নিজেদের মাঠে পাত্তা পেল না মাশরাফির সিলেট

বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে নিজেদের ভেন্যুতে প্রথমবার খেলতে নেমেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু ব্যাটিংয়ে রীতিমতো ধরাশায়ী হলো তারা। রংপুর রাইডার্সের আজমতুল্লাহ ওমরজাই, হাসান মাহমুদ, শেখ মেহেদী হাসানরা গুঁড়িয়ে দেন তাদেরকে। দুই অঙ্কের মামুলি পুঁজি নিয়ে পরে বোলিংয়ে লড়াই জমাতে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে নিজেদের ভেন্যুতে প্রথমবার খেলতে নেমেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু ব্যাটিংয়ে রীতিমতো ধরাশায়ী হলো তারা। রংপুর রাইডার্সের আজমতুল্লাহ ওমরজাই, হাসান মাহমুদ, শেখ মেহেদী হাসানরা গুঁড়িয়ে দেন তাদেরকে। দুই অঙ্কের মামুলি পুঁজি নিয়ে পরে বোলিংয়ে লড়াই জমাতে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।

শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রংপুরের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে সিলেট। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে মাত্র ৯২ করতে পারে স্বাগতিকরা। জবাবে ২৬ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ৯৩ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে নুরুল হাসান সোহানের দল।

আট ম্যাচে সিলেটের এটি দ্বিতীয় হার। তবে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আসরের পয়েন্ট তালিকার এক নম্বর স্থানটা ধরে রেখেছে তারা। সাত ম্যাচে রংপুরের এটি চতুর্থ জয়। ৮ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে চার নম্বরে।

উইকেট একেবারে ব্যাটিংবান্ধব ছিল না। বল কিছুটা থেমে আসছিল। কয়েকবার অনিয়মিত বাউন্সও দেখা গেছে। তবে সিলেটের ব্যাটাররা যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছে, সেরকমও কঠিনও ছিল না উইকেট। প্রয়োজন ছিল কিছুটা সময় নিয়ে থিতু হয়ে এগোনোর।

দ্বিতীয় ওভার থেকেই শুরু হয়ে যায় সিলেটের দুর্দশার। আফগানিস্তানের পেসার ওমরজাইয়ের সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে পরাস্ত হন ইংল্যান্ডের টম মুরস। তার ব্যাটের নিচের দিকে লেগে বল পৌঁছায় উইকেটরক্ষক সোহানের গ্লাভসে।

নাজমুল হোসেন শান্তকে সাজঘরে পাঠান অফ স্পিনার শেখ মেহেদী। মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে ফের বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু পুরো জোর দেননি। লং-অফে সীমানার সামান্য ভেতর থেকে ঠাণ্ডা মাথায় ক্যাচ লুফে নেন শোয়েব মালিক।

শূন্য, শূন্য ও শূন্য। পরের তিন ব্যাটারের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। ফলে ১ উইকেটে ১২ রান থেকে মুহূর্তেই ৫ উইকেটে ১২ রানের দলে পরিণত হয় সিলেট। এই মহাবিপাক থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি তাদের।

টানা দুই বলে তৌহিদ হৃদয় ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে আউট করেন ওমরজাই। ফুল টস ডেলিভারিতে হৃদয় কাটা পড়েন এলবিডব্লিউতে। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলে স্টাম্প উড়ে যায় মুশফিকের। গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় তাকে। মিরপুর শের বাংলা স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে সিলেটের সবশেষ ম্যাচেও শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি।

শেখ মেহেদীও পরের ওভারে ধরতে পারতেন জোড়া শিকার। তৃতীয় বলে জাকির হাসান হন স্টাম্পড। পঞ্চম বলে স্লিপে থিসারা পেরেরার ক্যাচ ফেলে দেন নাঈম শেখ। তখন শূন্য রানে ছিলেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার।

থিসারার পাশাপাশি সিলেট তাকিয়ে ছিল পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমের দিকে। কিন্তু দুই বিদেশি দলকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে বিদায় নেন। অষ্টম ওভারে বল হাতে পেয়েই পাকিস্তানের পেসার হারিস রউফ তুলে নেন থিসারাকে। থার্ড ম্যানে অনায়াস ক্যাচ নেন মালিক। মিড-অফে শেখ মেহেদীর হাতে ধরা পড়েন ইমাদ। তার হন্তারক পেসার মাহমুদ।

নবম ওভারে মাত্র ১৮ রানেই রংপুর তুলে নেয় ৭ উইকেট। সিলেটকে তখন চোখ রাঙাচ্ছিল বিপিএলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের বিব্রতকর রেকর্ড। তবে তানজিম হাসান সাকিব ও অধিনায়ক মাশরাফির ৪৮ রানের জুটিতে সেই শঙ্কা কেটে যায়। কেবল তারা দুজনই পৌঁছান দুই অঙ্কের রানে।

দ্বাদশ ওভারে রউফকে দুই চার মারেন তানজিম। ১৫তম ওভারে পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকান মাশরাফি। আক্রমণে ফিরে জুটি ভাঙেন হাসান। জায়গা করে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে রবিউল হকের তালুবন্দি হন মাশরাফি। ২১ বলে তিনি করেন ২১ রান। ইয়র্কারে বোল্ড হন তানজিম। ৩৬ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তাদের বিদায়ের পর একশ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি সিলেটের।

হাসান ১২ রানে নেন ৩ উইকেট। ওমরজাই সমানসংখ্যক উইকেট পেতে খরচ করেন ১৭ রান। শেখ মেহেদী ২ উইকেট পান ১২ রানে।

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় দেখেশুনে এগোতে থাকে রংপুর। প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ আমিরকে দুই চার মারেন নাঈম শেখ। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার আক্রমণে ফিরলে আরেক ওপেনার রনি তালুকদারও আদায় করে নেন চার।

২৭ রানের জুটির অবসান হয় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। রেজাউর রহমান রাজার গতিতে পরাস্ত হয়ে শর্ট কভারে ইমাদের ক্যাচে পরিণত হয় নাঈম। ২১ বলে ১৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

শেখ মেহেদীকে নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন রনি। কিন্তু সেই চেষ্টা স্থায়ী হয়নি। মাশরাফিকে স্লগ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে থিসারার তালুবন্দি হন শেখ মেহেদী। ঠিক পরের বলে মুরস শর্ট কভারে দারুণ ক্যাচে ফেরান মালিককে। ১ বল খেলে শূন্য রানে বিদায় নেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার।

৪৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেলেও তেমন চাপে পড়েনি রংপুর। কারণ সামনে থাকা সমীকরণ ছিল সহজ। চতুর্থ উইকেটে ওমরজাইয়ের সঙ্গে ২২ ও পঞ্চম উইকেটে নওয়াজের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ২৭ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষ করে দেন রনি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন রনি। ৩৮ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন দুটি করে চার ও ছক্কা। নওয়াজের ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে অপরাজিত ১৮ রান। মাশরাফি ২ উইকেট নেন ১৮ রান দিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Hamas accepts ceasefire proposal of Egypt, Qatar

Hamas on Monday agreed to a ceasefire proposal in the seven-month-old war with Israel in Gaza, hours after the Israeli military told residents to evacuate some parts of Rafah, which has been sheltering more than a million displaced people

8m ago