আর্জেন্টিনা: শেষ হাতছানিতে মেসি কি পারবেন রাজা হতে?

অনেকের মতেই সময়ের সেরা ফুটবলার তিনি। নতুন প্রজন্মের অনেকের চোখে আবার তিনি সর্বকালের সেরা। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে প্রায় ৪০টি ট্রফি জেতা লিওনেল আন্দ্রেস মেসির নেই কেবল একটি শিরোপা। ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার ট্রফি বিশ্বকাপেই যে এখনও হাত ছোঁয়ানো হয়নি লা পুল্গার। কাতার বিশ্বকাপই হতে পারে এই মহাতারকার শেষ, তাই সোনালী ট্রফিটা যে এবার বড্ড বেশি প্রয়োজন তার!

সাতটি ব্যালন ডি অর জেতা মেসিকে অনেক আর্জেন্টাইন ভক্তই রাখবেন দিয়েগো ম্যারাডোনার ঠিক পরের অবস্থানে। তবে কাতারে আর্জেন্টিনা শেষ হাসি হাসলে পিএসজি তারকা ছুঁয়ে ফেলবেন তার অগ্রজকেও। ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসির মতো এতো অর্জন না থাকলেও মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে অমর হয়ে রয়েছেন ম্যারাডোনা।

২০১৪ সালে ব্রাজিলে জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল হারের পর অনেক আর্জেন্টাইনই ভাবতে বসেছিলেন, আদৌ কি কোনদিন কাটবে এই ট্রফি খরা। সেটা ছিল আলবিসেলেস্তেদের টানা পঞ্চম ফাইনাল হার। লক্ষ্যের এতো নিকটে গিয়েও বারবার ব্যর্থ হওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না মেসিও। ২০১৬ সালে অবসর নিয়েও মেলেনি শান্তি। এরপর ফিরে এসে কোপা জিতে ঘুচালেন আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপাখরা।

২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার দায়িত্বে আসার পর থেকেই একটু একটু করে সব বদলে দিতে থাকেন লিওনেল স্কালোনি। তার অধীনে ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল খেলে আলবিসেলেস্তেরা। ব্রাজিলের বিপক্ষে হারে সেবার শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গিয়ে আরও একবার হতাশ হতে হয় মেসিদের। তবে সবাই ভেঙে পড়লেও স্কালোনির মনোবল ছিল অটুট, সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন আর্জেন্টিনার উত্থান।

২০২২ বিশ্বকাপ আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় থেকে শুরু করবে আর্জেন্টিনা। গত এক দশকের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অধিক ছন্দে মেসি-মারিয়ারা। টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে বিশ্বমঞ্চে নামবে তারা। তার ওপর কোপা জয়ের সুখস্মৃতি তো থাকবেই। কোচ স্কালোনির পজিশনিং ফুটবলে বেশ মানিয়ে নিয়েছে এখন তার শিষ্যরা।

এবার আর্জেন্টিনা দলে আক্রমণভাগে তারকার নেই কোন অভাব, তাদের দুচিন্তার জায়গা হতে পারে মিডফিল্ড ও ডিফেন্স। বাছাইপর্বে মেসিকে সবচেয়ে বেশি পাস দেওয়া জিওভানি লো সেলসো ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে। তার অনুপস্থিতিতে রদ্রিগো দি পল ও লিওনার্দো পারেদেসকেই ধরতে হবে হাল। তবেই মেসি নিশ্চিন্তে ব্যস্ত থাকতে পারবেন আক্রমণ গড়ায়। গোলরক্ষকের জায়গা নিয়েও খুব একটা মাথা ঘামাতে হবে না স্কোলোনিকে, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ গেল কোপায় দেখিয়েছেন কেন তার এতো আস্থাভাজন তিনি।

তবে রক্ষণে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজরা সাম্প্রতিক সময়ে আলো ছড়ালেও বড় ম্যাচে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব কিছুটা চাপে ফেলতে পারে স্কালোনিকে। নিকোলাস ওতামেন্দি, মার্কোস আকুনারা পুরনো যোদ্ধা। তবে নিজেদের সেরা সময় বহু আগে পিছনে ফেলে এসেছেন তারা। তবে স্কালোনির সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত মেসিকে জাগিয়ে তোলা।

