আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামানো কে এই সৌদি কোচ রেনার্ড?

ছবি: এএফপি

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার কীর্তি। আর একটি ম্যাচে হার এড়াতে পারলে ইতালির টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলত আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ যেহেতু ছিল সৌদি আরব, সেহেতু লিওনেল মেসিদের জয়ই দেখছিলেন বেশিরভাগ ভক্ত-সমর্থক। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে দেখা মিলল উল্টো চিত্রের। উড়তে থাকা আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামাল কোচ হার্ভে রেনার্ডের শিষ্যরা।

কোপা আমেরিকা ও লা ফিনালিসিমার শিরোপা নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে গিয়েছে মেসিবাহিনী। তবে প্রথম ম্যাচের পরই দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো অবস্থা তাদের। লুসাইল স্টেডিয়ামে 'সি' গ্রুপের ম্যাচে আলবিসেলেস্তেদের ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ফরাসি কোচ রেনার্ডের দল। সেটাও আবার পিছিয়ে পরার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে! প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিয়েছিলেন অধিনায়ক মেসি। দমে না গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখায় গ্রিন ফ্যালকনরা। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তাদের পক্ষে লক্ষ্যভেদ করেন সালেহ আল শেহরি ও সালেম আল দাওসারি। ফলে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সৌদি আরব।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হাই-ব্যাকলাইন ব্যবহার করে ৫৪ বছর বয়সী রেনার্ড। অর্থাৎ ডিফেন্স অনেক উঁচুতে ছিল। আর্জেন্টিনার মতো দলের বিপক্ষে এই কৌশল অবলম্বন করা মানে বড় ঝুঁকি নেওয়া। কারণ, রক্ষণচেরা পাস দিতে মেসিরা পটু। কিন্তু সৌদির রক্ষণভাগ ছিল জমাট, ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল দুর্দান্ত। ফলে বারবার অফসাইডের ফাঁদে পড়ে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে তাদের আরও তিনটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। পাশাপাশি রেনার্ডের বেছে নেওয়া পাল্টা-আক্রমণের কৌশলে গতিময় ফুটবল উপহার দেয় সৌদি আরব। তাতে ধরাশায়ী হয় শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪৮ ধাপ এগিয়ে থাকা ও বিশ্বকাপের শিরোপাপ্রত্যাশী দলকে হারিয়ে ফুটবল দুনিয়ায় সাড়া ফেলেছে সৌদি আরব। তাদের কোচ রেনার্ডকে নিয়ে চলছে বন্দনা। ১৯৬৮ সালে তার জন্ম ফ্রান্সে। কোচ হওয়ার আগে ১৫ বছর নিজ দেশে পেশাদার ফুটবল খেলেছেন তিনি। খেলতেন ডিফেন্ডার হিসেবে। তবে বড় কোনো ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা নেই তার। কানে খেলেছেন সাত বছর। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমটি এসসি দ্রাগিনিয়ানের হয়ে কাটিয়ে বুটজোড়া তুলে রাখেন তিনি। ওই ক্লাবের হয়েই পরের বছর শুরু হয় তার কোচিং ক্যারিয়ার।

খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর ঝাড়ুদার হিসেবেও কাজ করেছেন রেনার্ড। সকালে তাকে দেখা যেত ঝাড়ুদারের ভূমিকায়, বিকালে তিনি দ্রাগিনিয়ানের ফুটবলারদের সঙ্গে করতেন অনুশীলন। তার লক্ষ্য ছিল একটাই- পেশাদার ফুটবলে কোচ হওয়া। পরবর্তীতে তাই একটি ক্লিনিং কোম্পানির মালিক হলেও ফুটবলের সঙ্গেই থেকে গেছেন। এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে জাম্বিয়ার কোচ হন রেনার্ড। বড় মঞ্চে তার যোগ্যতা প্রমাণের শুরুটা হয় তখন থেকে।

রেনার্ডের অধীনে ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবার আফ্রিকান নেশন্স কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে জাম্বিয়া। তবে ২০১০ সালে পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি আফ্রিকার আরেক দেশ অ্যাঙ্গোলার কোচ হন। সেখানে মাত্র সাত মাস কাটিয়ে ২০১১ সালে জাম্বিয়ায় ফিরে আসেন তিনি। পরের বছর ধরা দেয় দারুণ সাফল্য। প্রথমবারের মতো নেশন্স কাপের শিরোপা ঘরে তোলে জাম্বিয়া। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে স্থায়ী আসন পেয়ে যান রেনার্ড।

যাযাবর রেনার্ডের ভ্রমণ চলতে থাকে। ২০১৪ সালের মে মাসে আইভরিকোস্টের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। পরের বছরই রচনা করেন নতুন কীর্তি। নেশন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় আইভরিকোস্ট। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন দেশকে শিরোপা জেতানোর নজির গড়েন রেনার্ড। ফরাসি লিগ ওয়ানের ক্লাব লিলেতে অবশ্য টিকতে পারেননি তিনি। ২০১৫ সালেই মাত্র ১৩ ম্যাচের পর দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাকে।

২০১৬ সালে আফ্রিকার চতুর্থ দেশ হিসেবে মরক্কোর কোচ হন রেনার্ড। দুই বছরের ব্যবধানে তাদেরকে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দেন তিনি। ১৯৯৮ সালের আসরের পর যা ছিল মরক্কোর প্রথম বিশ্বকাপ। পরের বছরই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। কারণ, নেশন্স কাপের শেষ ষোলো থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নেয় মরক্কো। এরপর সৌদি আরবের দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে ২০২২ বিশ্বকাপে তুলেছেন রেনার্ড। আর শুধু অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ থাকছে না কাতারে দলটির এবারের অভিযান।

এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ফুটবলের মহাযজ্ঞে খেলছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ১৯৯৪ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। সেবার মরক্কো ও বেলজিয়ামকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছিল। সেখানে সুইডেনের কাছে হেরে বিদায় ঘণ্টা বেজেছিল তাদের। এরপর আরও চারটি বিশ্বকাপ খেললেও ওই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করা হয়নি সৌদি আরবের। তারা আর একবারও পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাধা। এবার রেনার্ডের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে চমক দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন তারা দেখতেই পারে। তাদের পরের দুই প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড ও মেক্সিকো।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

2h ago