জার্মানি: রাশিয়ার ব্যর্থতা ঘুচিয়ে স্বরূপে ফেরার মিশন

আন্তর্জাতিক ফুটবলের যেকোন বৈশ্বিক আসরেই শিরোপার অন্যতম দাবিদার থাকে জার্মানি। কাতারেও ভক্তদের চোখে অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই বিশ্বকাপ শুরু করবে হ্যানসি ফ্লিকের শিষ্যরা। সাম্প্রতিক ফর্ম নয়, ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার অতীত আসরগুলোর সাফল্য অনুপ্রাণিত করবে জার্মানদের। তবে পঞ্চম বিশ্বকাপের খোঁজে থাকা দি মানশাফটরা কাগজে কলমে কিছুটা পিছিয়ে থেকেই শুরু করবে এবারের আসর। 

অনভিজ্ঞ এক আক্রমণভাগ নিয়ে ফ্লিকের সামনেও বড় চ্যালেঞ্জ ভক্তদের প্রত্যাশার পালে হাওয়া দেওয়া। ২০১৪ সালে জার্মানিকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া জোয়াকিম লোর ১৫ বছরের সাফল্যযাত্রা ধরে রাখার চাপ থাকবে তার ওপর। মরুর দেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে সেবার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা ফ্লিককে, সেটাও দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ কোচকে।

২০১৪ এর পর আর গৌরবের সোনালী ট্রফি উঠেনি জার্মানদের হাতে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলটিকে। মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হেরে হতাশার রেকর্ড গড়েছিলেন ম্যানুয়েল নয়ার, থমাস মুলাররা। ২০২০ ইউরোতেও ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি জার্মানির, শেষ ষোলতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে যায় তারা।

২০০৬-২০১৬ সময়কালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতাগুলোতে কখনোই শেষ চারের আগে বিদায় নেয়নি জার্মানরা। ফলে ২০১৮ ও ২০২১ এর ব্যর্থতা বড় ধাক্কা ছিল তাদের জন্য। বায়ার্নের হয়ে ছয়টি মেজর শিরোপা জেতা ফ্লিক দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই অবশ্য দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত, তার অধীনে প্রথম আট ম্যাচের সবকটিতেই জয় তুলে নেয় দি মানশাফটরা। যদিও সেগুলো ছিল ইসরায়েল, আর্মেনিয়া ও আইসল্যান্ডের মতো তুলনামূলক দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে।   

তবে ইনজুরি ও দলে ক্রমাগত পরিবর্তনের খেসারত জার্মানরা দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। সর্বশেষ সাত ম্যাচের মাত্র একটিতেই জয় তুলে নিতে পেরেছে তারা। এতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও নিজের মতমতো কম্বিনেশন খুঁজে পাননি ফ্লিক। রক্ষণের নেতৃত্ব দেওয়া অ্যান্তোনিও রুডিগার দারুণ ফর্মে থাকলেও কাতারে তার সঙ্গী কারা হবেন না তা নিয়ে অন্ধকারে ভক্তরা। 

কাতারে জার্মানির শক্তির জায়গা হতে পারে মিডফিল্ড। ইকাই গুন্দোগান, লিওন গোরেটজকা, সার্জ নাব্রি, লেরয় সানেরা সবাই ক্লাব ফুটবলের প্রতিষ্ঠিত নাম। বিশ্বমঞ্চে বরাবরই সফল থমাস মুলারের উপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই বাড়িয়ে দেবে দলের মনোবল। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক মারিও গোটজেও ডাক পেয়েছেন ফ্লিকের দলে, ফলে এই বিভাগে প্রতিভার মতো অভিজ্ঞতারও কোন কমতি নেই জার্মানদের।

কাতারে জার্মানির তুরুপের তাস হতে পারেন জামাল মুসিয়ালা। বায়ার্নের জার্সিতে উড়ন্ত ফর্মে থাকা এই তরুণ তুর্কি চমকে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২২ ম্যাচে ১২ গোল ও ১০ অ্যাসিস্ট তার। উড়ন্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বমঞ্চে পা রাখতে যাওয়া ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের ওপরও তাই অনেক প্রত্যাশা থাকবে ভক্তদের। 

তবে আক্রমণভাগের চিত্র পুরোপুরি বিপরীত, স্বীকৃত স্ট্রাইকারের অভাব ভোগাতে পারে ফ্লিকের দলকে। টিমো ভের্নারকে ইনজুরির কারণে মরুর বুকে পাবে না তারা। ইউসুফা মৌকোকো, নিকলাস ফুয়েলক্রুগ, করিম আদেইমিরা বড় মঞ্চের চাপ কতোটা মোকাবিলা করতে পারবেন থাকছে সেই প্রশ্নও। ছন্দে থাকা ওয়ের্ডার ব্রেমেন ফরোয়ার্ড নিকলাস ফুয়েলক্রুগো থাকলে হয়তো আক্রমণের ধার কিছুটা বাড়ত জার্মানদের, তবে ২৬ সদস্যের দলে তাকে বিবেচনাই করেননি কোচ ফ্লিক। ফলে মিডফিল্ডার থেকে ফরোয়ার্ড বনে যাওয়া হ্যাভার্টজকেই দিতে হবে এই বিভাগের নেতৃত্ব।

দল যেমনই হোক ট্রফিতেই নজর জার্মানদের। তবে ফ্লিক পা রাখছেন মাটিতেই। বারবারই বলে আসছেন, তার প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল। তবে বিশ্বাস করেন আরও একটি অর্জনের ইতিহাস লেখার সব সামর্থ্যই আছে তার দলের।

অতীত আসরগুলোতে জার্মানি

কাতারে নিজেদের ২০তম বিশ্বকাপ খেলতে নামবে জার্মানি। চারবার শিরোপা জিতেছে তারা। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন ফেবারিট হাঙ্গেরিকে হারিয়ে প্রথম সাফল্যগাঁথা লিখে দলটি। এরপর ঘরের মাঠে ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানি নামে দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে তারা। এর ১৬ বছর পর ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে পায় তৃতীয় শিরোপা। সবশেষ ২০১৪ সালে ব্রাজিলে আবারও আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় তারা।  

যেভাবে ২০২২ বিশ্বকাপে জার্মানি

বাছাইপর্বে দুরন্ত ছিল ফ্লিকের শিষ্যরা, ১০ ম্যাচের নয়টিতেই জয় আদায় করে নেয় তারা। প্রতিপক্ষের জালে ৩৬ গোলের বিপরীতে মাত্র চারটি গোল হজম করে জে গ্রুপের শীর্ষস্থানধারীরা। তবে গত মাস থেকেই হতাশা সঙ্গী হতে শুরু করে জার্মানদের। সর্বশেষ সাত ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের ১১ নম্বর দলটি।  

জার্মানির বিশ্বকাপ দল

গোলরক্ষক: ম্যানুয়েল নয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ), মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা), কেভিন ট্র্যাপ (অ্যাইনট্রাখ্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট)

ডিফেন্ডার: ম্যাথিয়াস গিন্টার (ফ্রেইবার্গ), আন্তোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ), নিকলাস সুয়েল (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড), নিকো স্লোটারবেক (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), থিলো কেহেরার (ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড), ডেভিড রাউম (লাইপজিগ), লুকাস ক্লোস্টারম্যান (লাইপজিগ), আর্মেল কোস্টেরম্যান (সাউদাম্পটন), ক্রিশ্চিয়ান গুয়েন্টার (ফ্রেইবার্গ)

মিডফিল্ডার: ইকাই গুন্দোগান (ম্যানচেস্টার সিটি), জোনাস হফম্যান (বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ), লিওন গোরেটজকা (বায়ার্ন মিউনিখ), সার্জ নাব্রি (বায়ার্ন মিউনিখ), লেরয় সানে (বায়ার্ন মিউনিখ), জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ), ইয়াশুয়া কিমিখ (বায়ার্ন মিউনিখ), থমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ), জুলিয়ান ব্র্যান্ডট (বরুসিয়া ডোনাস), মারিও গোটজে (অ্যাইনট্রাখ্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট)।

ফরোয়ার্ড: কাই হাভার্টজ (চেলসি), ইউসুফা মৌকোকো (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), নিকলাস ফুয়েলক্রুগ (ওয়ের্ডার ব্রেমেন), করিম আদেইমি (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)।

Comments

The Daily Star  | English

July uprising: The wounds that are yet to heal, one year on

This week marks one year since 15-year-old Md Shahin Alam’s life was forever changed -- not by illness or accident, but by a bullet that tore through his left leg during a rally on August 5, 2024.

15h ago