শেষ বিকেলে আলো ছড়িয়ে ভারতকে থামালেন সাকিব-তাইজুল

তাইজুল ইসলামের নৈপুণ্যে দিনের শুরুটা হয় দারুণ। আর শেষ দিকে জ্বলে ওঠেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাতে ভারতকে বড় লিড নেওয়া থেকে আটকে রাখতে পারে বাংলাদেশ। তবে গল্পটা হতে পারতো ভিন্নও। মাঝে টাইগারদের একের পর এক মিসে দেড়শ ছাড়ানো জুটিতে ভারতকে লিড এনে দেন রিশাভ পান্ত ও শ্রেয়াস আইয়ার।

শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে এসে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রানে অলআউট হয়েছে ভারত। এর আগে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে করে ২২৭ রান। ফলে ৮৭ রানের লিড পায় সফরকারীরা। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে ৭ রান তুলে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ৫ ও জাকির হোসেন ২ রানে ব্যাট করছেন।

তবে শ্রেয়াস ও পান্ত যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে মনে হয়েছিল বিশাল বড় লিডেই চাপা পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে জুটি ভেঙ্গেই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে টাইগাররা। শেষ বিকেলে জ্বলে ওঠেন সাকিব, মিরাজ, তাইজুলরা। ৬১ রানের ব্যবধানে ভারতের শেষ ছয়টি উইকেট তুলে নেন তারা। তাতে তিনশর কাছাকাছি রানেই আটকানো গিয়েছে ভারতকে।

মূলত পান্ত ও শ্রেয়াসের ১৫৯ রানের জুটিই সব বদলে দেয়। অথচ এ জুটি দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ভাঙতে পারতো। দুই ব্যাটারকেই দুটি করে জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। লাঞ্চের ঠিক আগে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে। লাফিয়ে বল হাতে লাগালেও ধরতে পারেননি লিটন। পান্ত তখন ব্যাট করছিলেন ১১ রানে। এরপর ব্যক্তিগত ৫৯ রানে ফের সুযোগ দিয়েছিলেন। লংঅন বাউন্ডারিতে হাত লাগিয়েও ভারসাম্য রাখতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। উল্টো হয়ে যায় ছক্কা।

শ্রেয়াস জীবন পান ব্যক্তিগত ১৯ ও ২১ রানে। তাসকিনের করা অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ লাফিয়ে হাত লাগালেও বল জমাতে পারেননি। এরপর সহজ জীবন দেন কিপার সোহান। সাকিবের বলে ক্রিজ ছেড়ে বের বলে বল ধরতে না পেরে সহজ স্টাম্পিং মিস করেন তিনি।

ফিল্ডারদের এমন ব্যর্থতায় ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন পান্ত। একের পর এক বড় শটে এলোমেলো করে দিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলিং। শ্রেয়াসও জমে থাকেননি, দ্রুত রান আসতে থাকে তার ব্যাটেও। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এ এই দুই ব্যাটার। হাফসেঞ্চুরি তুলে দুই ব্যাটারই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে।

পান্তকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মিরাজ। অফস্টাম্পের বাইরে রাখা গুড লেংথের বলে পেছনে পায়ে ভর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন এ ব্যাটার। তবে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক সোহানের হাতে। ১০৪ বলে ৯৩ রান করেন পান্ত। ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। আর এ জুটি ভেঙে দারুণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে টাইগার বোলাররা।

এরপর আকসার প্যাটেলকে বাউন্ডারি লাইনে শান্তর ক্যাচে পরিণত করার পর আরেক সেট ব্যাটার শ্রেয়াসকেও ফেরান সাকিব। তাকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। তার নিচু হওয়া বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন শ্রেয়াস। লাইন মিস করলে বল লাগে প্যাডে। রিভিউ নিয়েছিলেন শ্রেয়াস, তবে লাভ হয়নি। ১০৫ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে।  

এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিন, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজদের ছোট ছোট অবদানে একশর কাছাকাছি লিড পেয়েই থামে ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে ৭৪ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন তাইজুল। সাকিবও পাব চার উইকেট, তবে খরচ করেন ৭৯ রান। এছাড়া একটি করে শিকার মিরাজ ও তাসকিনের।

সকালে এদিনের ষষ্ঠ ওভারের (ইনিংসের ১৪তম ওভারে) প্রথম বলেই ভারতের ওপেনিং জুটি ভাঙেন তাইজুল। তার বলে বেরিয়ে এসে রক্ষণাত্মক ঢঙেই খেলতে চেয়েছিলেন রাহুল। ব্যাটের আগে প্যাডে লাগলেও জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায় লেগ-মিডল স্টাম্পে আঘাত করতো বল।

পরের ওভারে ফিরে আরেক ওপেনার শুভমান গিলকেও এলবিডাব্লিউর ফাঁদে এ বাঁহাতি পেসার। সুইপ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বলে-ব্যাটে হয়নি। এবার কোনো দ্বিধা ছাড়াই আঙুল তোলেন আম্পায়ার।

এরপর চেতশ্বর পুজারাকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন বিরাট কোহলি। ৩৪ রানের জুটিও গড়েছিলেন। এ জুটিও ভাঙেন তাইজুল। অবশ্য তাতে দারুণ অবদান রয়েছে সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের। লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন পুজারা। শর্ট লেগে থাকা মুমিনুল দ্রুততার সঙ্গে সে ক্যাচ লুফে নেন। সফট সিগন্যাল আউট দেন মাঠের আম্পায়ার। জুম করে দেখে তৃতীয় আম্পায়ারও একই মত দিলে মাঠ ছাড়তেই হয় পুজারাকে।

খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোহলিও। লাঞ্চের পর বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই তাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। তার লেংথ বল হালকা বেরিয়ে যাওয়ার মুখে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ধরা পড়েন কোহলি।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

3h ago