বেগুনের ফলনে খুশি কৃষক, দামে অখুশি

জামালপুরে চলতি বছর বেগুনের ফলন ভালো হলেও, কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। ছবি: স্টার

জামালপুরে চলতি বছর বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। তবে সার ও কীটনাশকের দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হলেও, বেগুনের দাম আগের বছরের চেয়ে কমেছে। উৎপাদিত বেগুন বিক্রি করে খুশি নন কৃষকরা।

গত বছর প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করলেও, এ বছর কৃষকদের ১৩-১৪ টাকায় প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে। 

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ইসলামপুর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলায় প্রচুর বেগুন চাষ হয়। এ এলাকার মাটি বেগুন চাষের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। 

এ মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৭৮১ একর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলায় বেগুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার মেট্রিক টন হলেও, উৎপাদন এর চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলার হাতিজা গ্রামের কৃষক নাছের আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড বেগুন চাষ করেছি। অনেক ভালো ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে অনেক ভালো দাম পেয়েছি। লাভের আশাও কম ছিল না। এখন দাম কমে যাওয়ায়, তেমন একটা লাভ হবে না মনে হচ্ছে।'

জামালপুরে চলতি বছর বেগুনের ফলন ভালো হলেও, কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। ছবি: স্টার

একই উপজেলার ডিগ্রিরচর গ্রামের বেগুন ব্যবসায়ী করিম শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সপ্তাহে ১২০ টাকা মণ দরে বেগুন কিনেছি। তবে এ সপ্তাহে প্রতি মণের দাম বেড়ে ৫২০ টাকা হয়েছে। মৌসুমের শুরুর দিকে দাম ও চাহিদা বেশি থাকে। তবে লাভও বেশি হয়।'

ইসলামপুর উপজেলার কৃষক মতিন মিয়া বলেন, 'এ বছর প্রথম দিকে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছি। এখন সেটা ১৩-১৪ টাকায় নেমে এসেছে।'

গত সপ্তাহে বেগুনের দাম আরও কমে ৩-৪ টাকা কেজি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

মতিন মিয়া বলেন, 'আমি দুই বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৮০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি। কিন্তু পরে আরও ১ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করে এখনো লাভের মুখ দেখতে পারিনি। যদি দাম বেড়ে ২০-২৫ টাকা কেজি হয় তবে খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হতে পারে।' 

মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগারা গ্রামের কৃষক কুদ্দুস ব্যাপারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু বেগুনের দাম বাড়েনি। প্রথম দিকে যারা বেগুন বিক্রি করেছে, তারা বেশ লাভ পেয়েছে। এখন যারা বিক্রি করছে তাদের লাভ হচ্ছে না।'

একই উপজেলার কৃষক হাতেম আলী বলেন, 'আমার খেতে একটু দেরিতে বেগুন এসেছে। ভালো দাম ধরতে পারিনি। ফলন ভালো হলেও খরচ বেশি হয়েছে। বেগুনে এবার পোকার উৎপাত বেশি। পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে আমার আরও অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়েছে।'

আরেক কৃষক সবুর মিয়া বলেন, 'আমরা কষ্ট করে বেগুন চাষ করি। তবে বেশি লাভ করে পাইকারগণ। তারা আমাদের কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি কিনে ৩০-৪০ টাকা বেচে। সরকার যদি এই ব্যবধানটা কমাতে পারত। তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।'

জানতে চাইলে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ উপজেলার মাটি পলি দো-আঁশ হওয়ায় এখানে বেগুন চাষ বেশি হয়। আমরাও কৃষকদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করি ও বেগুন চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি।'

যোগাযোগ করা হলে জামালপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জামালপুরে বারি-১ জাতের বেগুন বেশি উৎপাদন হয়। সারাদেশে এ বেগুনের অনেক চাহিদা আছে। এছাড়া বোম্বাই বেগুন, লম্বা বেগুন ও বাগলতি বেগুন নামে আরও তিন জাতের বেগুন চাষ হয়।'
 

Comments

The Daily Star  | English
High Court

HC to deliver verdict over quick rental law Nov 14

Sections 9 and 6(2) of the Quick Enhancement of Electricity and Energy Supply (Special Provisions) Act 2010 protect rental and quick rental power plants from legal challenges

37m ago