উত্তরের ৫ জেলায় এবার ৫২,৫৫২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ

গত মৌসুমে দাম ভালো পাওয়ায় এবার ১৩,২৬২ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
ছবিটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত মৌসুমে দাম ভালো পাওয়ায় এবং চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে গত মৌসুমে ৩৯ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে এই ৫ জেলায় ৫২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক।

তাদের মতে, গত বছর আশানুরূপ দাম পাওয়ায় এবং কৃষি বিভাগ সরিষা চাষে প্রণোদনা দেওয়ায় কৃষক সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর রংপুর অঞ্চলে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ মেট্রিক টন।

ছবিটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত বছর ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক। বিঘা প্রতি তার খরচ হয়েছিল ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। ফলন পেয়েছিলেন ১৭ মণ। প্রতি মণ সরিষা ৩ হাজার দরে ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর সরিষা চাষে আশানুরূপ লাভ হওয়ায় এবার ৭ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছি। আশা করছি এবারও ভালো ফলন ও ভালো দাম পাব।'

মালেক জানান, আগে অনেক কৃষক সরিষা চাষ করতেন। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তারা চাষ কমিয়ে দিয়েছিলেন।

'বাজারদর ৩ হাজার টাকার বেশি থাকলে কৃষকরা সরিষা চাষে আরও বেশি উৎসাহী হবেন,' বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গেল বছর ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়েছে। গেল বছর সরিষার ফলন ভালো ছিল, দামও ভালো পেয়েছি।'

এবার প্রতিবিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

নরেশ আরও বলেন, 'গত বছর সরিষার পরে বোরো লাগানোর কারণে ধানের ফলনও ভালো হয়েছিল।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ী এলাকার কৃষক মনিন্দ্র নাথ বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাম পাওয়া যায় না বলে সরিষা চাষ ছেড়ে দিয়েছিলাম। গত বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম, দাম ভালো পেয়েছি। তাই এবার ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছি।'

'সরিষার বাজারদর এ রকম থাকলে আমরা আবারও সরিষা চাষে ফিরবো,' বলেন তিনি।

লালমনিরহাট শহরে সরিষা বিক্রেতা আলমগীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, গত বছর সরিষার ব্যাপক চাহিদা ছিল। আমরা প্রতিমণ সরিষা ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনেছিলাম। এ বছরও সরিষার চাহিদা আছে।

'আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরিষা কিনে বিভিন্ন স্থানে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি,' বলেন আলমগীর।

কুড়িগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকদের সরিষা চাষে ফিরিয়ে আনতে এ বছর তাদের বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। গেল বছর সরিষার আশানুরূপ ফলন ও দাম পাওয়ায় কৃষকরা উৎসাহী হয়েছেন। সরিষা চাষ কৃষির জন্য শুভ বার্তা। যারা সরিষা চাষ করছেন আমরা তাদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।'

'সরিষা চাষ একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা বাড়ায়, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরিষা ৩ মাস মেয়াদি ফসল। কৃষক কম খরচ ও কম পরিশ্রমে সরিষা চাষ করতে পারেন। বর্তমানে সরিষা চাষ কৃষকের কাছে লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে,' বলেন লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English

Trump, Musk feud explodes with threats of cutting contracts, backing impeachment

The hostilities began when Trump criticized Tesla CEO Musk in the Oval Office.

2h ago