টানটান উত্তেজনায় রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দিল ক্যামেরুন-সার্বিয়া

প্রথমে এগিয়ে গেলো ক্যামেরুন। তবে সেই লিড তারা খোয়ালো বিরতির আগেই। তিন গোল দিয়ে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল সার্বিয়া। বিরতির পর তিন মিনিটের মধ্যে দুই গোল শোধ দিয়ে আবারও ম্যাচে ফিরে এলো ক্যামেরুন। শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তায় ভরপুর ম্যাচটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করল দুই দল।    

সোমবার আল জানুব স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের 'জি' গ্রুপের ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র করেছে সার্বিয়া ও ক্যামেরুন। ২৯ মিনিটে জিন-চার্লস ক্যাসটেলেট্টোর গোলে এগিয়ে যায় আফ্রিকান দলটি। তবে প্রথমার্ধের পর যোগ করা সময়ে সার্গেই মিলিনকোভিচ স্যাভিচ ও স্ত্রাহিনিয়া পাভলোভিচের দুই গোলে লিড নিয়ে নেয় সার্বিয়া। ৫৩ মিনিটে আবার গোল করেন আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ। এরপর দুই গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচান এরিক ম্যাক্সিম চুপো মোটিং ও ভিনসেন্ট আবুবকর। ফলে শেষ পর্যন্ত খেলাটির সমাপ্তি ঘটে সমতায়।

 

সার্বিয়া-ক্যামেরুনের ম্যাচ ড্র হওয়ায় উপকৃত হলো সুইজারল্যান্ড ও ব্রাজিল। সোমবার দিবাগত রাতে তাদের মধ্যকার লড়াইয়ে জয়ী দল নিশ্চিত করে ফেলবে শেষ ষোল। এদিকে পরবর্তী রাউন্ডে যাত্রা অনেকটাই শঙ্কায় পড়ে গেল ক্যামেরুন ও সার্বিয়ার।

এমন দারুণ ফুটবল ম্যাচের শুরুটা হয় অনাকাঙ্খিত ঘটনা দিয়ে। প্রথম মিনিটেই মার্টিন হংলার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন মিত্রোভিচ। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফের লড়াইয়ে নামেন তিনি। ১১ মিনিটে তার গোলেই এগিয়ে যেতে পারত সার্বিয়া। বক্সের ভিতর একজন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে শট নেন ২৮ বছর বয়সী ফুলহ্যাম ফরোয়ার্ড। তবে বিধি বাম, তার বাম পায়ের বাঁকানো শট ফিরিয়ে দেয় গোলবার।

১৬ মিনিটে শট নেয় ক্যামেরুনও, কিন্তু নিকোলাস এনকোলোর নেওয়া শটটি ছিল না লক্ষ্যে। পরের মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার মোক্ষম সুযোগ নষ্ট করে সার্বিয়া। প্রথমবারের দুর্ভাগ্যে পতিত হলেও এবার নিজের ভুলেই গোলবঞ্চিত হন মিত্রোভিচ। নুহো টোলোর ভুলে বল পেয়ে যান ডি বক্সে, তবে শট নেন বাইরে।

১৯ মিনিটে পিয়ের কুন্দের জোরালো শট রুখে দেন সার্বিয়া গোলরক্ষক মিলিনকোভিচ-সাভিচ। বলের দখলে সার্বিয়া এগিয়ে থাকলেও ২৯ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগায় ক্যামেরুন। টোলোর ক্রস নাগালে পাননি দুই দলের কেউই, কপালগুণে তা পেয়ে যান ক্যাসটেলেট্টো। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম প্রথম গোলটি করতে কোন ভুল করেননি ২৭ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক, এগিয়ে যায় রিগোবার্ট সংয়ের শিষ্যরা।

গোল পেয়ে যেন ছন্দ খুঁজে পায় ক্যামেরুন। বারবার সার্বিয়া রক্ষণে ত্রাস ছড়াতে থাকে তারা। ৩৬ মিনিটে কলিন্স ফাই ক্রস করলেও একটু বেশিও জোর দিয়ে ফেলেন তাতে। তবে সুযোগ তৈরি করতে থাকে দ্রাগান স্টোয়কোভিচের শিষ্যরাও। চার মিনিটের মাঝে দুইবার দারুণ ক্রস যোগান ফিলিপ কস্তিচ, কিন্তু একবারও তা কাজে লাগাতে পারেননি তার সতীর্থরা।

