ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়া

রানি এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মরণে সিডনি অপেরা হাউস। ছবি: রয়টার্স

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ায় আবার নতুন করে প্রজাতন্ত্রের দাবি উঠেছে।

প্রজাতন্ত্র আন্দোলন এর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং ও ম্যালকম টার্নবুলের সময় তীব্র হয়েছিল।

১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় 'ইয়েস ভোট' হয়। তখন রানি অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন। জনগণ রানিকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

রাজপরিবার প্রজাতন্ত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পছন্দ অস্ট্রেলিয়ার ওপর ছেড়ে দিয়েছিল।

কমনওয়েলথের ৫৪ দেশের মধ্যে মাত্র ১৫ দেশের প্রধান হিসেবে আছে ব্রিটিশ রাজা বা রানি। সংখ্যাটি আগামীতে আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

গত বছর বার্বাডোস প্রজাতন্ত্র হয়ে রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়।

গায়ানা, ত্রিনিদাদ, টোবাগো, ডোমিনিকা ও ফিজি ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রজাতন্ত্র হয়।

কমনওয়েলথ দেশ জ্যামাইকা ২০২৫ সালের মধ্যে প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

জ্যামাইকান পার্লামেন্টে বিরোধীদলের নেতা মিকেল ফিলিপস বলেছেন, রানির মৃত্যু দেশটির প্রজাতন্ত্রে রূপান্তর তরান্বিত করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানিকে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়। তবে, অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ভূমিকা নেই। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাজা বা রানি দেশটির গভর্নর জেনারেলকে নিয়োগ দেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটেনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

অস্ট্রেলিয়ান সংবিধান গভর্নর জেনারেলকে রাজা অথবা রানির পক্ষে কাজের কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনে রাজকীয় সম্মতি প্রদান ও ফেডারেল নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা।

এই ক্ষমতাগুলো গভর্নর জেনারেল প্রয়োগ করলেও বাস্তবে তা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পরামর্শে করা হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় শোক প্রকাশের মধ্যে প্রজাতন্ত্রের আহ্বান আবার নতুন করে সামনে আসে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার এখন রাজতন্ত্র থেকে সরে যাওয়ার সময়।

অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্টের বর্তমান নেতৃত্ব বিশ্বাস করে যে, রানির মৃত্যু কিছু পরিবর্তন আনবে। তাদের বিশ্বাস, অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি গণভোট হতে পারে। আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশটি প্রজাতন্ত্র হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্টের প্রধান ড. পিটার ফিটজসিমন্স বলেন, 'রাজা তৃতীয় চার্লস প্রয়াত রানির মতো গভীর শ্রদ্ধা ও আনুগত্য আশা করতে পারেন না।'

'রিয়েল রিপাবলিক অস্ট্রেলিয়া' আন্দোলনের মুখপাত্র লিন্ডসে মার্শাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গণভোটের বিশদ বিবরণের প্রস্তাব করে আগামী মাসে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল গ্রিনস'র নেতা অ্যাডাম ব্যান্ড রানির মৃত্যুতে শোক বার্তা দিয়ে প্রজাতন্ত্রের জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, 'রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ শান্তিতে বিশ্রাম নিন। অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আদিবাসী জনগণের সঙ্গে চুক্তি দরকার। আমাদের প্রজাতন্ত্র হতে হবে।'

লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির রাজনীতি, মিডিয়া ও দর্শন বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. জেরাল্ড রোচে বলেন, 'প্রজাতন্ত্রের দাবি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠা মালয়েশিয়া ও ভারতের মতো প্রতিবেশীদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তারা অনেক আগেই ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসেছে।'

ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফেলো অধ্যাপক রবিন ব্যাটারহ্যাম বলেন, 'কমনওয়েলথ থেকে সরে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, অস্ট্রেলিয়ার সমাজে ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক প্রভাবগুলো হারাতে হবে৷'

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া প্রজাতন্ত্র হলে অনেক আগেই স্বাধীনতা হওয়া দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।

ব্রিটিশরাজের প্রতি মানুষের আবেগের পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক দশক আগেও রাজন্যবর্গের অস্ট্রেলিয়া পরিদর্শনের সময় দর্শনার্থীর ভিড় হতো। এখন আগের মতো ভিড় জমে না।

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় সার্বজনীন শোকের প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু, আদিবাসীসহ অন্য কয়েকটি সম্প্রদায় তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

সিডনির ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির আদিবাসী অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক স্যান্ডি ও'সুলিভান বলেছেন, 'রানি ঔপনিবেশিকতা ও ঔপনিবেশিকতার প্রভাবের পথিক ছিলেন না, ছিলেন এর স্থপতি।'

তিনি আরও বলেন, 'কেনিয়ার মতো জায়গায় উপনিবেশবাদবিরোধীদের দমনে রানি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। উপনিবেশের লোকদের কাছ থেকে লুট করা সম্পদের ওপর ভিত্তি করে তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেছিলেন।'

'যিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের কষ্ট থেকে লাভবান হয়েছেন তার জন্য শোক করার আশা অনুচিত,' যোগ করেন তিনি।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্র সব সময়ই এই অবস্থান নিয়েছে যে 'অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো কমনওয়েলথ দেশে প্রজাতন্ত্র বিতর্ক সেই দেশের জনগণের বিষয়।'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

46th BCS written exam postponed amid protests

Md Zahirul Islam Bhuiyan, a PSC member, announced in front of the protesters that the scheduled date for the 46th Bangladesh Civil Service written exam (May 8) would be postponed

1h ago