ফুল সাজানোর নান্দনিক পদ্ধতি ইকেবানা

ছবি: জাপান ওবজেক্টসের সৌজন্যে

পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি ফুল ভালোবাসেন না। এই ফুল, পাতা, শাখা- প্রশাখার শৈল্পিক সমন্বয়ের পদ্ধতি হলো ইকেবানা। এটি একটি জাপানিজ শিল্পকলা। জাপানিজ পরিভাষায় 'ইকারু' অর্থ উদ্ভাসিত, দীপ্ত আর 'বানা' অর্থ ফুল। ইকেবানা হলো শিল্পীর শৈল্পিক অভিপ্রায়, যা ফুলের বিন্যাসের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়। এ শিল্পকলা শুধুমাত্র ফুলদানিতে ফুল সাজানোর নয় বরং এর পিছনে লুকিয়ে আছে দার্শনিক ভাবধারা।

জাপানিজরা পুষ্পসজ্জাকে মূলত ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করে। সপ্তম শতকে পূর্বপুরুষদের বেদীতে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হতো তারই পরবর্তী রূপ ইকেবানা। ধীরে ধীরে এটি বৈঠকখানায় স্থান দখল করে নেয় গৃহের সৌন্দর্য বর্ধন করতে। তবে জাপানে ইকেবানা প্রবেশ করে চৈনিকদের হাত ধরে। চীন আর বৌদ্ধ দর্শনের সঙ্গে ফুলের বিন্যাস জড়িত। চীনারা ধর্ম প্রসারের উদ্দেশ্য জাপানে আসে ষষ্ঠ শতকে। ধর্মীয় রীতি পালনের ক্ষেত্রে ফুলের ব্যবহার ছিল বেশ। মন্দিরের পূজায় কে কত সুন্দর ফুল সাজাতে পারেন সেটি নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতা। প্রথম দিকে খুব সাধারণ কাজ হলেও এটি এক সময় শৈল্পিক রূপ নেয়।

ছবি: জাপান ওবজেক্টসের সৌজন্যে

বাংলাদেশেও রয়েছে ইকেবানা নিয়ে সংগঠন। বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিনুর বেবী বলেন, 'ফুল সাজানো একটি ধ্যান। এটি একটি সৃজনশীল কাজ আরেকটা কবিতা লেখার মত কিংবা গান গাওয়ার মত। এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে আপনার ভেতরের সৌন্দর্য।

ইকেবানার প্রাথমিক বিন্যাস ছিল খুবই সাধারণ। ইকেবানার সজ্জার মূলমন্ত্র বৌদ্ধধর্মের 'মিনিমালিজম। ফুল, পাতা, ডালপালা বা শাখা দিয়ে বিন্যাস করা হত। ধীরে ধীরে এতে ছোঁয়া পায় শিল্পীর মনের। খুব জাঁকজমকতা নয় তবুও এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। কথিত আছে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুরোমিচি শাসনকালে কিয়োতোতে রোক্কাকু-ডো চোহো জি নামক একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুক ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইকেবানা শিল্পী। তার হাত ধরে প্রথম ই-কে বানার ক্লাসিক্যাল রীতি গড়ে উঠে যা ইকেবানা নামে পরিচিত। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে এর উপর একটি বই লেখেন 'শেনো ক্যবদেন'। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি জাপানি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে এবং একে কেন্দ্র করে শতাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে।

ছবি: জাপান ওবজেক্টসের সৌজন্যে

শাহীনুর বেবী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি শিখে হয়ত আপনার সরাসরি অর্থনৈতিক উপকার আসবে না, তবে মনে প্রশান্তি আসবে।'

ধরন আর উপযোগ ভেদে সজ্জাও হয় ভিন্ন ভিন্ন।

ইকেবানার ধরন ও বিন্যাস

ইকি: এর অর্থ 'সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য'। এটি ফুল সাজানোর সবচেয়ে সরল বিন্যাস।

মোরিবানা: এর অর্থ 'স্তূপকৃত'। ফুল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানগুলো এক প্রকার নিচু ও অগভীর পাত্রে সাজানোই হলো মোরিবানা।

নাগেইরে: নাগেইরে অর্থ 'নিহিত করা'। এই পদ্ধতিতে ফুল প্রাকৃতিক সমতল বিন্যাসে সাজানো হয়।

রিক্কা: এই পদ্ধতিটির নামের অর্থ 'দাঁড় করানো ফুল'-এই পদ্ধতিতে প্রকৃতির একটি চিত্র তুলে ধরার জন্য ৭ রকমের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলক এটি ভাবে জটিল।

শোকা: এটি পদ্ধতি মূলত আধ্যাত্মিক জীবনের মূর্ত প্রতীক।

শীন: একটি মাত্র কাণ্ডকে ব্যবহার করা হয়। এটিকে স্বর্গের প্রতীক মনে করা হয়।

সোয়ী: মানুষের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত একটি কাণ্ড।

তাই: পৃথিবীকে মূর্ত প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত একটি কাণ্ড।

মূলত জীবন্ত ফুল দিয়েই এই শিল্পকর্মটি করা হয়। তবে যান্ত্রিক এই যুগে কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহারও দেখা যায়। ঘরকে রুচিশীল রূপ দিতে কিংবা মনের খোরাক যোগাতে ইকেবানা কে স্থান দিতে পারেন আপনার অন্দরমহলে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-CEC Habibul Awal calls 2024 polls ‘farcical’

‘If I am not allowed to justify myself, then shoot me,’ Awal lashes out in court

38m ago