কোপা জিতে মেসি বলেছিলেন, 'স্কালোনি আমাদেরই একজন। সেই জাতীয় দল নির্বাচন করেছিল, সেই একমাত্র যে বিশ্বাস করেছিল। কঠিন মুহূর্তে সেই নেতৃত্ব দিয়েছিল। সে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। সে নতুনদের (দলে) আনছিল, সবসময়ই জানত সে কি চায় ও আমরা (দল হিসেবে) বেড়ে উঠলাম। ২০১৯ কোপা আমেরিকা থেকেই আমরা ঝুঁকি নেওয়া শুরু করি।'

২০২১ কোপা আমেরিকায় দেখা মিলেছিল প্রচণ্ড দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক মেসির, যা নিশ্চিতভাবেই হার মানিয়ে দিত ২০১৪ বিশ্বকাপের মেসিকেও। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে আহত অবস্থায়ই খেলেন ক্ষুদে জাদুকর। কাতার বিশ্বকাপেও এমন অবিচল মেসির দেখা মিলবে বলেই ভক্তদের বিশ্বাস, লা পুল্গা নিজেও অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন তার চোখ কেবলই বিশ্বকাপে।     

অতীত বিশ্বকাপগুলোতে আর্জেন্টিনা

এখন পর্যন্ত ১৭বার বিশ্বমঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার গৌরব অর্জন করতে পেরেছে আলবিসেলেস্তেরা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় পরে তারা। তিনবার রানারআপ হবার আক্ষেপও সঙ্গী হয়েছে তাদের। সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপই ছিল হতাশার, ২০১৪ সালে অতিরিক্ত সময়ে মারিয়ো গোটজের গোল ও ২০১৮ সালে শেষ ষোলতে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায়।

যেভাবে বিশ্বমঞ্চে মেসিরা

কনমেবল অঞ্চলের বাছাইয়ে দ্বিতীয় হয়ে মরুর বুকে লড়াইয়ের টিকিট নিশ্চিত করেছে স্কালোনির শিষ্যরা। সেই পর্বে সাতটি করে গোল করে উজ্জ্বল ছিলেন মেসি ও মার্তিনেজ। ১৭ ম্যাচে মোট ২৭ বার প্রতিপক্ষের জালে বল রেখেছে আর্জেন্টিনা, বিপরীতে হজম করেছে আট গোল। ১০টি ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়েছেন স্কালোনির গোলরক্ষকরা।

সাম্প্রতিক ফর্ম

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বর দল আর্জেন্টিনা যেকোন সময়ের চেয়ে সেরা ফর্মে থেকে শুরু করবে বিশ্বকাপ। এস্তোনিয়া, হন্ডুরাস ও জ্যামাইকাকে হেসে খেলে হারানোয় আত্মবিশ্বাসের পারদটাও গিয়ে ঠেকেছে বেশ উঁচুতে। দলের মতো ঈর্ষনীয় ফর্মে অধিনায়ক মেসিও, শেষ তিন ম্যাচে পেয়েছেন নয়বার পেয়েছেন জালের দেখা। যার মধ্যে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একাই করেছিলেন পাঁচ গোল।

কাতার বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দল

গোলরক্ষক: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরোনিমো রুলি (ভিয়ারিয়াল), ফ্রাঙ্কো আরমানি (রিভারপ্লেট)

ডিফেন্ডার: নাহুয়েল মলিনা (অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম), জার্মান পেজেলা (বেতিস), নিকোলাস ওতামেন্দি (বেনফিকা), লিসান্দ্রো মার্তিনেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), মার্কোস আকুনা (সেভিয়া), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিওঁ), হুয়ান ফয়েথ (ভিয়ারিয়াল)।

মিডফিল্ডার: রদ্রিগো দি পল (অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ), লিয়ান্দ্রো পারাদেস (জুভেন্তাস), অ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার (ব্রাইটন), গুইদো রদ্রিগেজ (বেতিস), আলেহান্দ্রো গোমেজ (সেভিয়া), এনজো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা), এজাকুয়েল প্যালাসিওস (লেভারকুসেন)

ফরোয়ার্ড: আনহেল দি মারিয়া (জুভেন্তাস), লাউতারো মার্তিনেজ (ইন্টার মিলান), হুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), পাওলো দিবালা (রোমা), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্তিনা), জোয়াকিন কোরেয়া (ইন্টার মিলান), লিওনেল মেসি (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)।

Comments

The Daily Star  | English

Drafting new constitution can take a long time: Asif Nazrul

He proposed that the next parliament can act as constitutional authority and amend the 1972 constitution until a new one is enacted

1h ago