নাটকীয় লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১ রানে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের চমক

ছবি: এএফপি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও ম্যাচ হেরেছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও একই পরিণতি হলো বাবর আজমের দলের। শেষ বলে তাদের জিততে দরকার ছিল ৩ রান। তবে তারা দৌড়ে ১ রানের বেশি নিতে পারল না। নাটকীয়তায় ভরপুর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হারের যন্ত্রণায় পুড়তে হলো পাকিস্তানকে, জিম্বাবুয়ে দেখাল চমক।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচে পার্থে আগে ব্যাট করে পাকিস্তানকে ১৩১ রানের সাদামাটা লক্ষ্য দেয় জিম্বাবুয়ে। মোহাম্মদ ওয়াসিম ও শাদাব খান মিলেই নেন ৭ উইকেট। কিন্তু রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সহজ লক্ষ্য পেরিয়ে শেষ হাসি হাসতে পারেনি পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে পুরো ওভার খেলে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করতে পারে তারা। সিকান্দার রাজার ৩ উইকেট ও বাকিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১ রানের স্মরণীয় জয় পায় জিম্বাবুয়ে।

শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের করতে হতো ২৯ রান। ১৮তম ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানি দেন মাত্র ৭ রান। পরের ওভারে রিচার্ড এনগারাভাকে ছক্কা হাঁকিয়ে রান-বলের ব্যবধান কমিয়ে আনেন মোহাম্মদ নওয়াজ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দাঁড়ায় ৬ বলে ১১ রানের সমীকরণ।

ব্র্যাড ইভানসের হাতে গুরুদায়িত্ব সঁপে দেন জিম্বাবুয়ে দলনেতা ক্রেইগ আরভিন। আর কী দারুণভাবেই না অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন এই পেসার! তবে সেই ওভারেও ছিল চরম নাটকীয়তা। প্রথম বলে নওয়াজ ৩ রান নিলে ও পরের বলে মোহাম্মদ ওয়াসিম চার হাঁকালে নিশ্চিত হার দেখে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। ৪ বলে ৪ রানের সহজ সমীকরণ ছিল তখন পাকিস্তানের সামনে।

এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও মনোবল হারাননি ইভানস, তার পরের ২ বলে ২ রানের বেশি নিতে পারেনি ওয়াসিম-নওয়াজ। ফলে পঞ্চম বলে বাউন্ডারির জন্য যেতেই হতো নওয়াজকে। কিন্তু সফল হননি পাক অলরাউন্ডার। মিড অফে অধিনায়ক আরভিনের ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে তার ১৮ বলে ২২ রানের ইনিংসের। 

শেষ বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি ওয়াসিম। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন শাহীন আফ্রিদি। অবিশ্বাস্য এক জয়ের উল্লাসে মাতে জিম্বাবুয়ে। মাত্র ২৫ রান ব্যয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রাজা। এই জয়ে অবদান ছিল মুজারাবানি ও ইভানসেরও। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন দুজনেই। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন এনগারাভাও।

পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্যটা খুব বড় না থাকলেও শুরুতেই ভেঙে যায় তাদের ওপেনিং জুটি। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খোলসে বন্দী অধিনায়ক খোলস ভেঙে বের হতে পারেননি এই ম্যাচেও। চতুর্থ ওভারেই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ান বার্লের হাতে ক্যাচ দিয়ে ইভানসকে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। মাত্র ৪ রান আসে বাবরের ব্যাট থেকে।

পরের ওভারে আবারও হোঁচট খায় পাকিস্তান। ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান শিকার হন মুজারাবানির। আউট হওয়ার আগে ১৬ বল থেকে ১৪ রান করেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে লুক জঙ্গুয়ের শিকারে পরিণত হন ইফতিখার আহমেদ। ভারতের বিপক্ষে ফিফটি হাঁকানো এই ব্যাটার আস্থার প্রতীক হতে পারেননি এই ম্যাচে।

মাত্র ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাবরবাহিনী। সেই চাপ দারুণভাবে সামলে নেন শান মাসুদ ও শাদাব। তাদের ৩৬ বলে ৫২ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা কিছুটা সামলে ওঠে পাকিস্তান। কিন্তু এরপরই রাজা চালান তাণ্ডব। পর পর দুই বলে তুলে নেন শাদাব ও হায়দার আলিকে।

লং-অফে শন উইলিয়ামসকে ক্যাচ দেন ১৭ রান করা শাদাব। এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন হায়দার। তখনও জয়ের জন্য ৩৬ বলে ৪৩ রান প্রয়োজন পাকিস্তানের। ১৫তম ওভার করতে এসে ইভানস দেন ৫ রান। পরের ওভারে আবারও রাজা অবতীর্ণ হন জিম্বাবুয়ের ত্রাতার ভূমিকায়। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মাসুদকে। ৩৮ বলে ৪৪ রান করে বিদায় নেন ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি।

১৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মাত্র ৩ রান দেন এনগারাভা। সেই ওভারে আবারও চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত নওয়াজ বাধা টপকে ইভানসের জাদুকরি শেষ ওভারে জয় ধরা দেয় রাজা-আরভিনদের হাতে। জঙ্গুয়ে ব্যতীত ওভারপ্রতি সাতের কম রান দেন প্রত্যেক জিম্বাবুইয়ান বোলার। রাজার ৩ ও ইভানসের ২ উইকেটের সঙ্গে একটি করে শিকার করেন মুজারাবানি ও জঙ্গুয়ে।

এর আগে আরভিন টস জিতে ব্যাটিং নিলেও অল্প পুঁজিতে আটকে যায় জিম্বাবুয়ে। যদিও ৫ ওভারে ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু পায় তারা। এরপর ব্যাটিং ধসে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ২২ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন অধিনায়ক আরভিন (১৯), ওয়েসলি মাধেভেরে (১৭) ও মিল্টন শুম্বা (৮)।

আরভিনকে আউট করে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন হারিস রউফ। পরের ওভারে মাধেভেরেকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান ওয়াসিম। ৬৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শন উইলিয়ামস ও রাজা মিলে গড়েন ৩১ রানের জুটি।

শাদাবের করা ১৪তম ওভারে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। পর পর দুই বলে ফিরে যান উইলিয়ামস (২৮ বলে ৩১ রান) ও রেগিস চাকাভা (১ বলে শূন্য)। পরের ওভারে আবারও জোড়া আঘাত হানে পাকিস্তান। ওয়াসিম তুলে নেন রাজা (৯) ও জঙ্গুয়েকে (১ বলে শূন্য)।

এরপর বার্লের ১৫ বলে অপরাজিত ১০ রান ও পেসার ইভানসের ১৫ বলে ১৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করতে সক্ষম হয় জিম্বাবুয়ে। ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন ওয়াসিম। লেগ স্পিনার শাদাব নেন ৩ উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago