যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ বনাম রাশিয়ার এসইউ-৩৫

পৃথিবীতে যত ধরনের জঙ্গি বিমান আছে— সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী মনে করা হয় রাশিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের এসইউ-৩৫ এবং আমেরিকার পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ জঙ্গি বিমানকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ বনাম রাশিয়ার এসইউ-৩৫
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

পৃথিবীতে যত ধরনের জঙ্গি বিমান আছে— সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী মনে করা হয় রাশিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের এসইউ-৩৫ এবং আমেরিকার পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ জঙ্গি বিমানকে।

যে কারণে আমেরিকার পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গি বিমানের সঙ্গে রাশিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গি বিমানের তুলনা করা হয়?

প্রথমত, এসইউ-৩৫ খুব শক্তিশালী চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গি বিমান। কেউ কেউ একে জেনারেশন-৪.৫ বলেও উল্লেখ করেন। শুধু স্টেলথ (শত্রুর চোখে অদৃশ্য থেকে তাদের গতিবিধি নজরে রাখা) প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে এটি পঞ্চম প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, এই ২টির মধ্যে লড়াইয়ে কে জিতবে তা বলা অনেকের জন্যই কঠিন। প্রতিটি বিমানই সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে অসাধারণ। এ কারণে পারস্পরিক তুলনাটাও বেশ কঠিন।

সাধারণভাবে দেখতে গেলে, এসইউ-৩৫-এর গতি দ্রুততর ও চলাচল সক্ষমতা তুলনামূলক ভালো। কিন্তু, এফ-৩৫-এর বিধ্বংসী মিসাইল ও তুলনামূলক ভালো রাডার সিস্টেম থাকায় শত্রু ধ্বংসের সুযোগ বেশি।

এই মুহূর্তে এই ২ ধরনের জঙ্গি বিমানের মধ্যে লড়াই হলে এসইউ-৩৫ হয়তো জিতবে। তবে ভবিষ্যতে লড়াই হলে এর আপগ্রেডেড শিডিউলের জন্য এফ-৩৫-এর জেতার সম্ভাবনা বেশি।

পারস্পরিক তুলনা করে এই ২ জঙ্গি বিমানের শক্তিমত্তা সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

তথ্য এফ-৩৫ (যুক্তরাষ্ট্র) এসইউ-৩৫ (রাশিয়া)
মোট ইউনিট ৭৭০+ ১৪২
ইউনিটপ্রতি খরচ মডেলভেদে (৭৯ মিলিয়ন ডলার থেকে ১১৬ মিলিয়ন ডলার) ৮৫ মিলিয়ন ডলার
ক্র সংখ্যা
ওজন ১৩,২৯০ কেজি (২৯,৩০০ পাউন্ড) ১৯,০০০ কেজি (৪১,৮৮৮ পাউন্ড)
সর্বোচ্চ টেকঅফ ভর ৩১ হাজার ৭৫১ কেজি (৭০,০০০ পাউন্ড) ৩৪ হাজার ৫০০ কেজি (৭৬,০৫৯ পাউন্ড)
ইঞ্জিনের শক্তি ১ X ১৯১ কিলোগ্রাম-নিউটন (৪৩ হাজার পাউন্ড-ফোর্স) ২ X ১৪২.২ কিলোগ্রাম-নিউটন (৩২ হাজার পাউন্ড-ফোর্স)
সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৬০ কিলোমিটার (১ হাজার ২১৮ মাইল) প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (১ হাজার ৪৯১ মাইল)
রেঞ্জ ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার (১ হাজার ৭০০ মাইল) ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (২ হাজার ২০০ মাইল)
কমব্যাট রেঞ্জ ১ হাজার ২৩৯ কিলোমিটার (৭৭০ মাইল) ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (৯৯০ মাইল)
ক্লাইম্ব রেট প্রতি সেকেন্ডে ২৩০ মিটার বা প্রতি মিনিটে ৪৫ হাজার ফুট প্রতি সেকেন্ডে ২৮০ মিটার বা প্রতি মিনিটে ৫৫ হাজার ফুট
উচ্চতা ১৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার (৫০ হাজার ফুট) ১৮ কিলোমিটার (৫৯,০০০ ফুট)
ক্যানন ১ X ২৫ মিলিমিটার ১ X ৩০ মিলিমিটার

আগেই বলা হয়েছে, এমন শক্তিশালী ২ প্রতিপক্ষের সামর্থ্যের তুলনা বেশ কঠিন বিষয়। তবে উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলোতে বেশ কয়েকটিতেই এগিয়ে আছে রুশ জঙ্গি বিমান।

এসইউ-৩৫ তুলনামূলক দ্রুতগতিসম্পন্ন, দীর্ঘ পরিসরের এবং এতে রয়েছে ২টি শক্তিশালী ইঞ্জিন। তবে কি এতেই যুদ্ধের যবনিকা টানা যাবে? কোনভাবেই না।

এটা অনেকটা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সঙ্গে আইফোনের তুলনা করার মতো। অ্যান্ড্রয়েডের শক্তির জায়গা হলো এর হার্ডওয়ার ও ওপেন অপারেটিং সিস্টেম। অপরদিকে, আইফোনের শক্তির জায়গা এর প্রযুক্তি ও নিরাপদ সফটওয়ার।

শত্রুর চোখ ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা

এফ-৩৫-এর স্টেলথ (অদৃশ্য থেকে শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারি) সক্ষমতা এর অনেক বড় সুবিধার একটি দিক। এর ফলে আকাশযুদ্ধের পুরো লড়াইটাই ঘুরে যেতে পারে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রাডারের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়। তাই এটি এসইউ-৩৫-এর চোখে ধোঁকা দিতে সক্ষম। মূলত এ কারণেই এফ-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের বিশেষায়িত জঙ্গিবিমান।

