গোল উৎসবের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রোনালদোদের হারালেন মেসিরা

দুই মহাতারকার লড়াই। একদিকে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, অন্যদিকে পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশার কমতি ছিল না। পূরণ হলো চাওয়া। গোটা ম্যাচে আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণের ফুলঝুরি ছোটাল দুই দল। সব মিলিয়ে গোল এলো নয়টি। পিএসজির মেসি ও রিয়াদ অল-স্টারের রোনালদো উভয়েই করলেন লক্ষ্যভেদ। আর তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে জয়ের হাসি হাসল ফরাসি ক্লাবটি।
ছবি: এএফপি

দুই মহাতারকার লড়াই। একদিকে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, অন্যদিকে পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশার কমতি ছিল না। পূরণ হলো চাওয়া। গোটা ম্যাচে আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণের ফুলঝুরি ছোটাল দুই দল। সব মিলিয়ে গোল এলো নয়টি। পিএসজির মেসি ও রিয়াদ অল-স্টারের রোনালদো উভয়েই করলেন লক্ষ্যভেদ। আর তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে জয়ের হাসি হাসল ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।

বৃহস্পতিবার রাতে রিয়াদের কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে সৌদি আরবের প্রো লিগের ফুটবলারদের নিয়ে গড়া অল-স্টার একাদশের বিপক্ষে ৫-৪ ব্যবধানে জিতেছে পিএসজি।

প্যারিসিয়ানদের পক্ষে একবার করে নিশানা ভেদ করেন মেসি, মার্কুইনহোস, সার্জিও রামোস, কিলিয়ান এমবাপে ও হুগো একিতিকে। স্বাগতিকদের হয়ে জোড়া গোল করেন রোনালদো। তাদের বাকি গোলদাতারা হলেন হিউন সু-ইয়াং ও অ্যান্দারসন তালিস্কা। গোলদাতাদের তালিকায় নাম থাকতে পারত নেইমারের। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। এছাড়া, বার্নাত লাল কার্ড দেখায় ম্যাচের বেশিরভাগ সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয় লিগ ওয়ানের শিরোপাধারীদের।

গোল আসতে সময় লাগেনি ম্যাচে। তৃতীয় মিনিটেই জাল খুঁজে নিয়ে পিএসজিকে এগিয়ে দেন মেসি। ফাঁকায় থাকা নেইমার সময় নিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের উপর দিয়ে খুঁজে নেন তাকে। বল আটকাতে পোস্ট ছেড়ে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইস। কিন্ত নাগাল পাননি। আগে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া মেসি তার মাথার উপর দিয়ে ফাঁকা জালে বল পাঠান।

পিছিয়ে পড়ে দমে না গিয়ে মরিয়া হয়ে ওঠে অল-স্টার। ষষ্ঠ মিনিটে লুইজ গুস্তাভো পাস দেন সামনে। রামোসকে পেছনে ফেলে বল পেয়ে দূর থেকে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করেন রোনালদো। তার শট সোজাসুজি থাকায় ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস। সাত মিনিট পর আবার রোনালদোকে হতাশ করেন পিএসজি গোলরক্ষক। তার ফ্রি-কিক প্রতিহত হওয়ার পর ফের বল পেয়ে জোরালো শট নেন। নাভাস লুফে নিতে না পারলেও বিপদমুক্ত করেন।

চাপ সামলে ১৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ আসে প্যারিসিয়ানদের। ডানপ্রান্ত থেকে দূরের পোস্টে ক্রস করেন আশরাফ হাকিমি। কিন্তু প্রথমবারেই শট নেওয়ার বদলে নেইমার বল নামিয়ে জালে পাঠানোর চেষ্টা করেন। নিচু হয়ে সেটা নস্যাৎ করে দেন আল ওয়াইস। দুই মিনিট পর নেইমারকে আবার আক্ষেপে পুড়তে হয়। ফাবিয়ানের পাসে এমবাপে ভলি করেন গোলমুখে। কিন্তু শরীর প্রসারিত করেও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি নেইমার।

