ইংরেজি বলা, প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার ও আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা নিচ্ছে তারা

প্রশিক্ষণে সাটুরিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

'আমরা শুধু ইংরেজি ব্যাকরণ শিখে আর মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করতাম। কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম না। এখন আমরা ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়মিতই ইংরেজিতে কথা বলি।'

কথাগুলো বলছিল তিথি সাহা। তিথি সাটুরিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই স্কুলের ৪৮ জন শিক্ষার্থী শিখছে কীভাবে ইংরেজি কথা বলতে হয়, ডিজিটাল গ্যাজেট ব্যবহার করতে হয় এবং কখনো সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কীভাবে তা প্রতিরোধ করতে হয়। এ ছাড়া, আত্মনির্ভরশীল হয়ে কীভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কেও শিখছে তারা।

ইংলিশ অ্যান্ড ডিজিটাল ফর গার্লস এডুকেশন (ইডিজি) প্রকল্পের অধীনে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ইংরেজি ও ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক (ডিনেট)।

তিথির ভাষ্য, 'আমরা এখন আনন্দের সঙ্গে ইংরেজি শিখছি। কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয়, ইমেইল পাঠাতে হয়, খবর পড়তে হয় তা আমরা এখন সবই জানি।'

শুরুতেই ৪ জন গ্রুপ লিডারকে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ডিনেট। পরবর্তীতে এই গ্রুপ লিডাররা অন্যদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তবে, পুরো বিষয়টির তদারকি করছেন স্কুলের শিক্ষক ও ডিনেটের প্রতিনিধিরা। কীভাবে প্রতিদিন ক্লাসে পড়াতে হবে, ইংরেজিতে কথা বলতে হবে, ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হবে— সবকিছু বলে দেওয়া হয় তাদেরকে।

গ্রুপ লিডার পায়েল বোসাক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদেরকে ৩টি বিষয়ে ৫ দিনের ট্রেনিং দেওয়া হয়। আমরা প্রতি রোববার ও সোমবার ক্লাসের আগে সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত এসব বিষয়ে শিখি। আমরা এসময় ইংরেজিতে কথা বলি।'

আরেক গ্রুপ লিডার হাফসা বলেন, 'এই প্রশিক্ষণের ফলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারছি। আমাদের কেউ ইভটিজিং করলে তা কীভাবে প্রতিরোধ করবো, সেসব বিষয়ও শিখেছি। বাল্যবিবাহ বা নারী নির্যাতন হলে আমরা কী করবো, তাও জানি।'

'আমরা এখানে যে ৪৮ জন মেয়ে আছি, তারা সবাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাই। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমরা চাই না করো ওপর নির্ভর করে থাকতে। আমাদের সবার লক্ষ্য আত্মনির্ভরশীল হওয়া', তিনি যোগ করেন।

সাটুরিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো করছে। এই ৪৮ জন মেয়ে ইংরেজিতে অনেক ভালো। অন্য মেয়েদেরকেও তারা সাহায্য করছে। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছে। ভবিষ্যতে তারা দেশে ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

ইডিজি প্রকল্পের অধীনে দেশের ৩টি জেলায় মোট ১ হাজার ১০০ কিশোরীকে এভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।

প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ও ডিনেটের সহকারী ব্যবস্থাপক মাইশা ফারজানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিশোরীরা নীতিনির্ধারনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেন নেতৃত্বের ভূমিকা রাখতে পারে, তারা যেন পিছিয়ে না থাকে, সেজন্য মূলত ৩টি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এই মেয়েদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। প্রকল্পের আওতায় তাদেরকে ল্যাপটপ, মডেম, বইসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে।'

'গত বছরের অক্টোবরে আমাদের এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর অধীনে মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট ও চট্টগ্রামে মোট ৫০টি ক্লাব আছে। প্রত্যেক ক্লাবে ২ জন করে লিডার আছেন,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

9h ago