যেহেতু এসইউ-৩৫-এর রাডার এফ-৩৫-কে শনাক্ত করতে অক্ষম (যদিও অল্প কিছু ক্ষেত্রে সক্ষম হতে পারে), তাই এসইউ-৩৫ খুব সহজেই এফ-৩৫ এর টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

যাই হোক, রাশিয়া তাদের রাডারে সাম্প্রতিক যেসব পরিবর্তন এনেছে, তাতে এই সমস্যার 'সম্ভবত' সমাধান হতে চলেছে। রাশিয়া এখন 'অদৃশ্য' থেকে শত্রুর ওপরে নজর রাখার ব্যবস্থা তৈরি করছে।

যেহেতু এসইউ-৩৫ স্টেলথ বিমান নয়, তাই এফ-৩৫ এর পক্ষে একে আক্রমণ করা সম্ভব। কিন্তু, এসইউ-৩৫ কি এর নিজস্ব রাডার ব্যবহার করে এফ-৩৫ কে শনাক্ত করতে সক্ষম?

এক কথায়, হ্যাঁ। বর্তমানে রাশিয়া তাদের ইরবিস-ই রাডার প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে সাম্প্রতিক ও আধুনিক সংস্করণ ব্যবহার করছে। উচ্চমানসম্পন্ন এই রাডার ৯০ কিলোমিটার দূরের বস্তুকে শনাক্ত করতে সক্ষম। এর সঙ্গে থাকা আরেকটি রাডার ০.০১ বর্গ কিলোমিটারের মতো ক্ষুদ্র আয়তনের সমতল এলাকার অবস্থা প্রতিফলিত করতে সক্ষম, যা পাখির চোখে মাটি দেখার মতো।

এর মানে দাঁড়ায়, এফ-৩৫ এর নাগাল পেতে সক্ষম এসইউ-৩৫। কেন না, স্টেলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন এফ-৩৫'র এমন রাডার আছে, যা ০ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটারের চেয়ে ক্ষুদ্র আয়তনের কোনো এলাকার ছবি তুলে ধরতে সক্ষম। সর্বনিম্ন কত পর্যন্ত এটি যেতে পারে, তা নিশ্চিত জানা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটুকু বলা যায় যে, এফ-৩৫ কে শনাক্ত করতে এসইউ-৩৫ সক্ষম হবে।

তবে এখানেই শেষ নয়। শত্রুর কাছে অদৃশ্য থাকার প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধবিমানের জন্য নয়, ক্ষেপণাস্ত্রেও ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫'র অধীনে আছে এজিএম- ১৫৮সি এলআরএএসএম অ্যান্টিশিপ ক্ষেপণাস্ত্র যা সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর বিশেষত্ব হলো এখানে স্টেলথ প্রযুক্তির ব্যবহার ও স্বাধীন কার্যপদ্ধতি আছে, যা একে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত করতে উপযোগী।

এর ফলে এটি হয়েছে প্রচণ্ড বিপদজনক ও একে শনাক্ত করাও সম্ভবর নয়। শত্রুপক্ষের সক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চোখে ধুলো দেওয়ার পাশাপাশি, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শুধুমাত্র অনবোর্ড সিস্টেম ব্যবহার করেই লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে পারে।

রণকৌশল ও গতি

যদিও এফ-৩৫ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রে স্টেলথ প্রযুক্তি শত্রুর চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম, তবে এসইউ-৩৫ হামলার উত্তর দেওয়ার সময়ও সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত সময়ই বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট৷ কারণ, এর আছে সাবলীলভাবে দ্রুতগতিতে দিক পাল্টানোর ক্ষমতা।

এফ-৩৫ প্রযুক্তিগত দিক থেকে এসএউ-৩৫ থেকে কিছুটা এগিয়ে। এফ-৩৫ উন্নত শনাক্তকৌশল ও প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে। তবে সাবলীল চলাচল ও গতিশীলতায় এটি পিছিয়ে। জঙ্গিবিমান সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন, রাশিয়ার এই ফাইটার জেটের সাবলীল চলাচল ও গতিশীলতার সঙ্গে অন্য কোনো জঙ্গিবিমানের তুলনা নেই৷ এর পেছনের কারণ রাশিয়ার সংস্কৃতি ও জাতিগত মানসিকতায়।

রাশিয়ার এসইউ-৩৫-এর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ বেশি গতিশীল বা সাবলীল নয়। রুশ জঙ্গিবিমানের মতো সাবলীল ও গতিশীলভাবে উড়তে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবিমানের গঠন পাল্টাতে হবে। যদিও এটি আধুনিক প্রযুক্তির অনন্য উদাহরণ।

২টি জঙ্গি বিমানের লড়াইয়ে কে এগিয়ে থাকবে?

১. দূরত্ব কম হলে এফ-৩৫ ও এসইউ-৩৫-এর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে রুশ জঙ্গি বিমান জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে এর গতিশীলতা ও দুর্দান্ত সাবলীলতার কারণে।

২. কিন্তু যদি যুদ্ধটি বেশ দূরত্ব রেখে শুরু হয়, সেক্ষেত্রে এফ-৩৫ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে এর স্টেলথ ক্ষেপণাস্ত্র ও তুলনামূলক ভালো রাডার ব্যবস্থার কারণে।

৩. যুদ্ধ এই মুহূর্তে হলে এফ-৩৫-এর চেয়ে এসইউ-৩৫ বাড়তি সুবিধা পাবে।

৪. এই যুদ্ধ ভবিষ্যতে হলে এসইউ-৩৫-এর চেয়ে এফ-৩৫ ভালো করবে। আপগ্রেডের কারণে শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য এতে যোগ হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

1d ago