স্বপ্না-কৃষ্ণার ঝলকে ভারতকে গুঁড়িয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
কৃষ্ণা রানি সরকার গোল করলেন, গোল করালেন। সিরাত জাহান স্বপ্না বারবার প্রতিপক্ষ ডিফেন্সে হানা দিয়ে আদায় করেন জোড়া গোল। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে পাওয়া গেল সেরা ছন্দে। মেয়েদের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতে গুঁড়িয়ে দিয়ে জিতল বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল। বাংলাদেশের হয়ে দুই গোল করেন স্বপ্না, আরেক গোল এসেছে কৃষ্ণার পা থেকে।
'এ' গ্রুপের ম্যাচটি ছিল গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইও। আগের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের সামনে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান যেখানে ৫৮ নম্বরে। বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১৪৭তম। কিন্তু খেলা দেখে র্যাঙ্কিং মনে হলো উল্টো। নারীদের সিনিয়র ফুটবলে এই প্রথমবার ভারতকে হারাল বাংলাদেশ।
এই ম্যাচ জিতে গ্রুপ সেরা হওয়ায় সেমি ফাইনালে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল ভূটানকে পাবে বাংলাদেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে যাওয়ার পথ তাই অনেকটা সুগোম সাবিনাদের।
প্রথম মিনিট থেকেই ম্যাচের দাপট ও নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। আক্রমণে শুরু থেকেই ধার দেখানো বাংলাদেশ ৭ মিনিটে ভারতের জালে বল ঢুকিয়েছিল। তবে ফাউলের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
তবে গোল পেতে দেরি হয়নি। ১২ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণে সাবিনা পাস বাড়ান বা দিকে থাকা কৃষ্ণাকে। কৃষ্ণা বল ধরে দারুণ পাস বাড়ান স্বপ্নকে। স্বপ্না নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতেন।
সমতায় আসতে মরিয়া ভারত ১৯ মিনিটে বক্সের বাইরে বিপদজনক জায়গা থেকে ফ্রি কিক পেয়েছিল। তাদের নেওয়া শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
তিন মিনিট পরই আবার ভারতকে স্তব্ধ করে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। ২২ মিনিটে বা প্রান্তে থ্রোয়িং থেকে তৈরি হওয়া বল ধরে কৃষ্ণা টোকা মেরে স্বপ্নকে পাস দিয়েই ভেতরে ঢুকে যান। স্বপ্নার কাছ থেকে ফিরতি বল নিয়ে আড়াআড়ি শটে দারুণ গোল করেন কৃষ্ণা।
প্রথমার্ধের বাকিটা সময় খেলা কিছুটা মন্থর হয়ে যায়। তবে ভারতকে কোন সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশের ডিফেন্স। আঁখি খাতুনদের পজিশন সেন্স ছিল প্রখর। ভারতের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের তেমন কোন স্পেস দেননি তারা।
বিরতির পর ৪৭ মিনিটে ডিফেন্স ভেদ করে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল ভারতের। তবে গোলরক্ষক রুপনা চাকমার দক্ষতায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
৬ মিনিট পরই আবার আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। ৫৩ মিনিটে সাবিনার ডিফেন্স চেরা পাস ধরে ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে যান স্বপ্না। তার নেওয়া নিখুঁত শটে তিন গোলে এগিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে দেয় বাংলাদেশকে।
ম্যাচের বাকিটা সময় ওই তিন গোল ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশের মেয়েরা। ভারত আক্রমণের চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের ডিফেন্সে খেই হারায় তারা। প্রতি আক্রমণে উল্টো আরও কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। সেসব কাজে না লাগলেও বড় জয় নিয়েই আসর মাত করল বাংলাদেশ।
Comments