প্লাস্টিক দূষণে করুণ দশায় কর্ণফুলী

কর্ণফুলী নদী। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলীকে পরিণত করেছে চরম মাত্রায় দূষিত এক নদীতে।

চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান এই নদীতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয়। এরপরেই রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে রূপসা নদী, যেখানে ফেলা হয় প্রায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য।

অন্তত ৭ মিটার উঁচু পলিথিনের বিশাল আস্তরণের কারণে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ড্রেজিং প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখেই থামতে হয়েছে।

গতকাল সোমবার 'সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ' রিসার্চের অংশ হিসেবে একটি সেকেন্ডারি ডেটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

প্লাস্টিক দূষণের কারণে বেহাল দশা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে কীর্তনখোলা (৭ দশমিক ১ শতাংশ), সন্ধ্যা (৬ দশমিক ৫ শতাংশ), নার (৪ দশমিক ১ শতাংশ), মেঘনা (৩ দশমিক ৩ শতাংশ), কালীগঙ্গা (২ দশমিক ৫), বলেশ্বরী (২ শতাংশ), সুগন্ধা (১ দশমিক ৮ শতাংশ), গলাচিপা (১ দশমিক ২ শতাংশ), পায়রা (শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ), বিষখালী (শূন্য দশমিক ২ শতাংশ)।

সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের পানি ব্যবস্থায় দূষণের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়।

সিপিডির গবেষণা ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শুধুমাত্র ঢাকায় প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়।

এর মধ্যে, ৪৮ শতাংশ ভাগাড়ে যায়, ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়, ১২ শতাংশ নদীতে ফেলা হয়, বাকি ৩ শতাংশ রাস্তার ধারে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ব-দ্বীপ হওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও প্লাস্টিক বর্জ্যের একটি অংশ এখানে চলে আসে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ কমানোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না এলে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে।'

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের ব্যাগ, পরিষ্কার প্লাস্টিকের পাতলা মোড়ক, কফির কাপ ও ঢাকনার মতো একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের অত্যধিক ব্যবহার এবং নির্বিচারে সেগুলো যেখানে-সেখানে ফেলা হয়।

সৈয়দ ইউসুফ সাদাত জানান, করোনা মহামারির কারণে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।

শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া যেসব খাল নদীতে গিয়ে মিশেছে, সেখানে বয়ে যায় গৃহস্থালির বর্জ্য। সেখানে থাকে মূলত পলিথিন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র।

নদীতে শিল্প দূষণও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্লাস্টিক দূষণের মাধ্যমে নদীগুলোর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জলজ প্রাণী হত্যা করা হয়েছে, নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, যারা নদীকেন্দ্রিক জীবিকা অর্জন করতেন তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে এবং সবচেয়ে বড় কথা, এরফলে নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, 'এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরাই প্রথম দেশ হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু বাস্তবে প্রতি বছর এর ব্যবহার বেড়েছে। ব্যবহার এতটাই বেড়েছে যে আমাদের নালা, খাল, নদী সবই আটকে আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারকে অবশ্যই এই জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের শুধু তাকিয়ে দেখতে হবে, কীভাবে সব ধ্বংস হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

14h ago