সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিধান দ্রুত চালু করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। ছবি: সংগৃহীত

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিধান দ্রুত চালু করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে নগরীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সক্রিয় করার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে আসলেও নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সড়কে প্রায় ৮ হাজারের বেশি প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এই তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ আহত হচ্ছে। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি ১৭ বছরের কম বয়সী শিশু।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছে কেবল সড়ক দুর্ঘটনায়। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে মারা যায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জন।

সংস্থাটির তথ্য মতে, হতাহতদের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। সংস্থাটির দাবি, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জিডিপির ক্ষতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। বুয়েটের এআরআইয়ের হিসাব বলছে, গত ৩ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা যদি নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেটিকে জনসংখ্যার বোনাস বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। বাংলাদেশ এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের জন্য গর্ব করে। সড়ক দুর্ঘটনা এ গর্বের জায়গাতেই বেশি আঘাত হানছে।'

'পুলিশের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহতদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। সেই হিসেবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবার এই পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিদার,' বলেন তিনি।  

তিনি আরও জানান, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এ গঠিত সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা তহবিল হতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও আহত ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান থাকলেও আইন কার্যকরের ৩ বছরের মাথায় এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের কার্যক্রম আজো শুরু করা হয়নি।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম চালুর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সক্রিয় করার দাবী জানান।

সম্মেলেনে আরও বক্তব্য রাখেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ সভাপতি তাওহিদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মনজুর হোসেন ইশা, সেইফ ড্রাইভের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল কাইয়ুমসহ আরও অনেকে।

Comments