ইন্টারনেট সংযোগের গতি বাড়াবেন যেভাবে

ব্রাউজিংয়ের সময় ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়ার মতো বিরক্তিকর ব্যাপার খুব কমই আছে। বিশেষ করে সেটি যদি হয় বেশি টাকা দিয়ে নেওয়া ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে।

ইন্টারনেট গ্রাহকদের বড় একটি অংশই এখন ওয়াইফাই ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে তারবিহীন সংযোগের পরিবর্তে সরাসরি তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালালে গতি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরও কাঙ্ক্ষিত গতি না পেলে আরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হতে পারেন।

যেকোনো ইন্টারনেট সংযোগে সর্বোচ্চ গতি নির্দিষ্ট করা থাকে। কিন্তু আপনার সংযোগটি থেকে এর সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনার কিছু উপায় আছে।

দেখে নেওয়া যাক, ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়ার কিছু কারণ এবং এর গতি বাড়াতে যা যা করতে পারেন সে সম্পর্কে।

আপনার ইন্টারনেট ধীর কেন?

একটি ইন্টারনেট সংযোগের পারফরম্যান্স বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

• আপনার ইন্টারনেটের পারফরম্যান্স, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) উপরই প্রধানত নির্ভরশীল। তাই আইএসপি নির্বাচনের বিষয়টি এক্ষেত্রে মুখ্য। অনেকসময় সংযোগের গতির ক্ষেত্রেও তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে যে গতির কথা বলে আর বাস্তবে যা দেয় তার মধ্যে ফারাক থাকতে পারে।

• বর্তমানে ফাইবার-অপটিক লাইন এবং স্যাটেলাইট ব্যবহার করেও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়। প্রতিটি প্রযুক্তিরই নিজস্ব কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তাই কখনও কখনও সরবরাহকারী পরিবর্তন না করে সংযোগের প্রযুক্তি পরিবর্তন করেও পারফরমেন্স বৃদ্ধি করা সম্ভব।

• আপনি কোথায় বাস করেন, তার উপরও ইন্টারনেট গতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ইন্টারনেট সরবরাহকারী নির্বাচন এবং প্রযুক্তির প্রাপ্যতা উভয়ই আপনার অবস্থানের উপর নির্ভর করতে পারে। এক্ষেত্রে ডেটা কত দূরত্বে ভ্রমণ করবে তাও সম্পর্কিত।

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করবেন যেভাবে

স্পিডটেস্ট, ফাস্ট ডট কম-এর মতো ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে সহজেই ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করা যায়। এর মাধ্যমে আপনি গতি এবং ল্যাটেন্সি বা বিলম্ব দুটোই পরীক্ষা করতে পারবেন।

ডাউনলোডের গতি দ্বারা বোঝা যায়, প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ ডেটা ডাউনলোড করা যাবে। এটি স্ট্রিমিং কিংবা বড় কোনো ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সার্ভার থেকে একটি ডাটা প্যাকেটের এর গন্তব্যস্থলে যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ সময় লাগে তা হচ্ছে এর ল্যাটেন্সি। ল্যাটেন্সি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ল্যাটেন্সি যত বেশি হবে, কোনো ওয়েবসাইটের সাড়া পাওয়ার জন্য আপনাকে তত বেশি অপেক্ষা করতে হবে। গেমিংয়ের ক্ষেত্রে ল্যাটেন্সি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কৌশল

যদি ইন্টারনেটের গতি আপনার প্রত্যাশার তুলনায় ধীর হয়ে থাকে তাহলে এর গতি বাড়ানোর জন্য আপনি কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন।

১. আইএসপি পরিবর্তন

যদি আপনার আইএসপির সংযোগ দুর্বল হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে আপনার দিক থেকে আসলে তেমন কিছু করার নেই।

ইন্টারনেটের গতি যদি তাদের বিজ্ঞাপনে দেওয়া গতির চেয়ে কম হয় তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সংযোগ পরিবর্তনের আগে সমস্যাটি তারা ঠিক করতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে আগে ভালো করে জেনে নিন।

এমনও হতে পারে, আপনার ডেটা ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। আর আপনি সেটি অতিক্রম করে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে তারা আপনার গতি কমে যেতে পারে। এমনটা হলে আরও ডেটা কেনার মাধ্যমে তা ঠিক করে নিতে পারেন।

অন্যথায়, আইএসপি পরিবর্তন করতে পারেন। আপনার এলাকায় আরও সংযোগদাতা থাকতে পারে।

২. স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বিবেচনা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট তার ধীর গতির জন্যে বেশ কুখ্যাত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশে স্টারলিঙ্কের আবির্ভাবের সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয়েছে।

যদিও পরিষেবাটি সম্পূর্ণ হতে এখনও বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে বেটা ব্যবহারকারীরা বলছেন যে, এটি চমৎকার গতি এবং ল্যাটেন্সি প্রদান করছে। তবে আপনি যদি সীমিত ইন্টারনেট সুবিধার কোনো একটি এলাকায় বাস করে থাকেন। তাহলে এটিই হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে দ্রুত গতির সংযোগ।

আপনি যদি স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নিতে চান। তাহলে সেখানে আপনার প্রাথমিক যন্ত্রপাতি কিনতে খরচ পড়বে ৪৯৯ মার্কিন ডলার। পরবর্তীতে প্রতি মাসে ৯৯ ডলারের বিনিময়ে চালু করতে পারেন আনলিমিটেড ডেটার প্যাকেজ। যদিও বাংলাদেশে স্টারলিঙ্ক সেবা এখনও চালু হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে শিগগির এটি বাংলাদেশেও চালু হবে।