৪৩ মিনিটে দ্রুতগতিতে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন ক্যামেরুনের পিয়েরে কুন্দে কিন্তু আবারও দেয়াল হয়ে দাড়ান সাভিচ। প্রথমার্ধের শেষদিকে এসে গোল শোধ দিতে সমর্থ হয় সার্বিয়া। দুসান তাদিচের ফ্রি কিক থেকে লাফিয়ে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান পাভলোভিচ। এর দুই মিনিট বাদে আবারও উল্লাসে মাতে সার্বিয়া। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে গোল করে দলকে লিড এনে দেন মিলিনকোভিচ সাভিচ।

যোগ করা সময়ের শেষভাগে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ ছিল স্টোয়কোভিচের শিষ্যদের সামনে কিন্তু মিত্রোভিচের শট আটকে যায় ক্যামেরুন রক্ষণে। বিরতির পর ৪৯ মিনিটে আবারও সুযোগ তৈরি করে সার্বিয়া। তবে রেফারি বাজান অফসাইডের বাঁশি। তবে ৫৩ মিনিটে ঠিকই সাফল্য পেয়ে যায় তারা, গোল করে স্কোরলাইন ৩-১ করেন মিত্রোভিচ। একই সঙ্গে ঘুচান সুযোগ নষ্টের আক্ষেপও। ক্যামেরুন ডিফেন্সকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে এই গোল আদায় করে নেয় সার্বিয়া।

তাদিচ বল দেন মিত্রোভিচকে, তিনি আবার তা ছাড়েন মিলিনকোভিচ সাভিচকে। ২৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডার এরপর বল দেন আন্দ্রিয়া জিভকোভিচকে, তিনি আবার পাস দেন মিত্রোভিচকে। দারুণ ফিনিশিংয়ে বলকে গন্তব্য দিতে সেবার আর কোন ভুল করেননি সার্বিয়ান তারকা।

এরপর ৫৭ মিনিটে ফ্রি কিক পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ক্যামেরুন। হেড করতে ব্যর্থ হন চুপো মোটিং। ৬২ মিনিটে কার্ল টোকো একামবি শট নিলেও তাতে ছিল না পর্যাপ্ত জোর। তবে পরের মিনিটেই দেখা মেলে দারুণ এক দৃশ্যের, অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে বক্সে ঢুকে চিপে গোল করে ব্যবধান কমান বদলী খেলোয়াড় ভিনসেন্ট আবুবকর। শুরুতে অফসাইডে তা বাতিল ঘোষিত হলেও 'ভিএআর' দেখে পরবর্তীতে নিশ্চিত হয়ে গোলের ঘোষণা দেন রেফারি।

গোল পেয়ে আবারও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ক্যামেরুন। ৬৬ মিনিটে ক্রস থেকে গোল করেন চুপো মোটিং। তাতে অ্যাসিস্ট করেন আবুবকর। ৭৬ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল সার্বিয়া। শট ঠেকিয়ে সেই যাত্রা ক্যামেরুনকে রক্ষা করেন ডেভিস এপাসি। এই ম্যাচে নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন কস্তিচ। ৮৩ মিনিটে আবারও দারুণ এক ক্রস করেন তিনি, তবে এবারও সেটাকে পরিণতি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থানে ছিলেন না কেউ।

৮৮ মিনিটে আবারও সুযোগ নষ্ট করেন মিত্রোভিচ। মোক্ষম জায়গায় বল পেয়েও শট নেন বারের বাইরে দিয়ে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে আবারও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন সার্বিয়া নম্বর নাইন। তার চিপ আটকে দেন এপাসি। শেষপর্যন্ত কোন দলের চেষ্টাই আলোর মুখ না দেখলে ড্র মেনে মাঠ ছাড়তে হয় সার্বিয়া-ক্যামেরুনকে।

Comments

The Daily Star  | English

Next nat’l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

The BNP will feel reassured if both the chief adviser and the chief election commissioner disclose to the nation what they discussed about the upcoming national polls during Thursday’s meeting, the party’s Standing Committee member Salahuddin Ahmed said yesterday.

23m ago