২৫তম মিনিটে মেসির দুর্দান্ত পাস আয়ত্বে নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। কিন্তু অফসাইডের কারণে মেলেনি গোল। নয় মিনিট পর সফল স্পট-কিকে দলকে প্রথমবার সমতায় ফেরান রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা নিজেই আদায় করে নেন পেনাল্টি। সতীর্থের ফ্রি-কিকে হেড করার জন্য ডি-বক্সে লাফিয়ে ওঠেন রোনালদো। এগিয়ে এসে বল ঠেকাতে গিয়ে তার মুখে আঘাত করেন পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দেরি করেননি রেফারি।

পাঁচ মিনিট পর ১০ জনের দলে পরিণত হয় পিএসজি। মাঝমাঠের কাছে অল-স্টারের সালেম আল দাওসারিকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন বার্নাত। তবে ধাক্কা সামলে ৪২তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় পার্ক দে প্রিন্সেসের ক্লাবটি। বাঁ দিক থেকে এমবাপে গোলমুখে ফেলেন ক্রস। অসাধারণ ফ্লিকে গোলরক্ষককে বোকা বানান মার্কুইনহোস।

কিছুক্ষণ বাদে নেইমার আদায় করে নেন পেনাল্টি। অল-স্টারের ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হওয়ার পর ভিএআরের সাহায্যে পাওয়া স্পট-কিকে রীতিমতো হতাশ করেন তিনি। দুর্বল শট অনায়াসে প্রতিহত করেন আল ওয়াইস। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলে স্কোরলাইন ২-২ করেন রোনালদো। ডি-বক্সে তার হেড দূরের পোস্টে লেগে ফেরার পর বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হয় ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। সুযোগ লুফে নেন রোনালদো। ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

ঘুরে দাঁড়ানো স্বাগতিকরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেতে পারত লিডও। সতীর্থের কর্নারে গোলপোস্টের খুব কাছ থেকে গঞ্জালো মার্তিনেজের হেড দারুণভাবে আটকান নাভাস। ৫৩তম মিনিটে উল্টো ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় পিএসজি। পায়ের কারুকাজে প্রতিপক্ষের একজনকে এড়িয়ে বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে ছয় গজ বক্সে বল বাড়ান এমবাপে। ডান পা এগিয়ে তা জালে পাঠান রামোস।

সেই স্কোরলাইন টেকেনি বেশিক্ষণ। সতীর্থের কর্নারে হেড করে নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে তিন মিনিট পর আবারও লড়াইয়ে ভারসাম্য আনেন সু-ইয়াং। তবে তিন মিনিট পর ফের প্যারিসিয়ানরা উল্লাস করে গোলের। সফল স্পট-কিকে তাদেরকে আরেক দফা লিড এনে দেন এমবাপে। মেসির শট ডি-বক্সে আলি আল বুলায়হির হাতে লাগলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।

ম্যাচের ৬১তম মিনিটে রোনালদোকে তুলে নেন অল-স্টার কোচ। প্রীতি ম্যাচ হওয়ায় পিএসজি কোচও কিছুক্ষণের ব্যবধানে বদলি করেন মেসি, নেইমার, এমবাপে, রামোসদের। তাতে উত্তেজনা কমে গেলেও গোলের অভাব হয়নি। ৭৮তম মিনিটে স্কোরলাইন ৫-৩ করেন এমবাপের বদলি নামা একিতিকে। মাঝমাঠের কাছে সতীর্থের রক্ষণচেরা পাসে বল পেয়ে যান তিনি। এরপর অনেকটা দৌড়ে ডি-বক্সে ঢুকে জাল কাঁপান। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দূর থেকে নেওয়া শটে ব্যবধান কমান তালিস্কা।

শেষবার মেসি ও রোনালদোর দেখা হয়েছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে। মেসির বার্সেলোনার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচে জুভেন্তাসের হয়ে জোড়া লক্ষ্যভেদ করেছিলেন রোনালদো। এবারও ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো জোড়া গোল করলেন। তবে জয়ের হাসি হাসলেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি।

Comments