশে তারা বলেছেন, সাঁওতালরা শোষণ বঞ্চনার মধ্যে থাকলেও বিচার পাচ্ছেন না।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ ও নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ, গাইবান্ধার যৌথ উদ্যোগে আজ সকাল ১১টায় গাইবান্ধা শহরের নাট্য সংস্থার সামনে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়।

এর আগে তারা তাদের অধিকার ও দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে গাইবান্ধা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। সাঁওতাল নারী-পুরুষরা প্রতিবাদী গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রিসিলা মুরমু, তৃষ্ণা মুরমুসহ সাঁওতাল নেতারা।

নেতারা বলেন, সারাদেশে সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন মানবাধিকার এবং জীবন মানের দিক থেকে নানাভাবে বঞ্চিত। এ কারণেই তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর থেকে পিছিয়ে পড়ছে। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এর সঙ্গে তাদের সংস্কৃতি ও ভাষাও বিলুপ্ত হচ্ছে। এরা বাংলাদেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী।

তারা আরও বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো জাতীয়তাবাদী ঘৃণার শিকার। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সাঁওতালরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। ওরকম একটি বীভৎস, অমানবিক ঘটনার আজও বিচার শুরু হয়নি। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের কেউ গ্রেপ্তার করে না। এ নিয়ে সাঁওতালরা আতঙ্কিত।

ময়মনসিংহে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' পালন

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আজ ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলেছেন, গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর নিপীড়ন চলছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের পর থেকে নিপীড়নের গতি বেড়েছে। এতে তারা নিঃস্ব ও দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষায় ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলোর মধ্যে আছে, সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের 'আদিবাসী' হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, তাদের জন্য জাতীয় সংসদে ৫ শতাংশ সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়া এবং শিক্ষা ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ বহাল রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, নারী নেত্রী ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিভিন্ন ফোরামের নেতা— অরণ্য ই, হিল্লোল নকরেক, অ্যাডভোকেট দীনেশ দারু, মুকুল দারু, বিপু বর্ষ রেমা, পিকলু রুগা, চম্পা বর্মণ ও দীপু রিছিল।

Comments

The Daily Star  | English
PM declares 12 districts, 123 upazilas free of homeless people

PM opens Hajj programme-2024

Prime Minister Sheikh Hasina today inaugurated the Hajj programme-2024 (Hijri 1445) at Ashkona Hajj Camp in the capital

1h ago