৩. কোন কোন প্রোগ্রামগুলো চলছে সেগুলো পরীক্ষা করা

আপনার ইন্টারনেটের গতি যদি আপনার প্রত্যাশার তুলনায় ধীর হয়। তাহলে এমন হতে পারে যে, আপনার অজান্তেই কোনো প্রোগ্রাম হয়তো এটি ব্যবহার করছে।

• আপনার কম্পিউটারে কোন কোন প্রোগ্রাম চলছে সেটি পরীক্ষা করুন। প্রয়োজন নেই এমন প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করে দিন।

• স্বয়ংক্রিয় আপডেট বন্ধ করে রাখুন। পরিবর্তে নিজেই ম্যানুয়ালি আপডেটগুলি প্রয়োজন অনুসারে ডাউনলোড করুন৷

• অ্যান্টিভাইরাসের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার দূর করুন।

• আপনার অন্যান্য ডিভাইসগুলো কি করছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। অন্যান্য কম্পিউটার, ফোন, এমনকি স্মার্ট ডিভাইসগুলো সবই আপনার ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে ইন্টারনেট ধীর করতে পারে।

৪. রাউটার পরিবর্তন

রাউটারের মানের উপরও ইন্টারনেটের গতি নির্ভর করতে পারে। তাই আপনার বিদ্যমান রাউটারের মান কেমন তার উপর নির্ভর করে, সেটি প্রয়োজনে পরিবর্তনের মাধ্যমেও গতি বৃদ্ধি করতে পারেন।

একটি সস্তা মানের রাউটার ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দিতে পারে। কারণ রাউটারটির মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ ডেটা যাচ্ছে সেটা পরিচালনা ও প্রক্রিয়ার জন্য তাতে যথেষ্ট শক্তি নাও থাকতে পারে।

তবে আপনাকে যে দামী রাউটারই কিনতে হবে বিষয়টি এমন নয়। শুধু একটি দ্রুত প্রসেসরযুক্ত এবং কমপক্ষে ২৫৬ মেগাবাইট র‌্যামসহ একটি রাউটার হলেই যথেষ্ট।

৫. রাউটার অপ্টিমাইজেশন

আপনি যে ধরণের রাউটারই ব্যবহার করেন না কেনো রাউটার নিয়মিত রিবুট করা বেশ প্রয়োজনীয়। নিয়মিত রিবুট, ক্যাশ মেমোরি মুছে ফেললে গতি বাড়তে পারে। কিছু কিছু রাউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিদিন একবার রিবুটের জন্য সেটআপ করে রাখা যায়।

সব রাউটারেই কিছু সফ্টওয়্যার এবং ফার্মওয়্যার ইনস্টল করা থাকে। এগুলো আপডেটেড রাখা উচিত।

৬. ইথারনেট ক্যাবল বদলান

বাসা-বাড়িতে এক রুম থেকে অন্য রুমে বিভিন্ন বাধা থাকার কারণে ওয়াইফাই সংকেত দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি সবচেয়ে দ্রুত গতি চান তাহলে আপনাকে ওয়াইফাই এড়িয়ে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে, একটি ইথারনেট ক্যাবলের মাধ্যমে রাউটারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করতে পারেন।

তবে কিছু কিছু ইথারনেট ক্যাবলও আপনার ইন্টারনেটের গতিকে ধীর করে দিতে পারে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইথারনেট ক্যাবল আছে। যেগুলো কিছু সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত থাকে। সেখানে উচ্চ সংখ্যা উচ্চ গতিকে নির্দেশ করে। আপনার এমন একটি ক্যাবল ব্যবহার করা উচিত যেটি কমপক্ষে ক্যাট৫ই (Cat5e) রেটেড। এগুলি ১ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি দিতে সক্ষম।

৭. ডিএনএস সেটিংস পরিবর্তন করুন

ডিএনএস-এর পূর্ণরূপ ডোমেইন নেম সিস্টেম। ডিএনএস সার্ভার আপনার ব্রাউজার থেকে একটি ডোমেন নাম নেয় এবং তারপর সেটিকে অনুরোধকৃত ওয়েবসাইটটির আইপি অ্যাড্রেসে রূপান্তর করে।

ডিএনএস সেটিংস পরিবর্তন ডাউনলোড গতির উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু একটি ভিন্ন ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করলে ল্যাটেন্সি উন্নত হতে পারে। কারণ কিছু কিছু ডিএনএস সার্ভার, বিশেষ করে যেগুলো জনপ্রিয় আইএসপিগুলো দেয় সেগুলো ওভারলোড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পরিশেষে

দিনশেষে সঠিক আইএসপি নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এটা মনে রাখা জরুরি, আপনার ইন্টারনেটের গতি যদি আইএসপির কারণে ধীর হয়ে থাকে তাহলে সংযোগ বদল ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। আর যেসব পরামর্শের কথা বলা হলো মানসম্মত আইএসপি ছাড়া সেগুলো অকার্যকর।

দ্রুত ইন্টারনেটের জন্য ফাইবার-অপটিক লাইন ব্যবহার করা হয়। আর আগামীতে যেহেতু স্টারলিঙ্ক আসার সম্ভাবনা আছে তাই একটি স্যাটেলাইট সংযোগের কথাও তখন বিবেচনা করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অফ

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

7h ago