লামায় পাহাড়িদের উচ্ছেদে তৎপর রাবার কোম্পানি, ৩৬ নাগরিকের উদ্বেগ

বান্দরবানের লামা উপজেলার ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ তৎপরতায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৩৬ নাগরিক।
লামা উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৭ এপ্রিল ২০২২। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলার ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ তৎপরতায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৩৬ নাগরিক।

গত এপ্রিলে লামার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তখন পাহাড়িদের পানীয় জলের ঝিরিতে বিষ দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছিল।

সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেখানে একজনের ৩০০ কলাগাছ কেটে ফেলা হয় ও বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ এপ্রিল লামা উপজেলার লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র কারবারী পাড়া ও রেংয়েন কারবারী পাড়ায় প্রায় ১০০ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন গাছ পুড়িয়ে দাওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে। এর পর গত ৬ সেপ্টেম্বর সেখানে পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ি ঝিরিতে বিষ মেশানো হয়। সেখান থেকে আর পানীয় জল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাবার কোম্পানির লোকেরা গত ১ সেপ্টেম্বর লাংকম ম্রোসহ চার জন ম্রোর চাষ করা খেত থেকে ২৫ মণের বেশি মিষ্টি কুমড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর রেং ইয়ুং ম্রোর বাগানে রোপণ করা ৩০০ কলাগাছ কেটে দেয়। আগের ঘটনাগুলোতে পুলিশ বা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা এখন অভিযোগ জানাতেও ভয় পাচ্ছেন। অথচ কোম্পানির মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বেশ তৎপরতা ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জমি দখলমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি; বরং পরিবার প্রতি মাত্র ৫ একর জায়গা নিয়ে বাকি জায়গা রাবার কোম্পানিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গত কারণেই পাহাড়িরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাবার কোম্পানিটি তাদের নামে ১৬০০ একর সম্পত্তি লিজ থাকার কথা দাবি করলেও বাস্তবে তারা অনেক বেশি জমি দখলে রেখেছে।

আইন লঙ্ঘন করে ৬৪ জন অংশীদার মিলে রাবার কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, লিজ নেওয়া জমিতে ২৫ বছরেও রাবার গাছ রোপণ করা হয়নি। বান্দরবন জেলা পরিষদের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এটা উঠে এসেছে। তারা লিজ বাতিলের সুপারিশ করলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি।

রাবার কোম্পানির ৬৪ জন শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বান্দরবানের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ফলে লীজ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবারের একাধিক সদস্য ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ২৫ একর করে ভূমি লীজ পেয়েছেন।

বিবৃতি দাতারা বলেন, ম্রো এবং ত্রিপুরাদের ভূমিসহ সকল আইনি ও প্রথাগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রতারণামূলকভাবে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেওয়া লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির লিজ বাতিল করতে হবে। এ লিজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

রাবার কোম্পানিটি যেসব অপরাধ করেছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি; সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক; আনু মুহাম্মদ, সাবেক অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; অ্যাড. জেড আই খান পান্না, সভাপতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ড. আবুল বারকাত, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপদেষ্টা, এইচডিআরসি; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি); ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিব; রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক; ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী; জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা; ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট; মো. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী; ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এড. পারভেজ হাসিম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ফারাহ তানজীন তিতিল, শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; লেলুং খুমি, আদিবাসী অধিকার কর্মী; হানা শামস্ আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী; মাহমুদ রহমান, আলোকচিত্রী

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

8h ago