দেশে ইলেকট্রিক বাইসাইকেলের সম্ভাবনা

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করেই পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। অনেকে বিকল্প পরিবহনের কথাও চিন্তা করছেন। আজ আমরা বিকল্প পরিবহন হিসেবে ইলেকট্রিক বাইসাইকেল বা ই-বাইসাইকেল সম্পর্কে জানবো। 
ছবি: বাইসাইক্লিং.কম

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করেই পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। অনেকে বিকল্প পরিবহনের কথাও চিন্তা করছেন। আজ আমরা বিকল্প পরিবহন হিসেবে ইলেকট্রিক বাইসাইকেল বা ই-বাইসাইকেল সম্পর্কে জানবো। 

ই-বাইসাইকেল কী?

ই-বাইসাইকেল দেখতে সাধারণ বাইসাইকেলের মতো। তবে এতে বৈদ্যুতিক মোটর লাগানো থাকে, যা চালকদের রাস্তায় প্যাডেল করতে সহায়তা করে। বৈদ্যুতিক মোটরটি প্যাডেলে বুস্ট প্রদান করে বলে প্যাডেল ঘুরাতে সহায়তা করে। যা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই চালককে এগিয়ে নিয়ে যায়। বৈদ্যুতিক মোটরটি সাইকেলে লাগানো রিচার্জেবল ব্যাটারি থেকে শক্তি পায়।

ই-বাইসাইকেল চালানোর সুবিধা

ই-বাইসাইকেলগুলোর মোটরের কারণে দ্রুত চালানো যায়। এ ধরনের বাইসাইকেল সাধারণত ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারে।

সাধারণত ১০০ কেজি পর্যন্ত ভারী পণ্য বহন করার ক্ষমতা রাখে ই-বাইসাইকেলগুলো। যেহেতু এটি দ্রুত চলে, তাই প্রচলিত বাইসাইকেলের তুলনায় এতে দীর্ঘ ট্রিপ নেওয়া যায় এবং যার মাধ্যমে ভ্রমণের সামগ্রিক পরিসরও বৃদ্ধি পায়। ই-বাইসাইকেলে সহায়ক মোড অন থাকা অবস্থায়ও চালকরা কিছুটা ব্যায়াম করতে পারেন বলে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। 

ই-বাইসাইকেল ব্যবহারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও প্রয়োজনীয় সুবিধা হলো পরিবহন ব্যয় হ্রাস করা। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের অনেক মানুষের পরিবহন বাজেটকে প্রভাবিত করেছে। মানুষ যদি মোটরগাড়ির পরিবর্তে ই-বাইসাইকেল ব্যবহার করে, তাহলে তারা দীর্ঘমেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে। সামগ্রিকভাবে ই-বাইসাইকেলগুলো সুবিধাজনক। 

বিশ্বব্যাপী ই-বাইসাইকেলের চাহিদা

ইউরোপের দেশগুলো এবং চীনে দীর্ঘদিন ধরে ই-বাইসাইকেল ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলোও এট ব্যবহারেরে দিকে ঝুঁকছেন। 

সম্প্রতিকালে বিখ্যাত অডিট সংস্থা ডেলয়েট পরিচালিত এক গবেষণা অনুসারে, জার্মানিতে ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) কেনার ক্ষেত্রে ই-বাইসাইকেল এগিয়ে রয়েছে। ডেলয়েটের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৩০ মিলিয়ন ইউনিট বৈদ্যুতিক সাইকেল বিক্রি হবে। এ থেকে বোঝা যায় বৈদ্যুতিক বাইসাইকেল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও বৈদ্যুতিক বাইসাইকেল ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং গ্রামীণ এলাকায় এর ব্যবহার হলে চাহিদা আরও বাড়তে পারে।

কোথায় পাওয়া যায়, দাম কেমন?

সারা দেশে অনুমোদিত ডিলার পয়েন্টসহ অনেক দোকান রয়েছে, যেখানে ই-বাইসাইকেল পাওয়া যায়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দোকানের মধ্যে রয়েছে, গ্রিন টাইগার, ই-সাপ্লাই মার্ট ও অ্যাডভান্সড ডাইনামিক্স। যাদের বিশাল পরিসরের বৈদ্যুতিক সাইকেল রয়েছে। দোকানগুলোর ওয়েবসাইট এবং শোরুমের মাধ্যমে কিনতে পাওয়া যায়। 

দ্য ডেইলি স্টার একাধিক ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছে এবং তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি ই-বাইসাইকেলের চাহিদা বেড়েছে।

বেশিরভাগ ই-বাইসাইকেলই চীন থেকে আনা হয়। এগুলোর দাম ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, মনে রাখবেন, বিভিন্ন ই-বাইসাইকেলের দাম এবং প্রাপ্যতা দোকান অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

