উড়ন্ত ট্যাক্সি

অনেক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে শহরের মধ্যে অসংখ্য উড়ন্ত যান চোখে পড়ে, কিন্তু বাস্তবে ছোট আকারের এমন উড়োজাহাজ এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে উড়ন্ত ট্যাক্সি চালুর চেষ্টা চলছে৷
উড়ন্ত ট্যাক্সি
চলছে উড়ন্ত ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক যাত্রা। ছবি: লিলিয়ামের ওয়েবসাইট থেকে

স্পেনের আটলাস পরীক্ষা কেন্দ্রে সকালে চরম ব্যস্ততার পরিবেশ৷ কড়া গোপনীয়তার বেড়াজালে সবকিছু ঘটছে৷ এই প্রথম সেখানে ক্যামেরা টিম প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে৷ কারণ 'লিলিয়াম' কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড 'ফিনিক্স ২' মডেলের প্রোটোটাইপের ক্ষমতা দেখাতে চান৷

তিনি বলেন, 'আমাদের জন্য পরীক্ষামূলক যাত্রা অত্যন্ত জরুরি৷ আমরা যানটির ওড়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে চাই৷ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার একই সঙ্গে এয়ারোডাইনামিক্স এবং শূন্যে ভেসে থাকার কাঠামোর সঙ্গে কীভাবে কাজ করছে, তা দেখতে চাই৷ অন্যদিকে আমরা গোটা প্রক্রিয়ার ধাপগুলো পরীক্ষা করতে চাই, যাতে ছাড়পত্র পাওয়ার সময়ে যতটা সম্ভব দক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়৷'

অনেক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে শহরের মধ্যে অসংখ্য উড়ন্ত যান চোখে পড়ে, কিন্তু বাস্তবে ছোট আকারের এমন উড়োজাহাজ এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে উড়ন্ত ট্যাক্সি চালুর চেষ্টা চলছে৷

বিদ্যুৎচালিত হাজারো উড়ন্ত ট্যাক্সিতে ছেয়ে যেতে পারে আকাশ। জার্মান স্টার্টআপ কোম্পানি 'লিলিয়াম' বিশ্বের আরও প্রায় ১০০ কোম্পানির সঙ্গে উড়ন্ত ট্যাক্সি তৈরির প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিচ্ছে৷ সেরা প্রযুক্তি ও সবচেয়ে দ্রুত ছাড়পত্রের জন্য সব কোম্পানি এই দৌড়ে নেমেছে৷

'ফিনিক্স ২' উড়ন্ত যানের মূল্য প্রায় ৪০ লাখ ইউরো৷ এখন পর্যন্ত এই প্রোটোটাইপ মানুষ ছাড়াই উড়ছে৷ একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেটি চালনা করা হচ্ছে৷

প্রতিবার পরীক্ষার সময় ৩০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ সেখানে উপস্থিত থাকেন৷ লিলিয়াম কোম্পানির টেস্ট পাইলট আন্দ্রেয়াস ফিস্টারার বলেন, 'প্রতিবার পরীক্ষা নতুন এক একটি অধ্যায়৷ প্রতিটি পরীক্ষা আসলে ক্ষমতার সীমা খতিয়ে দেখার মতো৷ একের পর এক সীমা ভেঙে চলার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয়৷'

কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতির পর ওড়ার পালা৷

এমন অভিনব কাজ নিয়ে ভিগান্ডের গর্বের শেষ নেই৷ তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই ইলেকট্রিক জেট সত্যি ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারবে কি না, সে বিষয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মনে সন্দেহ রয়েছে৷

উড়ন্ত ট্যাক্সির মধ্যে একজন পাইলট ও ৬ জন যাত্রী বসতে পারেন৷ ২০২৫ সালেই লিলিয়াম এই যান বাজারে আনতে চায়৷ ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, 'আমি নিজে ইঞ্জিনিয়ার৷ এই উড়োজাহাজের পেছনে পদার্থবিদ্যার ক্রিয়া বুঝতে পারি৷ পাশে দাঁড়িয়ে এটিকে উড়তে দেখলে, প্রায় কোনো শব্দ না শুনলে সেটা আমার গভীর বিস্ময়ের কারণ হয়৷ গোটা টিম কীভাবে নিরাপদে এটি চালাতে চাইছে, সেটা আমাকে মুগ্ধ করে৷'

এই স্টার্টআপ কোম্পানি সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করছে৷ লিলিয়াম কয়েক বছরের মধ্যেই কোটি কোটি ইউরো আয় করবে বলে ভিগান্ড প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷

গাড়ি ও ট্রেনের বিকল্প হিসেবে এই উড়ন্ত ট্যাক্সিকে তুলে ধরা হচ্ছে৷ ডানিয়েল বলেন, 'এর মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক স্তরে এক নতুন পরিবহণ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, যার আওতায় ভার্টিকাল টেকঅফ করে, এমন ইলেকট্রিক উড়োজাহাজের মাধ্যমে শহরগুলোকে যুক্ত করতে পারবো৷ স্থলপথে পরিবহণের তুলনায় অনেক দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবো৷'

কিন্তু এমন উড়ন্ত ট্যাক্সিতে যাতায়াত করার সামর্থ্য কতজনের আছে? প্রথমদিকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ধনীরা এমন যান ব্যবহার করতে পারবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷

কিন্তু উড়োজাহাজ চলাচল বিশেষজ্ঞ মানফ্রেড হাডারের মতে, চিরকাল তেমন থাকবে না। তিনি বলেন, 'নতুন মোবিলিটি প্রণালী হিসেবে উড়ন্ত ট্যাক্সি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে একমাত্র তখনই সফল হবে, যখন সেটি সব মানুষের নাগাল ও সামর্থ্যের মধ্যে আসবে৷ সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে শিল্পজগত কাজ করছে৷ সেই সঙ্গে বড় আকারে উৎপাদনের মাধ্যমে উড়ন্ত ট্যাক্সির দামও দ্রুত কমানোর উদ্যোগ চলছে৷'

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন যান কোথা থেকে ওঠানামা করবে? শব্দ দূষণের আশঙ্কা কতটা? এখনো এমন অনেক প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি৷ তবে নতুন এই প্রযুক্তি যে পরিবেশবান্ধব, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ লিলিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল ভিগান্ড বলেন, 'এই পণ্যের পরিবেশবান্ধব দিক হলো, উড়ন্ত যানটি কোনো কার্বন নির্গমন করে না, যেটা একটা বড় উদ্যোগ। সেইসঙ্গে আমাদের দেখাতে হবে যে উৎপাদন থেকে শুরু করে যানটির আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা টেকসই পদ্ধতিতে ব্যাটারি ও কাঠামোর রিসাইক্লিং করতে পারছি৷'

দিনের শেষে 'ফিনিক্স ২' হ্যাঙারে ফিরে যায়। স্পেনের অলিভ গাছের সারির ওপর দিয়ে আরও অনেকবার ওড়ার পর হয়তো উড়ন্ত ট্যাক্সির স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে৷

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago