দীর্ঘ সময় পর মালিকের সঙ্গে দেখা হলে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে কুকুর: গবেষণা
আপনার কুকুরটি যদি হয় একটি হাউন্ড জাতের, মাঝেমধ্যে কেঁদে ওঠে--এর কারণ সম্ভবত তারা সে সময় আবেগে উদ্বেল হয়ে ওঠে।
জাপানের একদল গবেষক জানিয়েছেন, তারা গবেষণায় দেখেছেন মালিকদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলে কুকুরদের চোখ জলে ভরে ওঠে। তা ছাড়া, এই অশ্রুতে ভেসে যাওয়ার ব্যাপারটির সঙ্গে 'বন্ডিং হরমোন' অক্সিটোসিনের লেভেল বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে।
'এটাই প্রথম কোনো প্রতিবেদন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইতিবাচক আবেগে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণিও অশ্রুপাত করে এবং এই অশ্রুপাতের পেছনে কাজ করে অক্সিটোসিন--দাবি গবেষকদের।
'কারেন্ট বায়োলজি' জার্নালে প্রকাশিত লেখায় গবেষকরা তুলে ধরেছেন কীভাবে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে চোখাচোখি মানুষকে কুকুরের প্রতি যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করে। যেখানে কুকুরের একটি চাহনি এর মালিকের অক্সিটোসিন ক্ষরণের কারণ হতে পারে। কুকুরাও বিবর্তনের মাধ্যমে অর্জন করেছে তাদের ভেতরের দিকের ভ্রু নাচাতে পারার ক্ষমতা। এটা এমন এক অভ্যাস যা বিজ্ঞানীদের মতে মানুষকে তাদের প্রতি যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করে।
জাপানের গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, অশ্রুরও একইরকম ক্ষমতা থেকে থাকতে পারে।
আজাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলের একজন এ বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, 'আমার দুটো কুকুরছানা আছে, আর ৬ বছর আগে ছিল একটি গর্ভবতী কুকুর।'
তিনি লক্ষ করেছিলেন অন্য সময়ের তুলনায় তার কুকুরছানাগুলোকে আদর করার সময় তার মুখ হাসি-খুশি থাকে, কিকুসুই বুঝতে পারেন সে সময় তার চোখ ভরে উঠতো জলে।
'সেখান থেকেই আমার মনে হলো অক্সিটোসিন হয়তো অশ্রু আনে', তিনি বলেন, 'আমরা আগে দেখেছিলাম মিথস্ক্রিয়ার সময় কুকুর ও এর মালিক উভয়েরই অক্সিটোসিন নিঃসরণ হয়। তাই আমরা পুনর্মিলনের একটা পরীক্ষা করলাম।'
প্রথম ধাপে, এই দলটি শিমারের পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে মালিকের সঙ্গে বাড়ির স্বাভাবিক পরিবেশে থাকা অবস্থায় ১৮টি কুকুরের অশ্রুর পরিমাণ মাপেন। এই প্রক্রিয়ায় কাগজের বিশেষ একটি স্ট্রিপ তাদের চোখের নিম্নাংশের পাতায় স্থাপন করা হয় এবং মেপে দেখা হয় স্ট্রিপের কতদূর পর্যন্ত ভিজে গিয়েছে।
৫ ঘণ্টারও বেশি সময় আলাদা থাকার পর কুকুরগুলোর তাদের মালিকের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবার প্রথম ৫ মিনিটে ক্ষরিত অশ্রুর সঙ্গে দলটি এই প্রাপ্ত পরিমাণের তুলনা করে দেখেন।
গবেষকরা বলেন, বাড়িতে একাকী দিন গুজরান করার সময়ের তুলনায় তাদের মালিকের সঙ্গে আবার মিলিত হবার এ সময়টিতে কুকুরগুলো উল্লেখযোগ্য বেশি পরিমাণে চোখের জল ফেলে। যা হোক, এই বৃদ্ধি অবশ্য দেখা যায়নি, যখন ২০টি কুকুরকে একইভাবে পরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে আবার দেখা করানো হয়, যারা তাদের মালিক নন।
২২টি কুকুর নিয়ে করা আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, তাদের চোখে অক্সিটোসিন সমৃদ্ধ ড্রপ দিলে অশ্রুর পরিমাণ বাড়ে- যা অন্য আরেকটি অক্সিটোসিন মুক্ত ড্রপ ব্যবহার করে দেখা যায়নি।
এই দলটি এরপর ৭৪ জন অংশগ্রহণকারীর কাছে ৫টি কুকুরের ১০টি ছবি নিয়ে যায়, প্রতিটি প্রাণির ছিল সিক্ত চোখ অথবা শুকনো চোখের ছবি এবং তাদের বলা হতো প্রাণিগুলোকে কতটা পছন্দ করছেন বা এড়িয়ে যেতে চাইছেন তা একটি ফাইভ পয়েন্ট স্কেলের মাধ্যমে দলটিকে জানাতে।
কিকুসুই-এর মতে, প্রাপ্ত ফল থেকে দৃশ্যমান হয় যে, অশ্রুভেজা চোখের কুকুরগুলোকে শতকরা ১০-১৫ জন মানুষ বেশি পছন্দ করেছে। দলটির ভাষ্য, এতে করে বোঝা যায় অশ্রুসজল সারমেয়-চোখ মানুষের ভেতর এমন আবেগ জাগিয়ে তোলে।
গবেষকরা আরও জানান, কুকুরদের চোখের দৃষ্টি ব্যবহার করে মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা খুব উচ্চ-পর্যায়ের। যা অন্য প্রাণিদের থেকে ভিন্ন।
এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, তাদের অশ্রু সম্ভবত তাদের মালিকদের কাছ থেকে আগলে রাখা ও যত্ন নেওয়ার মতো আচরণ বের করে আনে, জানিয়েছেন তারা। এটি তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে পারে এবং মানুষ ও তার সঙ্গী কুকুরদের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে পারে।
তবে, কিকুসুই বলছেন, যদিও তাদের দল এটা দেখেছে যে, মালিকের সঙ্গে কুকুরদের পুনর্মিলনের সময় তাদের চোখ অশ্রুতে ভরে যায়, তারপরও এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখনো জানি না সারমেয়-সারমেয় পুর্নমিলনের সময় কুকুরদের চোখ অশ্রুতে ভরে কি না। আমরা এও জানি না কীভাবে কুকুরেরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চোখের জলের ব্যবহার করে।
'আমাদের সারমেয় অশ্রুর সামাজিক ভূমিকা স্পষ্ট করতে পারা প্রয়োজন', বলেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়
Comments