যেভাবে চার্জ করবেন

ই-বাইসাইকেল চার্জ দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ, যদিও এটি প্রথমে কিছুটা বিভ্রান্তিকর বলে মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে যে ব্যাটারিটি বন্ধ আছে। তারপর, সাইকেলের ব্যাটারি লক খুলে ব্যাটারি হ্যাচ খুলুন। ব্যাটারি সাধারণত সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যায়। চার্জিং অ্যাডাপ্টারটি সংযুক্ত করুন এবং অ্যাডাপ্টারের স্লটে পাওয়ার কর্ডটি ঢোকান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চার্জিং পোর্টটি ব্যাটারির ওপরের দিকে থাকে। চার্জারের সঙ্গে সংযুক্ত করে আপনি পাওয়ার কর্ডটি যেকোনো বিদ্যুতের আউটলেটের সঙ্গে প্লাগ করতে পারেন। চার্জিং শুরু হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে একটি দৃশ্যমান সংকেত, সাধারণত একটি সবুজ আলো দেখতে পাওয়া যায়অ ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জ করার প্রয়োজন হতে পারে।

ই-বাইসাইকেলের সঙ্গে সাধারণ বাইসাইকেলের পার্থক্য

সাধারণ বাইসাইকেল চালানো এবং ই-বাইসাইকেল চালানোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কার্যকরীভাবে এগুলো একইভাবে চলে। তবে, ই-বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে চালানোর আগে আপনাকে মূল মোটরটি স্যুইচ অন করে, কন্ট্রোলার এবং প্যাডেলের জন্য একটি সহায়তাকারী স্তর বেছে নিতে হয়। এই ফিচারগুলো ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং নিশ্চিত করে যে আপনি নিরাপদ গতিতে আছেন। 

তবে মনে রাখবেন যে, মোটর এবং ব্যাটারির অতিরিক্ত ওজনের কারণে, বৈদ্যুতিক সাইকেল চালানোর সময় সাধারণ সাইকেলের তুলনায় কিছুটা ধীর বলে মনে হতে পারে। কিছু ই-বাইসাইকেলের চওড়া টায়ার থাকে যেগুলো এর ওজন বাড়িয়ে দেয়। তবে ঘুরানো এবং গতি বৃদ্ধির সময় টায়ারগুলো আরও ভালো গ্রিপ প্রদান করে। এগুলোয় গতি কমানো বা থামানোয় সাহায্য করার জন্য ডিস্ক ব্রেকও রয়েছে। তবে এগুলোও সাইকেলে অতিরিক্ত ওজন যোগ করতে পারে।

ই-বাইসাইকেল কী বৈধ?

ইলেকট্রিক মোটর ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ট্রাফিক রেগুলেশনস-২০২১-এর খসড়া প্রস্তাবের ধারা ২.১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক সাইকেল চালানোর জন্য কোনো লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর অর্থ হলো, ব্যবহারকারীরা কোনো আইনি সমস্যা ছাড়াই রাস্তায় বৈদ্যুতিক সাইকেল চালাতে পারবেন।

এটা কি ঝুঁকিপূর্ণ?

অতিরিক্ত সুরক্ষা এবং ড্রাইভ সহায়তার কারণে বৈদ্যুতিক সাইকেল চালানো সাধারণ সাইকেলের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ হতে পারে। এমনকি উচ্চ গতি বৃদ্ধির সময় অতিরিক্ত ওজনের কারণে বৈদ্যুতিক সাইকেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং চারপাশে নেভিগেট করা সহজ। চলাচলের সময় অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি চলার জন্যেও এর যথেষ্ট গতি রয়েছে।

তবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নতুন চালক বা শহরের রাস্তায় সাধারণ সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা যাদের নেই, তাদের প্রতিদিন রাস্তায় ব্যবহারের চেষ্টার আগে এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। এ ছাড়া, চালানোর নিয়মাবলি সম্পর্কে সবসময় আপডেটেড থাকুন এবং সুরক্ষিত থাকার জন্য সর্বদা একটি হেলমেট ও পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ার পরিধান করুন।

ই-বাইসাইকেলের বিকল্প

আপনার যদি মনে হয় বৈদ্যুতিক সাইকেল আপনার জন্যে উপযুক্ত নয় তবে, বিকল্প হিসেবে সাধারণ বাইসাইকেল, বৈদ্যুতিক স্কুটার, সেগওয়ে এবং মোপেড বিবেচনা করতে পারেন।  

অনুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments

The Daily Star  | English

IMF agrees to lend $1.15 billion to Bangladesh in third tranche

The International Monetary Fund (IMF) has agreed to provide $1.15 billion to Bangladesh in the third instalment under its multi-billion-dollar loan programme.

1h ago