বিনিয়োগে ধীর গতি, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৬ শতাংশ

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট, উৎপাদন খরচবৃদ্ধি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটে স্থানীয় ও বিদেশি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে কম আগ্রহী হচ্ছে।
স্টার ফাইল ছবি

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট, উৎপাদন খরচবৃদ্ধি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটে স্থানীয় ও বিদেশি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে কম আগ্রহী হচ্ছে।

বিনিয়োগের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) পরিমাণ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত বছরের তুলনায় ৬৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে ৬০৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯২৬ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার।

একইভাবে, শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত মধ্যবর্তী পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা, উভয়ই উল্লিখিত প্রান্তিকে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়েও বেশি কমেছে।

বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগে স্থবিরতার পেছনে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের চড়া দাম, জ্বালানি স্বল্পতা ও সর্বোপরি অনিশ্চিত পরিস্থিতি দায়ী।

মেঘনা গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেঘনা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দেশের সবচেয়ে বড় বাইসাইকেলের চাকা ও টিউব উৎপাদনকারী। প্রতিষ্ঠানটি বড় বাস ও ট্রাকে ব্যবহারযোগ্য চাকা উৎপাদনের জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি কারখানা স্থাপনের প্রকল্প বিলম্বিত করতে বাধ্য হয়েছে।

২ বছর আগে এই প্রকল্প শুরু হলেও মহামারি ও চলমান সংকটের কারণে কাজ শেষ হয়নি।

মেঘনা গ্রুপের অপারেশনস পরিচালক মো. লুৎফুল বারী বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।'

মোটরসাইকেল, ইজি বাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হালকা ট্রাক ও রিকশার চাকা উৎপাদনকারী ও বাইসাইকেল টায়ার ও টিউব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে চায়। তবে তা নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের ওপর।

১ বছর আগে ডলারের দাম ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানি বিল পরিশোধ করার জন্য ডলার প্রতি ১০৮ টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে। ১ বছরের মধ্যে ডলারের দাম অন্তত ২৮ শতাংশ বেড়েছে।

একইসঙ্গে কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচও বেড়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ করে দেয়। ফলে গ্যাস ও জ্বালানি সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, 'সংকটের সময় বিনিয়োগ বন্ধ রাখা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।'

তার মতে, স্থগিত থাকা বিনিয়োগের প্রায় ৭৫ শতাংশই সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)।

জাপানের সংস্থা শিপ হেলথকেয়ার হোল্ডিং ২০২৪ সালের শুরু নাগাদ ২ হাজার কোটি টাকায় ঢাকায় একটি ১ হাজার শয্যার ক্যানসার হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে ছিল বাংলাদেশের আইচি মেডিকেল গ্রুপ। তবে মহামারি দীর্ঘায়িত হওয়া, ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপে এই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

আইচি মেডিকেল গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নাও হতে পারে।'

ইতোমধ্যে এই যৌথ উদ্যোগের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের নকশাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু, বাস্তবায়ন কাজ তেমন এগোয়নি। কারণ প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় উপকরণ ও মেশিনারি আমদানি করার জন্য ঋণপত্র খুলতে পারেনি।

বাংলাদেশে মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর এই যৌথ উদ্যোগের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছিল। কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে অন্যান্য সংকট দেখা দিলে এই পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণভাবে চালাতে পারব না।'

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান জানান, ডলারের দাম বেশি হওয়ায় সব প্রকল্পের প্রাক্কলিত খরচ বেড়ে গেছে।

'এ কারণে বিনিয়োগকারীরা বাড়তি খরচের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিনিয়োগ বিলম্বিত করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব তৈরি হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

বৈশ্বিক অর্থনীতির ওঠা-নামার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ার কারণেও বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় আছেন।

অক্টোবরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, যেটি এর আগের ২ মাসের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যস্ফীতির চেয়ে কিছুটা কম।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, 'যখন মূল্যস্ফীতি বেশি এবং তা বাড়ছে, তখন বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পান না।'

সংক্ষেপিত, অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago