‘মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে-পাবে, তবে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান পরিস্থিতির কারণে মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের কিছু সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, তার মানে এই না যে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, পাবে।

আজ বুধবার সকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, সবার জন্য আমরা বিদ্যুৎ দেবো। আমরা কিন্তু আমাদের কথা রেখেছি। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি এবং আমরা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে পেরেছি। তবে বর্তমান বিশ্বে যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে, যুদ্ধাবস্থা, তার ওপর কোভিড এবং সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতি; যার ফলে এখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারাও প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। আমরাও, বাংলাদেশ সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। কারণ পৃথিবীটা এখন হচ্ছে একটা গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তার ধাক্কাটা কিন্তু আমাদের ওপরও এসে পড়ে। তাই আমাদের কিছু সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, তার মানে এই না যে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, পাবে। তবে এখানে সবাইকে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে।

তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে। আমরা বাধ্য হচ্ছি বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। কারণ যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, তার ওপর স্যানকশন, এই স্যানকশন দেওয়ার ফলে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি, পৃথিবী এ রকম একটা অবস্থা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবে।

আমরা চাই, আমাদের দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি। সে জন্য আমরা যেমন একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেটা গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করছি। বিশেষ করে রূপপুর পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ; যেখানে চিরদিন মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। এই যে আশ্বিন-কার্তিক মাস এলেই সেখানে দুর্ভিক্ষ হতো। এখন সেগুলো আমরা দুর্ভিক্ষমুক্ত করতে পেরেছি কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের জন্য...এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তখন সেখানে মানুষের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে তাদের কর্মসংস্থানের। আর্থ-সামাজিক আরও উন্নতি হবে। এটা হলো বাস্তবতা। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে পারে; জাতির পিতা তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, 'কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না'। আসলে বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারেনি, পারবেও না। যেখানে সারা বিশ্বে এখন আপনারা দেখবেন, অনেক উন্নত দেশ, সেখানে মানুষের খাদ্যের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখনো কিন্তু সে পরিস্থিতি হয়নি। আমরা কিন্তু মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সাবসিডি দিয়েও ১ কোটি মানুষের জন্য বিশেষ কার্ড করে তাদের ন্যায্য মূল্যে খাবার কেনার সুযোগ করে দিচ্ছি। যারা একেবারে কিনতে পারে না তাদের বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি। আমরা যেমন কোভিড মোকাবিলা করেছি আর এ পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে পারবো। সেখানে যে যা-ই বলুক না কেন! অনেকে সমালোচনা করবে সেটা আমরা জানি। ওদিকে কান দিলে চলবে না। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি যে দায়িত্বটা আমরা পালন করে যাব।

২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। হয়তো ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম যে ইউনিট সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটও চালু হওয়ার আশা রাখি। পরামাণু শক্তি থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে; এখন যেমন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, আমাদের কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো রকম ইমিশন হবে না। কোনো রকম পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে না। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা মানুষকে দিতে পারবো। আমরা এখনো আমাদের দেশটাকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করে চলছি কিন্তু পরামাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেটা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হবে। এটা আমাদের দেশে কোনো রকম ক্ষতিই করবে না। বরং আমাদের দেশের মানুষ খুব স্বচ্ছ একটা বিদ্যুৎ পাবে। যে বিদ্যুৎ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে যাবে। প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ এবং দ্বিতীয় ইউনিট মিলে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করবে। সেটাও আমাদের জন্য কম কথা নয়। এত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা আমাদের দেশের দারিদ্র্যমুক্তি, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে বিরাট অবদান রেখে যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan minister denies nuclear body meeting after offensive launched on India

"No meeting has happened of the National Command Authority, nor is any such meeting scheduled," he told ARY TV.

16m ago