বিশ্ব আসরে আবারও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের চমক

ছবি: এএফপি

এমন ম্যাচের সমাপ্তি এভাবে হবে তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ইংল্যান্ড। বেরসিক বৃষ্টিতে ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারতে হলো তাদের। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরেও ইংলিশদের বিপক্ষে জয়ের চমক দেখাল আয়ারল্যান্ড।

বুধবার মেলবোর্নে সুপার টুয়েলভের এক নম্বর গ্রুপের ম্যাচে নাটকীয় জয় পেয়েছে আইরিশরা। টস হেরে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডকে ১৫৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নির দল। জবাবে শুরু থেকে উইকেট হারিয়ে চাপে থাকলেও মঈন আলির ব্যাটে আশা দেখছিল ইংলিশরা। কিন্তু বৃষ্টি বাগড়া দেওয়ায় সময় পেরিয়ে যায় খেলার। ফলে ডি/এল পদ্ধতিতে ৫ রানের ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আয়ারল্যান্ড।

খেলা বন্ধের সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১৪.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ১০৫ রান। কিন্তু জেতার জন্য তাদের সংগ্রহ থাকতে হতো ১১১ রান। সেসময়ের পার স্কোর ১১০ রান হওয়ায় ৫ রানে হার মানতে হয় জস বাটলারের দলকে।

আইরিশদের স্মরণীয় জয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক ব্যালবার্নি। ৬২ রানের ম্যাচসেরা ইনিংস খেলেন তিনি। ওপেনিংয়ে নেমে ৪৭ বল মোকাবিলায় মারেন ৫ চার ও ২ ছক্কা। পরে বল হাতে দলকে দারুণ শুরু পাইয়ে দেন বাঁহাতি পেসার জস লিটল। তার তোপে দ্রুত ফেরেন দুই ওপেনার বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস। এই চাপ মঈন ছাড়া অন্য কেউ সামলে নিয়ে রানের গতি বাড়াতে পারেননি।

মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাঁহাতি পেসার জশ লিটল কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন ইংলিশ অধিনায়ক বাটলারকে। শূণ্য রানে ফিরে যান মারকুটে ওপেনার। স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ না করেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

তৃতীয় ওভারে আবারও আঘাত হানেন লিটল, শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। ফেরার আগে নিজের নামের পাশে মাত্র সাত রান যোগ করতে সক্ষম হন তিনি।

বিপদ এরপরও পিছু ছাড়েনি ইংল্যান্ডের, পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আরেক আইরিশ পেসার ফিওন হ্যান্ডের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান বেন স্টোকস। মাত্র ২৯ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাটলারের দল। 

এই ম্যাচে ডকরেল নিজেকে দুর্ভাগা দাবি করতেই পারেন। তার ১১তম ওভারের প্রথম বলে লং অনে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলেন অ্যাডায়ার। পরের বলে আবারও ক্যাচ মিস, এবার ডেভিড মালানকে ফেরানোর সুযোগ হারান গ্যারেথ ডিলানি। 

তবে শেষ পর্যন্ত সাফল্য ঠিকই ধরা দেয় ডকরেলের হাতে, ওভারের পঞ্চম বলে আবারও তাকে সীমানাছাড়া করতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ব্রুক। এবার আর কোন ভুল করেননি ডিলানি, দারুণ ক্যাচ নিয়ে ঘোচান আক্ষেপ। ২১ বলে ১৮ রান করে ফিরে যান ব্রুক। 

তার বিদায়ে ক্রিজে আসেন ইংল্যান্ডের তুরুপের তাস মঈন আলি। এদিকে অপর প্রান্তে রান বলে ব্যবধান কমাতে সংগ্রাম করেই চলছিলেন মালান। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ব্যারি ম্যাকার্থিকে পুল করতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৭ বলে ৩৫ রান করা এই ওপেনার।

তবে এরপরই ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরাতে শুরু করেন মঈন। ডিলানির ১৫তম ওভারের প্রথম তিন বলেই একটি করে ছক্কা-চারে ১২ রান নিয়ে ফেলেন তিনি। তবে এরপরই আবারও হানা দেয় বেরসিক বৃষ্টি, মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ক্রিকেটাররা। আর তাতেই ইতিহাস লিখে ফেলে আইরিশরা।   

মাত্র ১২ বলে ২৪ রান করি ক্রীজে ছিলেন মঈন, সঙ্গে ছিলেন আরেক ধ্বংসাত্মক ব্যাটার লিয়াম লিভিংস্টোনও। তবে শেষ পর্যন্ত আক্ষেপই সঙ্গী হলো তাদের। ৪৭ বলে ৬২ রানের অধিনায়কোচিত ফিফটি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন বালবার্নি। 

এর আগে বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই মাঠে গড়ায় খেলা। টসে জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। ব্যাট হাতে দলকে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুই আইরিশ ওপেনার কিন্তু মার্ক উড ভেবে রেখেছিলেন ভিন্ন কিছু। তার ১৫০ কিলোমিটার গতির বলে নাস্তানাবুদ হন পল স্টার্লিং, ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন ৮ বলে ১৪ রান।

এরপর দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখান আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক বালবার্নি। লরকান টাকারকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন মাত্র ৫৭ বলে ৮২ রানের জুটি। তাদের এই জুটিতেই বড় সংগ্রহের ভিত পায় আইরিশরা।

ইংলিশ বোলারদের ওপর ছড়ি ঘরিয়ে ১১ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ৯৭ রান তুলে ফেলে বালবার্নির দল। তবে পরের ওভারেই রান আউটের ফাঁদে পড়েন টাকার, সমাপ্তি ঘটে ২৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংসের।

পরের ওভারে আবারও বিপদ নেমে আসে আয়ারল্যান্ডের ওপর, কোন রান না করেই আউট হয়ে যান হ্যারি টেক্টর। আদিল রশিদের ১৪তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ব্যাক্তিগত অর্ধশতক স্পর্শ করেন বালবার্নি। তবে ১৬তম ওভারে পরপর দুই বলে বালবার্নি ও ডকরেলকে ফিরিয়ে আইরিশদের বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা গুড়িয়ে দেন লিভিংস্টোন।

এরপর প্রতি ওভারে উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারে ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। তিনটি করে উইকেট নিয়ে আইরিশদের অলআউট করার মূল কৃতিত্ব উড ও লিভিংস্টোনের।

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

2h ago